বিজ্ঞাপন

‘শেষ ৩ মাসে বাজেট ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়, ম্যাজিকটা কী জানি না’

June 10, 2024 | 8:17 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, প্রতিবছরই নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাজেট আসবে, কোথাও বরাদ্দ বাড়বে আবার কোথাও কমবে। কিন্তু বাজেটের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বাস্তবায়ন কিভাবে হচ্ছে ও কোথায় হচ্ছে সেটা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন বাজেটের প্রথম তিন মাসে হয় তিন শতাংশ, পরের তিন মাসে হয় নয় শতাংশ এবং শেষ নয় মাসে সেটা হয়ে যায় ২৭/২৮ শতাংশ। তার পর থাকে তিন মাস, সেই তিন মাসে বাজেটের আকার কিছুটা কমানো হয়। বাজেট বাস্তবায়ন হয়ে যায় ৮০ শতাংশ। এটার ম্যাজিকটা কী, আমি জানি না। ওই সময় বাজেটের টাকা ব্যয় করতে হবে তাই করা হয়, এবং তাড়াহুড়া করে কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। আরেকটা দিক হচ্ছে এই রকম ব্যয় করার হিড়িক যখন পড়ে তখন নয়-ছয় করার সুযোগ হয়, অনেকের পকেট ভাড়ি হয়।

সোমবার (১০ জুন) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওর (ডর্প) ও হেলভেটাস বাংলাদেশ আয়োজিত জলবায়ু, পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক বাজেট প্রতিক্রিয়া শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা’র সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডর্প চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্র্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)- এর গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির। ইআরএফ কার্য নির্বাহী সদস্য সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় সমাপনি বক্তব্য দেন ডর্‌প-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এএইচএম নোমান।

বিজ্ঞাপন

খলীকুজ্জমান বলেন, অনেকে বলেন এই খাতে বরাদ্দ বাড়েনি ওই খাতে কম হয়েছে, কিন্তু আমি বলি বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে কী হবে যদি খরচ না হয়। তার পর খরচ কোথায় হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়, কতটা মান সম্পন্ন হচ্ছে সেটাও আরেকটা বিষয়।

তিনি বলেন, এবার যে বাজেটে আমাদের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হলো ৬.৫ শতাংশ ও প্রবৃদ্ধি ৬.৭৫ শতাংশ। এটা কিভাবে হবে? বাজেটেও এবিষয়ে বাজেট বক্তব্যে কিছু বলাও নেই। চলতি বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ছয় শতাংশ এটা সারা বছরে কমেনি বরং বেড়েছে, বাজেট দেওয়ার পর আরও বেড়েছে, এখন ১০ শতাংশের কাছাকাছি। অথচ মূল্যস্ফীতি শ্রীলংকার মূল্যস্ফীতিও আমাদের চেয়ে কম। তাদের যেটুকু বেড়েছিল তারা তা নিয়ন্ত্রণ করেছে। যে দুয়েকটি আর্থিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল সেগুলো কোনো কাজ করছে না। অন্যদেশে এসব পদক্ষেপ কাজ করে আমাদের দেশে করে না, কেন?

কারণ আপনারা যাকে বলেন সিন্ডিকেট, আমি বলি দুষ্টচক্র। এই দুষ্ট চক্রগুলোতে যারা আছে তারা সঠিক পদক্ষেপগুলোকেও বাস্তবায়ন করতে দেয় না। আমাদের দেশে দুষ্টচক্র প্রায় সবজায়গাতেই রয়েছে, দুষ্ট চক্র আছে আলুর বাজারে, পানসুপারির বাজারে, ডলারের বাজারে আছে। বিদেশের শ্রমবাজারেও দুষ্ট চক্র রয়েছে, যার প্রমাণ কয়েকদিন আগেই দেখা গেল। দুষ্টচক্রগুলো যেখানে আছে সেখানে যত ভালো পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন যতক্ষণ পর্যন্ত দুষ্টচক্রের লম্বা হাতগুলো হ্রাস করা না হয় ততক্ষণ তা বাস্তবায়ন হবে না। আমরা অগ্রগতি অনেক করেছি আর এই অগ্রগতিগুলো ধরে রাখতে ও তরান্বিত করতে হলে এই দুষ্ট চক্রগুলোকে দমন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, অথচ মনোযোগ দেওয়া দরকার কর জিডিপিতে। কারণ আমরা যে বাজেটই দেই না কেন তা বাস্তবায়নে সরকারের সামর্থ বাড়াতে হবে। এজন্য কর জিডিপি বাড়াতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে কর জিডিপির হার ৩৪ শতাংশের ওপরে। সেখানে আমরা ৮-৯ শতাংশের মধ্যে রয়েছি। শ্রীলাংকা ও পাকিস্তানও আমদের চেয়ে বেশি রয়েছি।

ড. মাহফুজ কবির তার মূল আলোচনায় বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েল জন্য যে বরাদ্দ রয়েছে তার ২১.৩১ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাউজিন (ওয়াশ) খাতে। যার পরিমাণ নয় হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৩৮৫ কোটি টাকা বড় শহরগুলোতে ওয়াসার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাকিটা চরাঞ্চল, উপকুল, পাহাড়ি অঞ্চলসহ পুরো দেশে কাজ হবে।

তিনি বলেন, ওয়াসার জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন হাজার ৪৬৩ টাকা এবং সেই অনুপাতে সারাদেশের সাধারন মানুষের সুপেয় পানির, উন্নত স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থার জন্য বরাদ্দ মাত্র ৫৫৫ টাকা খুবই অপ্রতুল। ন্যায্যতার ভিত্তিতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিৎ। অনেক অঞ্চলের মানুষকে এখনও বহুমাইল দূর থেকে সুপেয় পানি এনে জীবন বাচাতে হয়। উপকূলে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন