বিজ্ঞাপন

রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

June 20, 2024 | 10:01 am

রাব্বী হাসান সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রংপুর: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে রংপুরের নদ-নদীগুলোতে পানি ক্রমশই বাড়ছে। বিশেষ করে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছেই। পানি বৃদ্ধির কারণে এই অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক। ডুবে গেছে শাক-সবজি ফসলের ক্ষেত। এতে নিরুপায় হয়ে পড়েছে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে। যাতে বন্যায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর অঞ্চলে ২২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টায় তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে শূন্য দশমিক ২০ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে, বুধবার ভোর ৬টায় ওই পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়।

অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের দোয়ানি পয়েন্টে বুধবার সকাল ৯টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৬টায় যা রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডালিয়া পয়েন্টে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিস্তার পানি বেড়ে ক্রমশ বিপৎসীমার পথে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা ছাড়াও নদী তীরবর্তী জেলা লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, নীলফামারী জেলার ডিমলা, জলঢাকা, কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় বাদাম, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনকবলিত পরিবার অনেকটা নিরুপায় হয়ে বসতি অন্যখানে সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে।

কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান, তার এলাকায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নদীর তীরবর্তী আবাদি জমিগুলো তলিয়ে গিয়েছে। কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে আর বাকী কিছু এলাকায় প্লাবিতের পথে। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখি নিয়ে মানুষজন বিপাকে পড়ার আশঙ্কা করছেন।

বিজ্ঞাপন

পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের বাসিন্দা টিপু সুলতান, মনির হাসান, জানান, তাদের এলাকায় পানির স্রোত বইছে। চরের অধিকাংশ জমি পানিতে ডুবে গেছে। কয়েকদিন ধরে পানি বাড়ার কারণে ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

কাউনিয়া উপজেলার গদাই গ্রামের বাসিন্দা আকলিমা বেগম জানান, তিস্তা তীরবর্তী কয়েকটি এলাকার গত দুই সপ্তাহে অন্তত ১৫-২০টি বসতঘর ও স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। পাশাপাশি হুমকিতে রয়েছে গদাইসহ আশপাশের তিন গ্রামের কয়েকশ বসতভিটা, স্কুল ও মসজিদ।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল আর গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারেজের সবকটি গেই খুলে রাখা হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে কিছুটা বাড়ছে পানি প্রবাহ। এছাড়া ভাটির অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, বন্যা মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরে থাকা মানুষজনকে নিরাপদে থাকার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, উজানের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, করতোয়া, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বন্যার আভাস পাওয়া যায়নি। তারপরও সরকারিভাবে সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে, যাতে বন্যায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।

সারাবাংলা/ইআ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন