বিজ্ঞাপন

ইবির ডরমেটরি ‘দখল’ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের, ১ বছরেও ব্যবস্থা নেই

June 11, 2024 | 7:52 am

আজাহারুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হল দখলের সংস্কৃতি নতুন কিছু নয়। হলগুলোর প্রতিটিতে ‘নামকাওয়াস্তে’ পৃথক প্রশাসন থাকলেও আদতে শিক্ষার্থীদের হলে তোলা বা হল থেকে বের করা কিংবা বিচার-সালিশের মতো কাজগুলো শিক্ষকদের গোচরেই ‘দেখভাল’ করে থাকেন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। এদিকে হলের পাশাপাশি কোনো একাডেমিক ভবনের কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিভাগের জন্য রুম দখলের ঘটনাও কম নেই। সেই ধরনের ‘সংস্কৃতি’ই এবার দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা, অর্থাৎ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারে।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন সূত্র থেকে ও সরেজমিনে ঘুরে পাওয়া তথ্য বলছে, অবৈধভাবে তালা ভেঙে ১৬টি বাসা দখল করেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। প্রায় এক বছর ধরে সেখানে অবস্থান করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোও এ বিষয়ে অবগত। তাদের বারবার জানালেও অজ্ঞাত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আর দখলকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দাবি, কক্ষ বরাদ্দে প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তারা অবৈধভাবে দখল করে ভবনগুলোতে উঠে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারের (ডরমেটরি-২) কাজ শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। প্রকৌশল দফতর জানিয়েছে, ২০২২ সালের জুনে প্রকৌশল দফতরের কাছে ভবন হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে সেটি প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেয় প্রকৌশল দফতর। তবে এখনো সেই ভবন বরাদ্দের দিকে যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষক-কর্মকর্তরা জানান, নির্মাণকাজ শেষে কক্ষ বরাদ্দ চেয়ে বাসা বরাদ্দ কমিটির কাছে আবেদন করেছিলেন তারা। এরপর প্রায় এক বছর সময় পেরিয়ে গেলেও কাউকে কোনো কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে গত বছরের ২১ জুন তালা ভেঙে ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলার ১৬টি বাসা দখল করেন তারা। বাসা ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও কক্ষ বরাদ্দে কর্তৃপক্ষের ঢিলেমির কারণে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা জানিয়েছে, এক বছরে দখল হয়ে যাওয়া দুই কক্ষের ১৬টি বাসার কোনো ভাড়া তুলতে পারেনি তারা। এসব বাসার মাসিক ভাড়া এক হাজার ৭৫০ টাকা। সে হিসেবে এক বছরে ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ভাড়া বকেয়া পড়েছে।

অন্যদিকে প্রকৌশল দফতর বলছে, শিক্ষক-কর্মকর্তারা এই এক বছরে লক্ষাধিক টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন। অনুমোদিত কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা সেখানে না থাকায় দফতরটি বিলও তুলতে পারছে না। হিসাব করে দেখা যায়, এই সময়ে কোনো ধরনের ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে দখলকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের। অভিযোগ রয়েছে, উভয় দফতর থেকে প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েও প্রতিকার মেলেনি।

বাসা দখলে রাখা এক ইবি কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমরা অবৈধভাবে এখানে থাকতেও চাই না। কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। তারা আমাদের বরাদ্দ না দিলে বাসা ছেড়ে দেবো।

বিজ্ঞাপন

এদিকে তালা ভেঙে ডরমেটরিতে বাসা দখলের পরপরই এস্টেট শাখা থেকে প্রশাসনকে অবহিত করা হয় বলে জানিয়েছেন এস্টেট শাখার প্রধান শামসুল ইসলাম জোহা। তিনি বলেন, উপাচার্য স্যার কয়েকদিন আগে প্রধান প্রকৌশলী ও আমাকে ডেকেছিলেন। তিনি আমাদের কাছে সেই শিক্ষক-কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়েছিলেন। আমরা তালিকা জমা দিয়েছি।

তবে বিষয়টি নিয়ে এস্টেট ও প্রকৌশল দফতর লিখিতভাবে কিছু জানায়নি বলে জানান উপউপাচার্য ও বাসা বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, লিখিতভাবে কিছু জানতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন