বিজ্ঞাপন

জরায়ু কাটা পড়ার ঘটনায় প্রাইভেট ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলা

June 9, 2024 | 4:59 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ত্রিশালের হাসিনা বেগমের ‘সিজারে গজ রেখে সেলাই, ইনফেকশনে কেটে ফেলা হলো জরায়ু’র ঘটনায় মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হাসিনার স্বামী আনিসুর রহমান বাদী হয়ে ময়মনসিংহ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন (মামলা নং-কোতোয়ালী সিআর ১২১৩/২৪)।

বিজ্ঞাপন

মামলার আসামিরা হলেন ত্রিশালের ওবায়দুল ডায়ানস্টিক সেন্টারের মালিক দেলোয়ার, হেলথ কেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আহমেদ ও চিকিৎসক রূপা আক্তার। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত জেলা সিভিল সার্জনকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

গতবছর ১৭ জুন ত্রিশালের আউটিয়াল গ্রামের রিকশাচালক আনিসুরের রহমানের স্ত্রী হাসিনা’র (৩৫) প্রসব ব্যথা উঠলে নগরীর চরপাড়া হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে, সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ত্রিশালের ওবায়দুল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করা হতো। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক দেলোয়ারের পরামর্শে ময়মনসিংহের ব্রাহ্মপল্লী রোডের হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করান স্বামী আনিসুর। সিজারিয়ার অপারেশন করা হয় হাসিনার। স্বামী রিকশাচালক আনিসুর রহমান সেখানে সিজার ও ডাক্তারের সব খরচ দেন। ওইদিন সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার (সিজার) করেন গাইনি চিকিৎসক ডা. রূপা আক্তার। হাসিনা ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। তিনদিন পর ছাড়পত্র দিলে বাড়ি চলে যায় তারা। এরপর স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে ড্রেসিং করানো হলে ক্ষত জায়গা কোনোভাবেই ভালো হচ্ছিল না। দিনদিন পেট ব্যথা তীব্র হতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

২১ জুলাই হাসিনা তলপেটে ব্যথা নিয়ে ময়মনসিংহের চুরখাইয়ে কমিনিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। ১৪ দিন পর সেখান থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে যায়। আবার ১৪ আগস্ট হাসিনাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে বলেন। আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে চিকিৎসকরা দেখতে পান, হাসিনার জরায়ুতে গজের মতো কিছু একটা রয়েছে। ফলে ভেতরে ইনফেকশন হয়েছে। তাড়াতাড়ি অপারেশন করতে হবে বলে জানান চিকিৎসকরা। ১৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন করা হয়। হাসিনাকে বাঁচাতে অপারেশন করে চিকিৎসকরা কেটে ফেলে জরায়ু, ফেলোপিয়ান টিউব।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি গিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে প্রথমে ব্রাহ্মপল্লীর হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা তাড়িয়ে দেন। চিকিৎসক রূপা আক্তারও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

বিষয়টি সমাধানে ছুটে যান জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। ঘটনার বর্ণনায় সিভিল সার্জনকে জানান সবকিছু। এ নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন একটি কমিটি গঠন করে উভয়ের মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন করেন। এতে কোনোরূপ প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগী পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হন।

বিজ্ঞাপন

অর্থের সংকুলান না হওয়া ও বিলম্বে চিকিৎসা সেবা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হওয়ায় হাসিনার স্বামী আনিসুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। আমার স্ত্রী হাসিনার এমন সমস্যায় আমি সব বিক্রি করেছি। ধার-দেনা করেছি। এখন স্বজনদের সহায়তা, আর অন্যের রিকশা চালিয়ে, যা পাই তা দিয়ে চলে আমার সংসার চলে। আমাদের সঙ্গে যে অপরাধ করা হয়েছে তার সঠিক বিচার চাই।’

হাসিনার ভাই গার্মেন্টসকর্মী মো. সুরুজ্জামান সারাবাংলা’কে বলেন, ‘সিভিল সার্জন অফিস অনেক সহযোগিতা করেছেন। তবে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ভালো হতো। আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। একটি কমিটি করে উভয়ের বক্তব্য শুনে ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছিল। যেহেতু মামলা হয়েছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।’

ঘটনা নিয়ে হেলথ কেয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলছি। কিছু টাকাও দিতে চেয়েছি। তারা নেয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি ম্যানেজ করার জন্য।’

বিজ্ঞাপন

মামলার আইনজীবী মো. বিল্লাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একজনের জরায়ু কেটে ফেলা হবে, তাও আবার অন্য ডাক্তারের ভুলে। সে আর কোনো দিন বাচ্চা ধারণ করতে পারবে না। আমরা চাই, রোগীর পরিবার ন্যায়বিচার যেন পায়।’

আরও পড়ুন: সিজারে গজ রেখে সেলাই, ইনফেকশনে কেটে ফেলা হলো জরায়ু

সারাবাংলা/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন