বিজ্ঞাপন

‘অপ্রদর্শিত অর্থ মূল ধারায় আনতেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ’

June 8, 2024 | 3:21 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অপ্রদর্শিত অর্থ মূল ধারায় আনতেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় আমরা অর্থনীতির মূল ধারায় আনার ব্যবস্থা করেছি। এর ফলে ব্যাংকিং সিস্টেমে অর্থপ্রবাহ বাড়বে।

শনিবার (৮ জুন) দুপুরে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রথমে তিনি লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ঘোষিত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটকে ভারসাম্যমূলক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে ধন্যবাদ জানান ওবায়দুল কাদের।

বিজ্ঞাপন

লিখিত বক্তব্যে অর্থনেতিক সংকটকালে এই বাজেট গণমুখী, বাস্তবসম্মত। কারো প্রেসক্রিপশনে এই বাজেট দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে রেখে গিয়েছিল, জনগণের ধারাবাহিক সমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে দারিদ্র্য ১৮ দশমিক সাত শতাংশে এবং অতি দরিদ্রের হার পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ফলে জীবনমান এ দেশে দিন দিন উন্নততর হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন শুধু ডালে ভাতের নয়, পুষ্টি উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে মনে করেন।

তিনি বলেন, এ সময় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) গড়ে ছয় দশমিক সাত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল আমাদের সবার মধ্যে পৌঁছে গিয়েছে। ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য কমেছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনো নয় শতাংশের উপরে রয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি দেশের বাজারে সরবরাহ শৃঙ্খলে ত্রুটি, ডলার বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া আমাদের বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণ। একই সময়ে দেশে গড় মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে সাত শতাংশের বেশি এবং মজুরি বৃদ্ধির মধ্যে দুই শতাংশের একটি ফারাক রয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে। এতে আমদানি কমেছে বছরে ১৫ শতাংশের বেশি হারে। ফলে সংকটকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড; তিন মাসের বেশি আমদানির জন্য ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। তা সত্ত্বেও টাকার মান ধরে রাখতে রিজার্ভ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে। ফলে রিজার্ভ কমে গেছে, বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখনো আমরা ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থনীতি পেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পরিচালনার দক্ষতার গুণে পূর্ববর্তী দুই বছরের মধ্যে আমরা সেই মূল্যস্ফীতি দমন করে জাতিকে স্থিতিশীল অর্থনীতি উপহার দিয়েছিলাম।

বর্তমান সরকারের বিভিন্ন অংশের সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এবার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সক্ষম হবো, ইনশাল্লাহ। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত, সামাজিক নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যা দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করবে।

বিজ্ঞাপন

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ ও ১৫ বছরের পরে উন্নয়নে অর্জনে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এই বাজেট এবার গতবারের কিছু বেশি। সেটা আমরা বলেছি কী কারণে। বিএনপি আজকে বড় বড় কথা বলে। অর্থ পাচারের কথা বলে, কালো টাকার কথা বলে, দেশকে গিলে খাওয়ার কথা বলে।

তাদের বাজেট সর্বশেষ ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা। তারপরও বাজেটের আগে সাইফুর রহমানকে বিশ্বের অর্থনীতির বিভিন্ন ফোরামে প্যারিসের কনসোরডিয়াম ফোরামে দৌঁড়াতে হয়েছিল ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। আমাদের সময় ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বাজেট পূর্ববর্তী সময়ে কোনো অর্থমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা চায়নি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তাহলে বুঝতে পারে, দেশটা কোথায় থেকে কোথায় এসেছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় আমরা অর্থনীতির মূল ধারায় আনার ব্যবস্থা করেছি। এর ফলে ব্যাংকিং সিস্টেমে অর্থপ্রবাহ বাড়বে।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতিতে তারা পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তারা বলছে, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবেন। যাদের নেতারা দুর্নীতিবাজ তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবেন, এটা এই বছরের সেরা জোক।

আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা দুর্নীতিবাজ আছেন, তাদের বিরুদ্ধে দল কী ব্যবস্থা নেবে-এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের কাছে তালিকা চাইলেন দলটির সাধারন সম্পাদক। তিনি বলেন, আপনারা আমাদের তালিকা দেন, আমরা তা দুদককে দেব।

বাজেটের একটাই চ্যালেঞ্জ, তা বাস্তবায়ন করা। তা বাস্তবায়নে সরকার এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ডলার সংকট নিয়ন্ত্রণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সংকট মোকাবিলা করার জন্য আমরা কাজ করছি বলেও যোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমরা কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করব। আমাদের এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এবারের বাজেটে নিত্যপণ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষাখাতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে, যাতে এসব ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির চাপ না আসে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খানসহ অন্যান্য নেতারা।

সারাবাংলা/এনআর/এনইউ

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন