বিজ্ঞাপন

সমালোচনা করতে হলে আগে দেশটা ঘুরে দেখুন

June 18, 2024 | 2:19 pm

মো. আসাদ উল্লাহ তুষার

কিছুকাল আগেও দিনাজপুর-রংপুর বা একেবারে উত্তরাঞ্চল থেকে রাতের গাড়ি ছাড়ত দুপুর দুই বা তিনটায়। পরের দিন ভোরে ঢাকায় এসে পৌঁছাত। সেই নাইটকোচ বাসস্ট্যান্ড থেকে এখন আর দিনের বেলায় ছাড়ে না। নাইটকোচ নাইটেই ছাড়ে অর্থাৎ রাতে ছাড়ে। এটা যে শুধু একসময় দিনাজপুর বা রংপুরের চিত্র ছিল তাই না এটা দেশের অনেক জেলারই চিত্র ছিল।

বিজ্ঞাপন

কারণটা সহজ। রাস্তাঘাট এখনকার মত ছিল না। বর্তমানে রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন, যমুনায় আর ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা ও সময়ক্ষেপণ নাই। তদুপরি রাস্তায় অনেক বিলাসবহুল গাড়ি নেমেছে। এসবকে দৃশ্যমান উন্নতিই বলতে হবে। সময়ের সাথে পৃথিবী এগুচ্ছে, আমাদের দেশও এগিয়ে যাচ্ছে। একই কথা সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য। আর কিছুদিন পর সারাদেশ হয়ত ফেরি পারাপার মুক্ত হবে। ফেরি থাকবে বিকল্প হিসেবে, তাও হয়ত তার নিজের মেয়াদ পর্যন্ত। আকাশে চাঁদ উঠলে যেমন সবাই দেখতে পায়, কিছু আগে বা পরে, ঠিক তেমনই দেশের যে অভাবনীয় এই উন্নতি তা সবাইই দেখতে পাচ্ছে। হয়ত কিছুটা আগে বা পরে। কেউ স্বীকার করছে বা কেউ করছে না। তাই শুধু সমালোচনাকারীরাই না সবারই দেশটাকে ভালভাবে ঘুরে দেখা দরকার। নিজের দেশের কি যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তা নিজ চোখে দেখা দরকার।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে দেশটা ঘুরে দেখে এসে সমালোচনা করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে মানুষ এখন অনেক সাবলম্বী। সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে ২০৩০ এর আগেই টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ে তোলা হবে।’ দেশের বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মিডিয়াতে সারাদিনই সরকারের সমালোচনা করা হয়। সব সমালোচনা করার পর, তাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন।’ কিন্তু কথা বলার আগে দেশটা ভাল করে ঘুরে দেখার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, হাতে নেয়া বড় প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে দেশের মানুষের জীবন মান আরও উন্নত হবে।

সমালোচনাকারীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই চ্যালেঞ্জের মধ্যে সততা আছে, আত্মবিশ্বাস আছে। তিনি যেভাবে দেশের আনাচে-কানাচে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগিয়েছেন সেখান থেকে বিবেচনা করলে তিনি তার সমালোচনাকারীদের এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতেই পারেন। সমালোচনাকারীরা সমালোচনা করবে এটা অনেকটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কাজ করে দেশের উন্নয়ন করে দৃশ্যমান উন্নতি দেখিয়ে তার স্বপক্ষে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া সাহসের কাজ সততার কাজ। এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করা বা এর বিরোধিতা করে এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য কোনো মহল থেকে আসেনি। যেটুকু সমালোচনা করা হয় সেটা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে হয়তো সমালোচনা করার জন্যই সমালোচনাকারীরা করে।

বিজ্ঞাপন

কেউ হয়ত বলবেন, অনেকদিন ক্ষমতায় আছে কিছুতো উন্নয়ন হবে এদেশের এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কিন্তু সঠিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইদানীংকালে যখন বলা শুরু করেছেন, গ্রাম হবে শহর তা কিন্তু ইতিমধ্যে হওয়া শুরু করেছে। আজ প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা প্রত্যন্ত গ্রাম বলে আর কিছু নেই। প্রায় প্রতিটি গ্রামে পাকা বাড়ি ঘর আছে, বিদ্যুৎ আছে, সুপেয় পানির ব্যবস্থা আছে, এলপি গ্যাস আছে, এমনকি অনেক বাড়িতে এসির ব্যবস্থা আছে। প্রায় প্রতিটি গ্রামে পাকা রাস্তা, গ্রাম থেকে ইউনিয়ন সদর ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদর এবং উপজেলা সদর থেকে জেলা শহর সড়ক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। সারাদেশে এটা কোন গোপন রাখার বিষয় না, এই উন্নতি দৃশ্যমান হয়েছে বিগত এক দশকে। বছর দুই আগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর সুবাতাস বইছে চারধারে। বিগত প্রায় দেড় দশকে দেশের উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সড়ক যোগাযোগের এক অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে বা এখনো হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহর আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। প্রয়োজনমত ফ্লাইওভার, ওভারপাস ও বড় বড় রাস্তা ড্রেন নির্মান করা হয়েছে। শহরের সৌন্দর্য আগের চেয়ে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানী ঢাকার উন্নয়ন দেশের সবাই লক্ষ্য করছে। কারণ সবাইকেই কোনো না কোনো সময় রাজধানীতে আসতে হয়। কোন ব্যক্তি যদি এক যুগ বা তার বেশি আগে দেশ ছেড়ে থাকেন তাকে যদি ঢাকার রাজপথে বা এয়ারপোর্টের নতুন টার্মিনালে ছেড়ে দেওয়া হয় তিনি এটা যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা তা হয়ত প্রথমে বুঝতেই পারবেন না। এয়ারপোর্ট ছেড়ে তিনি যখন শহরে ঢুকবেন ততোই অবাক হবেন। দেখবেন, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল। ঢাকা থেকে বেরিয়ে দেখবেন ফোর লেন, সিক্স লেনের নয়নাভিরাম রাস্তা, পদ্মা সেতু ইত্যাদি। খারাপ সমালোচনার দৃষ্টিতে না দেখলে দেশের এই উন্নতি তাকে উদ্বেলিত করবেই। এক যুগ বা তার বেশি আগে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া সেই মানুষটি যে উন্নতি দেখবেন তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার বা শেখ হাসিনার সরকারের অবদান। যা এক বা দেড় দশক আগেও ছিল কল্পনা। উন্নত দেশে যা দেখেছে তা হয়ত অনেকটাই দেখবে নিজ দেশে। হ্যাঁ আরও উন্নতি দরকার, জীবনমানের আরও উন্নতি, শিক্ষার মানসম্মত উন্নতি, দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি সর্বোপরি মানসিকতার উন্নতি।

এই যে অভাবনীয় উন্নয়ন তার কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। কারণ শেখ হাসিনা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারঙ্গম, সৎ সাহসী ও দেশপ্রেমিক। দেশকে কিছু দেওয়ার এই শক্তিটা তার পিতা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টে পরিবারের নির্মম বেদনাদায়ক ঘটনা দেশের মানুষের প্রতি তার দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কাজ তার পিতা বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে করে যেতেন সেই কাজ তার উপর অর্পিত হয়েছে। তাই এই যে দেশের উন্নতির জন্য শত ষড়যন্ত্র চক্রান্ত উপেক্ষা করে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাওয়া তা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের দায়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ বিনির্মাণে লাখো শহীদের ত্যাগের দায়, রক্তের ঋণ শোধ। শুধু ঘুরে দেখা নয়, ঘরে বসেও এই উন্নতি উপলব্ধি করা যায়। থাকতে হয় উদার মন আর সৎ মানসিকতা, যা সবার থাকে না। সেখানেই হয়ত ইঙ্গিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। শতাধিক ইকোনোমিক জোন, চট্রগ্রাম -কক্সবাজার রেললাইন আর জেলায় জেলায় ফেরির বদলে বড় বড় সেতু ঘুরে দেখার বিষয়। বাংলাদেশের জন্মের বেদনা ছিটমহল সমস্যা সমাধান ও সমুদ্রে নিজেদের অধিকার প্ৰতিষ্ঠা শেখ হাসিনা সরকারের বা দেশের বিরাট অর্জন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যবিত্ত্ব দেশের পথে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, রিজার্ভের পরিমান বহুলাংশে বৃদ্ধি ও জিডিপিতে বাংলাদেশ আজ অনেক দেশকেই অতিক্রম করে চলেছে। খাদ্য ও বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, তথ্য-প্রযুক্তিতে স্বপ্নের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া, একযুগের বেশি সময় ধরে প্রাথমিকের চার কোটি বই বছরের প্রথমদিনে ছাত্র ছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা, সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় বিধবা ভাতা, বয়স্ক ও স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বহু পরিমান বৃদ্ধি করা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়াসহ নানা ধরণের সামাজিক সুরক্ষামুলক কাজ করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ যা ব্যবহার করে এই সমালোচনা এসবই অন্তর দিয়ে দেখার বিষয়। অর্ন্তচক্ষু আর বাইরের চক্ষু দুটোই খোলা রেখে দেশটা ঘুরে দেখা দরকার। আশা করি ভাল লাগবে।

লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন