বিজ্ঞাপন

২০২৬-২৭ পর্যন্ত সরকারের সামনে ৭ চ্যালেঞ্জ, বাজেটে উত্তরণের উপায়

June 6, 2024 | 11:00 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মূল্যস্ফীতি কমানোর পাশাপাশি মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাবনা সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থনীতির নানা সূচক নিম্নমুখী হওয়ায় এই বাজেটটি রাখা হয়েছে সংকোচনশীল ধরনের। এই বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে ছয়টি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। সেসব চ্যালেঞ্জের উত্তরণ ঘটিয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উপযোগী বাজেটই প্রণয়ন করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কেবল ২০২৪-২৫ অর্থবছর নয়, ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত তিন অর্থবছরের জন্য মধ্যমেয়াদে সরকারের সামনের কী ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা থাকতে পারে, সেটিও বিবেচনায় নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। মধ্যমেয়াদি এসব চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়েই নির্ধরণ করেছেন মধ্যমেয়াদি নীতিকৌশল। সে অনুযায়ীই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ম্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার নতুন বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর এটি প্রথম বাজেট।

আরও পড়ুন- বাজেট প্রণয়নে ৬ চ্যালেঞ্জ পেয়েছেন অর্থমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

বাজেট প্রণয়নে মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি, পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ— এই ছয় চ্যালেঞ্জ প্রত্যক্ষ বিবেচনায় নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত মধ্যমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলোও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ উত্তরণে মধ্যমেয়াদি নীতি-কৌশলও গুরুত্ব পেয়েছে বাজেট প্রণয়নে।

মধ্যমেয়াদি যত চ্যালেঞ্জ

অর্থমন্ত্রীর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে মধ্যমেয়াদি সাতটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে মূল্যস্ফীতির কথা। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এ ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন বাজারে বিরাজমান উচ্চ সুদের হারকে। কারণ এই উচ্চ সুদহার বিনিয়োগের গতি শ্লথ করে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

মধ্যমেয়াদি তৃতীয় চ্যালেঞ্জটি কর-জিডিপি অনুপাত, যেটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সন্তোষজনক নয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও মধ্যমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম। ব্যাংকিং খাততের ঋণ ব্যবস্থাপনাকে পঞ্চম চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতকে মধ্যমেয়াদের ষষ্ঠ ও সপ্তম চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মধ্যমেয়াদি নীতি বিবৃতিতে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

চ্যালেঞ্জ উত্তরণের কৌশল

মধ্যমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেগুলো উত্তরণের বিভিন্ন কৌশলও সরকার গ্রহণ করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও সেই কৌশলের প্রতিফলন রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে অন্যান্য দেশের গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশেও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সুদের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি ১০ শাতংশে ও নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি ৭ শতাংশে উন্নীত করে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলভিত্তিক সুদের হার নির্ধারণের ব্যবস্থা বিলোপ করে সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদা ও ঋণযোগ্য তহবিলের জোগানসাপেক্ষে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য রাজস্বনীতিতেও সহায়ক নীতিকৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।

এদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ফ্যামিলি কার্ড, ওএমএস ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার করেছে সরকার। অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ, এসব নীতিকৌশলের ফলে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। কঠোর মুদ্রা ও ব্যয়সংকোচন নীতি অবলম্বন করায় অদূর ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলেও আশা করছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতেও সংস্কার ও নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি আগামীকে ধরে রাখতে কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন উৎসাহিত করতে যৌক্তিক সব সহায়তা চলমান থাকবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং রফতানি ও প্রবাস আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রীর আশাবাদ, এসব নীতিকৌশলের সুফল হিসেবে আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে, যা মধ্যমেয়াদে (২০২৬-২৭ অর্থবছর) এটি বেড়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রসঙ্গে বলেছেন, উন্নত বিশ্বের উচ্চ সুদের হার বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। এসব দেশে উচ্চ সুদহার সামনেও অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো কঠিন হতে পারে। রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে সাময়িকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ ও বিলাসী ভোগ্যপণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নন-পারফর্মিং ঋণ ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু ব্যাংক একত্রীকরণের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়াটির সুফল পেতে কছুটা সময় লাগবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের বাজারের বাজারে অস্থিতিশীলতা বড় একটি কারণ। এর বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পদক্ষেপ হিসেবে ক্রলিং পেজ পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। এতে রফতানি উৎপাহ পাবে, অফিশিয়াল চ্যানেলে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়বে। আর্থিক হিসাবে এখনো ঘাটতি থাকলেও তা মধ্যমেয়াদে কমে আসবে। আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়তে শুরু করবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।

আরও পড়ুন-

২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কিছু সুবিধা কমে যাবে। এ ক্ষেত্রে রফতানি বহুমুখীকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর গুরুত্বারোপ করার কৌশল নেবে সরকার। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষতিসাধন করতে পারে উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় খুঁজে বের করার জন্য সঠিক বিশ্লেষণে গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা ও কর ফাঁকির ক্ষেত্র দূর করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বাজেট বক্তৃতায় বলেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম নেওযা হচ্ছে। রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি করজাল সম্প্রসারণের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ জিডিপির ১০ শতাংশে উন্নীত করতেও কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

সংকোচনমূলক পদক্ষেপের উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক সুফল পাওয়ার জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণের পাশাপাশি সহায়ক রাজস্বনীতি, অর্থাৎ ব্যায় কমানো ও কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় নিরুৎসাহিত করাসহ বিভিন্ন কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী বাজেটে আমার বাজেট ঘাটতি হমানো ও সীমিত কলেবরে হলেও কৃচ্ছ্রসাধন অব্যাহত রাখব। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ কৌশলে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে বলে আগামী অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে সরকারি ব্যয় ধীরে ধীরে বাড়ানোর লক্ষ্য থকবে।

মধ্যমেয়াদে যত আশাবাদ

মধ্যমেয়াদে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি বিভিন্ন সম্ভাবনাও দেখছেন অর্থমন্ত্রী। নীতি বিবৃতিতে সুনির্দিষ্টভাবে ৯টি সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ দেখছেন তিনি। এগুলো হলো—

  • কৃষি ও শিল্প উৎপাদন শক্তিশালী থাকবে এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে;
  • উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি মধ্যমেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে, যা বাংলাদেশের রফতানি বাড়াতে সহায়তা করবে;
  • সম্প্রতি গৃহীত পদক্ষেপের ফলে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে;
  • বিশ্বব্যাপী পণ্যের মূল্যহ্রাস ও দেশীয় বাজারে বিনিময় হারের স্থিতিশীলতার কারণে মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমবে;
  • মূল্যস্ফীতি কমার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে ভোগব্যয় বাড়বে এবং এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে;
  • মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়ার কারণে আমদানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে;
  • বিশ্বজুড়ে নীতিসুদের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে এবং মধ্যমেয়াদে তা কমে আসবে। এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করবে;
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের কারণে কর রাজস্বের প্রবৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার হবে; এবং
  • বিভিন্ন বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও রফতানি ও প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা মধ্য মেয়াদে চলমান থাকবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নত, টেকসই ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নই এই বাজেটের খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও মধ্যমেয়াদি নীতি কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু।

এ কৌশলের অধীনেই প্রস্তাবিত বাজেটের আকার করা হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে মাত্র ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির গড় হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটটি সংকোচনশীল রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন