বিজ্ঞাপন

ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ ভাগের ২ ভাগ সড়কই কাঁচা!

June 12, 2024 | 2:22 am

এমদাদুল ইসলাম ভূট্টো, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ঠাকুরগাঁও: দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। ধানের আবাদ তো আছেই, সঙ্গে গম-ভূট্টার আবাদও কম নয় জেলায়। আম-লিচুর বাগান রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। কিছু সবজিরও আবাদ হয় দেশের উত্তরাঞ্চলের এই জেলায়। কিন্তু যে কৃষির ওপর নির্ভরতা, সেই কৃষি পণ্য বিপণনের উপযোগী সড়কই নেই জেলায়। স্বাভাবিকভাবেই নিত্যদিনের চলাচলও ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয় সড়কের অভাবের কারণেই।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তথ্য বলছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট সড়কের পরিমাণ পাঁচ হাজার ১২ কিলোমিটার। এর মধ্যে সড়ক পাকা হয়েছে মাত্র এক হাজার ৫৯৫ কিলোমিটার। বাকি তিন হাজার ৪১৭ কিলোমিটার সড়কই কাঁচা। সে হিসাবে জেলার মাত্র ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ সড়ক পাকা, বিপরীতে কাঁচা সড়কই ৬৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ জেলার মোট সড়কের তিন ভাগের দুইভাগেরও বেশি সড়কই কাঁচা।

এ পরিস্থিতিতে জেলার সড়কগুলো দ্রুত পাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন জেলার বাসিন্দারা। সড়কের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের দাবিও জানাচ্ছেন তারা। জেলার অধিবাসীদের এসব দাবি এখন রীতিমতো গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের খাদ্য উৎপাদনে ঠাকুরগাঁও জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ জেলায় ধান, চাল, গম, ভুট্টা ও নানা ধরনের সবজিসহ আম, লিচুর মতো ফল উৎপাদিত হয়ে থাকে। ফলে কৃষিকে ঘিরে জেলার অর্থনীতি আবর্তিত হয়। কিন্তু সেসব কৃষিপণ্য সরবরাহ ও বিপণনে প্রধান অন্তরায় যোগাযোগব্যবস্থা। এর বাইরে সাধারণ যাতায়াত তো আছেই।

বিজ্ঞাপন

স্বাভাবিকভাবে চলাচলের কোনো উপায় নেই ঠাকুরগাঁও সদরের অন্যতম এই সড়ক দিয়ে। বর্ষায় সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ছবি: সারাবাংলা

ঠাকুরগাঁও সদরের কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘ধান-গম উৎপাদন করি। শাক-সবজি উৎপাদন করি। কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থা। উৎপাদিত ফসল সময়মতো বাজারে নিতে পারি না। যেগুলো একটু পচনশীল, সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আমার মতো সবার অবস্থাই এক। শুধু রাস্তা না থাকার কারণে আমরা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

সদর উপজেলার মাতৃগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে নারগুন ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। কত জনপ্রতিনিধি এলেন-গেলেন, কিন্তু আমাদের রাস্তা আর হলো না।

সদর উপজেলার সালন্দর শাহপাড়া গ্রামের মনসুর আলী বলেন, মাদরাসাপাড়া হয়ে বাহাদুরপাড়া পর্যন্ত রাস্তা চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শহরঘেঁষা হওয়ায় প্রতিদিন এ রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের চলাচল। কিন্তু তারা ঠিকমতো চলাচলই করতে পারেন না। সামনে বর্ষা আসবে। এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতই করা যাবে না আর।

বিজ্ঞাপন

মনসুর আলী, আব্দুল আলিমের মতো ঠাকুরগাঁও সদরের সবারই এখন এক দাবি— সড়ক পাকা করতে হবে। তারা বলছেন, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা বলে। কিন্তু এই সড়ক দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে!

কেবল ঠাকুরগাঁও সদর নয়, অন্যান্য উপজেলাতেও সড়ক যোগাযোগের চিত্র একই। রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা বলছেন, উপজেলার কিছু কিছু সড়কে বর্ষাকালে পানি জমে এমন অবস্থা তৈরি হয় যে বলতে গেলে বন্ধই থাকে। সড়কের অভাবে জনজীবন রীতিমতো থমকে যায়, দেখা দেয় নানা অসুবিধা।

এলজিইডির একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে যে তথ্য পাওয়া গেল, তাতেও খুব একটা আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই। শেষ হতে যাওয়া চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকা করার বরাদ্দ ছিল। সঙ্গে ছিল ১৫টি সেতু ও কালভার্টের নির্মাণকাজের বরাদ্দ। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (প্রস্তাবিত প্রকল্প) থেকে আরও প্রায় দুই শ কিলোমিটার সড়ক ও প্রায় ৮৫টি সেতু নির্মাণের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রক্রিয়াধীন।

জানতে চাইলে ঠাকুগাঁও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে এখনো তিন হাজার ৪১৭ কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা রয়েছে। এ ছাড়া সংযোগ সড়কের জন্য আড়াই কিলোমিটার ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ করা প্রয়োজন। আমরা এরই মধ্যে কিছু কিছু প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই সেগুলো অনুমোদন পাবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন