বিজ্ঞাপন

ভারতের লোকসভা নির্বাচন: সরকার গঠনে ‘দাবার ঘুঁটি’ তারা

June 5, 2024 | 1:45 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতের সাধারণ নির্বাচন তথা লোকসভা নির্বাচনে নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টানা তৃতীয়বারের মতো তার দল বিজেপি জাতীয় এই নির্বাচনে জয় পেয়েছে। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তাদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালয়েন্স (এনডিএ) এরই মধ্যে ২৯৪ আসনে জয় নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণাও দিয়েছেন, এনডিএ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এনডিএ সরকার গঠন করলে ফের ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদি। সেক্ষেত্রে জওহরলাল নেহেরুর পর তিনিই হবেন প্রথম কোনো নেতা যিনি তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। স্বাধীনতার পর প্রথম তিন নির্বাচন বাদ দিলে একই দলের টানা তিন লোকসভা নির্বাচনে জয়ের নজিরও নেই। মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করে এনডিএর সরকার গঠন ও ইতিহাস গড়া এখন সময়ের ব্যাপার।

মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল থেকে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল গণনা শুরু হয়। দুপুর গড়াতে গড়াতেই নিশ্চিত হওয়া যায়, এবার আর বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে পারছে না। মধ্যরাত নাগাদ ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২৩৯ আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি, ৯৬টি আসনে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। এ ছাড়া বিজেপি আরও একটি আসনে এবং কংগ্রেস তিনটি আসনে এগিয়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন- ‘বাঁচা-মরার লড়াই’য়ে টিকে গেল কংগ্রেস?

বিজ্ঞাপন

আসনসংখ্যায় পরের স্থানগুলোতে থাকা দলগুলো হলো— ৩৭ আসন নিয়ে সমাজবাদী পার্টি, ২৯ আসন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, ২০ আসন নিয়ে দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে, আরও দুটি আসনে এগিয়ে)। এ ছাড়া তেলেগু দেশাম পার্টি (টিডিপি) ১৬টি ও জনতা দল (জেডিইউ) ১২টি আসন পেয়েছে। আটটি আসন রয়েছে উদ্ধব ঠাকরের শিব সেনা দলের, সাতটি করে আসন রয়েছে শিব সেনা ও শরদচন্দ্র পাওয়ারেরর ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির।

বিজেপি ও কংগ্রেসের বাইরে বাকি দলগুলোর মধ্যে সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস ও ডিএমকে রয়েছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোটে। অন্যদিকে বিহারের নীতিশ কুমারের জেডিইউ ও অন্ধ্র প্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি রয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে।

লোকসভার আসনসংখ্যার যে চিত্র বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এনডিএ জোটে থাকা জেডিইউ ও টিডিপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দল দুইটির নেতা যথাক্রমে নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইড়ু কোনো কারণে যদি এনডিএ জোট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত হন, তাহলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে এনডিএ জোটও। মোদি সরকার গঠনও পড়বে হুমকির মুখে। আরও দুয়েকটি দল নিয়ে যদি তারা কংগ্রেসের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া মোদি সরকার ভেস্তে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে সরকার গঠনের সুযোগ পেয়ে যাবে কংগ্রেস।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- সরকার গঠনের ঘোষণা মোদির, বললেন বিকশিত ভারতের জয়

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের যখন এই অবস্থা, রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ঠিক এই মূহূর্তে বিহারের ৭৩ বছর বয়সী নীতিশ কুমার আর অন্ধ্র প্রদেশের ৭৪ বছর বয়সী চন্দ্রবাবু নাইড়ু হয়ে উঠেছেন জাতীয় রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। বয়সসহ নানা কারণে প্রায় বাতিলের খাতায় চলে যাওয়া এই দুই নেতাকে এখন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘দাবার ঘুঁটি’ বলা হচ্ছে, বলা হচ্ছে ‘কিংমেকার’।

অথচ মাত্র আট মাস আগেই দুর্নীতির দায়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নাইড়ুকে। তখনই তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ বলে ধরে নেওয়া হচ্ছিণল। আবার সমাজবাদী পার্টির নীতিশকেও অনেকে আর রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছিলেন না তার দলের একক কোনো অবস্থান ধরে না রাখার কারণে। এখন তাদের ওপরই নির্ভর করছে কোন দল সরকার গঠন করতে পারবে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর বলছে, এ পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে নীতিশ ও নাইড়ুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বিজেপির শীর্ষ দুই নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জোটের পক্ষ থেকে সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার বিষয়ে তারা দুজন যোগাযোগ করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তথ্য মিলছে, কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করা হয়েছে নীতিশ-নাইড়ুর সঙ্গে। এনডিএ থেকে বেরিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে কি না, সে বিষয়েই কংগ্রেস কথা বলে থাকতে পারে দুই নেতার সঙ্গে। কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খারগেও তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জোটের নেতাদের বাইরেও অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে, যারা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। তাদের সঙ্গে কোন কৌশলে যুক্ত হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা যায়, সে বিষয়ে আমরা যোগাযোগ করছি। তবে আমাদের কৌশলগুলো এখনই প্রকাশ করব না। সেটি করলে নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সতর্ক হয়ে যাবেন!’

ভোটের হিসাব যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তাতে দুই জোটের কাছেই বিহার ও অন্ধ্র প্রদেশের দুই নেতার কদর যে এখন তুঙ্গে, তা বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন