বিজ্ঞাপন

‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ নিয়ে উষ্মা দুঃখজনক : শিক্ষামন্ত্রী

June 8, 2024 | 6:30 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারদের জন্য চাকরিতে কোটা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি সবাইকে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৮ জুন) সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত ভূমিসেবা সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের কাছে একথা বলেন। নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় ও প্রতিক্রিয়া বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে আমাদের এদেশ দিয়ে গেছেন। সেটার প্রতি সম্মান দেখিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের যারা পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তাদের সন্তানদের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কোটার যে বিষয়টি ছিল সেটা যথাযথ প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় অমনোযোগিতা ও অমান্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। সে বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে একটি নির্দেশনা এসেছিল। আমরা সকলকে অনুরোধ জানাবো, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি ও নির্দেশনার প্রতি সবাই যথাযথভাবে সম্মান দেখাবেন।’

‘যেহেতু আদালতের রায় এখনো সুনির্দিষ্টভাবে আমার হাতে আসেনি বা পড়ে দেখতে পারেনি; তাই সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মন্তব্য আমি করছি না। তবে এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে মুক্তিযুদ্ধের এত সময় পরে এসেও তাদের সন্তানদের জন্য রাখা কোটা প্রশ্নে কিছু মানুষের এত উষ্মা, তা খুবই দুঃখজনক। দেশ যারা স্বাধীন করে দিয়েছেন, তাদের সন্তানদের নিয়ে তারা যদি দ্বিতীয়বার প্রশ্নবিদ্ধ হন তাহলে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, এটা আমাদের পীড়া দেয়।’

বিজ্ঞাপন

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সত্তরের নির্বাচনে স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার পক্ষে ২০ শতাংশ ভোট যায়নি। সেই ২০ শতাংশ হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী যে অংশটি ছিল, তারা কিন্তু পরবর্তীতে দীর্ঘ ২৬-২৭ বছর ধরে সরকারের আনুকূল্য পেয়ে ফুলেফেঁপে একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে। সুতরাং সেই গোষ্ঠীগুলো যে বেড়ে অনেক বড় হয়নি, সে কথা তো বলা যেতে পারে না। তারা রাজনীতিত ও সমাজে বিদ্যমান এবং অর্থনীতিতে খুব শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। এই শক্তিটা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার বিরোধিতা করবে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের পাকিস্তান নিয়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে নওফেল বলেন, ‘এখনো কিছু রাজনৈতিক দল বলছে যে, পাকিস্তানের সময় নাকি ভালো ছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব তিনি বলছেন, পাকিস্তানের সময় নাকি ভালো ছিল। তো কতটুকু পাকিস্তানপ্রেম দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে সেই দলে মহাসচিবের মধ্যে থাকতে পারে সেটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।’

‘এ ধরনের একটা পরিস্থিতিতে আমরা আছি। সেটা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি স্বাধীনতার এতদিন পরে এসেও এরকম আছে কি না আমি জানি না। তারা কিন্তু বহাল তবিয়তা আছেন। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় কুচক্রিরা তাদেরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে তারা রয়ে গিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম। তারাই কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধর্মনিরপেক্ষ সম্প্রদায়িক চেতনা কি বিচ্যুত করে সেটাকে এক ধরনের সম্প্রদায়িককরণে প্রচেষ্টা তারাও করে।’

বিজ্ঞাপন

নতুন পাঠ্যসূচিতে সব ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে এসেছি, শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রক্রিয়া, পাঠদান ব্যবস্থা ও পাঠক্রমের মধ্যে সবসময় সকল ধর্মের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধার জায়গাটাতে আমরা সবসময় শক্তিশালী ভূমিকায় থাকবো। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে কোন কাজ জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার কখনো করেনি, আগামীতেও করবে না। কিছু কিছু বিষয় তারা বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন, সেগুলো আমরা দেখছি এবং এ ধরনের কিছু থাকলে অবশ্যই আমরা নিরসন করব।’

শনিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ রাখার বিষয় ঈদুল আযহার পর থেকে বিবেচনা করা হচ্ছেও জানান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী থেকে নাফ নদী পর্যন্ত দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বিশাল জেলা এবং বান্দরবান এই তিন জেলা মিলিয়ে, দক্ষিণ চট্টগ্রামকেও কিন্তু একটি বিশাল জেলা সমান ধরা যায়, সেখানে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তবে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অংশ সেখানে আছে, কিন্তু ওখানে পাঠদান কার্যক্রম হয় না, গবেষণা কার্যক্রম হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় দেয়ার জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতির জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। কক্সবাজারে যেন মূলত সে বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়, তাহলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান থেকে শিক্ষার্থীরা যেতে পারবে। সেভাবে করে জায়গাটা নির্ধারণ করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে কক্সবাজারে।’

এর আগে, ভূমিসেবা সপ্তাহের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাপ্তি হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন। এ কারণে আমরা এখন ভূমি অফিসে না গিয়ে ঘরে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে খাজনা প্রদান, ই-নামজারীর আবেদন ও ভূমির অবস্থানসহ ভূমি সংক্রান্ত সকল ধরনের সেবা গ্রহণ করছি। নাগরিকরা ভূমি অফিসে না গিয়ে ঘরে বসেই মোবাইলের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধসহ সকল ধরণের খতিয়ান সম্পর্কে জানতে পারছে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহকারি কমিশনার রাজীব হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জয় সরকার, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আহমেদ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার শহীদুল চৌধুরী সৈয়দ ও জেলার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামাল বক্তব্য রাখেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ৮ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সারাদেশে ভূমিসেবা সপ্তাহ উদযাপন করা হচ্ছে। চট্টগ্রামসহ বিভাগের ১১ জেলার ১০৩টি উপজেলা ভূমি অফিস, সার্কেল ভূমি অফিস ও সকল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ভূমি সেবা সপ্তাহ চলছে। ভূমিসেবা সপ্তাহ উপলক্ষে জিমনেশিয়াম চত্বরে ১০টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। স্টলে ভূমিসেবা সংক্রান্তে বিভিন্ন সেবা দেয়া হচ্ছে।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন