বিজ্ঞাপন

পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু: দায়ীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ

June 5, 2024 | 6:57 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: যশোরের অভয়নগর উপজেলায় পুলিশ হেফাজতে আফরোজা বেগমের মৃত্যুর ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। পাশাপাশি এ বিষয়ে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৫ জুন) গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন‌। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৩ জুন দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত “যশোরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু, ‘নির্যাতনে হত্যার’ অভিযোগ পরিবারের” শীর্ষক সংবাদ এবং একই বিষয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যশোরের অভয়নগর উপজেলায় পুলিশ হেফাজতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ তাকে ইয়াবা দিয়ে আটকের পর টাকা না পেয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে। মৃত আফরোজা বেগম অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের জলিল মোল্যার স্ত্রী। গত ২ জুন সকাল সাড়ে ১১টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।

বিজ্ঞাপন

আফরোজা বেগমের ছোট ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির মোল্যা বলেন, ‘গতকাল রাত ১২টার দিকে আম্মু বাড়ির পাশে টিউবওয়েলে পানি আনতে যায়। সেসময় বাড়িতে পাঁচজন পুলিশ আসে। অভয়নগর থানার এএসআই সিলন আলী আম্মুকে বলে, তোর কাছে যা আছে বের করে দে। আম্মু তার কাছে কিছু নেই জানালে সিলন আলী একজন নারী পুলিশ দিয়ে তার দেহ তল্লাশি করেও কিছু পায়নি। পরে সিলন আলী আম্মুকে বেধড়ক মারধর করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমার সামনে আম্মুর চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।’

মৃত আফরোজা বেগমের বড় ছেলে ইজিবাইক চালক মুন্না মোল্যা বলেন, ‘গ্রামের একটি মহলের ইন্ধনে অভয়নগর থানার এসআই সিলন ও শামছু গতরাত ১২টার দিকে আমাদের বাড়িতে আসে। পরে নিজেদের কাছে থাকা ইয়াবা দিয়ে মাকে আটক দেখায়।’

তিনি জানান, সিলনসহ কয়েকজন পুলিশ তার মাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মারধর করে। পরে রাত ১টার দিকে থানায় নিয়ে যায়। মুন্না জানান, ২ জুন সকালে থানায় গিয়ে দেখেন তার মা খুব অসুস্থ। পরে পুলিশকে অনুরোধ করে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা কয়েকটি টেস্ট দিলেও পুলিশ সদস্যরা সেগুলো করতে না দিয়ে তাকে ফের থানায় নিয়ে যায়। তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। মুন্নার অভিযোগ করেন, পুলিশ দুই লাখ টাকা ঘুষের দাবিতে তার মাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে কমিশনের সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, রাষ্ট্রের পেশাদার শৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশ পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় নিয়ে একজন নারীকে চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে নির্যাতন ও পরবর্তী সশয়ে ওই নারীর মৃত্যু সংক্রান্ত অভিযোগটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। পুলিশ বাহিনীর কতিপয় সদস্যের এমন অপেশাদারি ও দায়িত্বহীন আচরনে দেশে-বিদেশে পুরো বাহিনীর কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সমীচীন মর্মে কমিশন মনে করে।

এ অবস্থায় যশোরের অভয়নগর উপজেলায় পুলিশ হেফাজতে আফরোজা বেগমের মৃত্যুর ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন