বিজ্ঞাপন

পেনশনের টাকায় গড়া স্কুল বন্ধের উপক্রম, পাশে দাঁড়াল পুনাক-সিএমপি

June 20, 2024 | 9:17 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পেশাগত জীবনে ছিলেন সরকারি হাসপাতালের নার্স। অবসরে যাওয়ার পর পেনশন ও যাবতীয় সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে গড়ে তোলেন বিদ্যালয়। তিনি এখন জীবন সায়াহ্নে। মরণব্যাধি ক্যানসার বাসা বেঁধেছে শরীরে। অর্থের অভাবে বিদ্যালয়টিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। একে একে চলে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।

বিজ্ঞাপন

গোপালগঞ্জের সেই জীবনসংগ্রামী রেখা রাণী ওঝার পাশে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সিএমপিতে এক অনুষ্ঠানে তার হাতে বিদ্যালয়ের জন্য পাঁচ লাখ টাকার অনুদান তুলে দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। এ ছাড়া অনাথ দুই শিক্ষার্থীর পড়ালেখারও দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বুরুয়া গ্রামে ‘কুমারী রেখা রাণী গার্লস হাইস্কুল’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্যালয় বাঁচাতে রেখা রাণীর সংগ্রামের কথা জেনে তার পাশে দাঁড়ায় পুনাক, সিএমপি।

বৃহস্পতিবার সিএমপির আয়োজনে উপস্থিত হয়ে নিজের জীবন সংগ্রামের কাহিনী তুলে ধরেন কুমারী রেখা রাণী ওঝা। জানালেন, ছাত্রাবস্থা থেকে তার সংগ্রামের শুরু। দুমুঠো ভাত আর পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্য গ্রামে মঞ্চে অভিনয় করেছেন, ওষুধের দোকান করেছেন। একসময় পড়ালেখা শেষ করে সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি পান। জীবনের বোঝা বয়ে নিতে গিয়ে সংসারিও হতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে রেখা রাণী ওঝার হাতে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়। ছবি: সারাবাংলা

নিজের কষ্টের অনুভব থেকেই অসহায় ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতেন। বুরুয়া গ্রামের গরীব পরিবারের ছেলেমেয়ের পড়ালেখার জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। অবসরের পর পেনশনের সব টাকা আর যাবতীয় সঞ্চয় নিয়ে নেমে পড়লেন সেই কমর্যজ্ঞে। জমি কিনলেন, বিদ্যালয় গড়লেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজেই পরিচালনা করে তিলে তিলে বিদ্যালয়টিকে এত দূর নিয়ে এসেছেন। কারও কাছে হাত পাতেননি।

কিন্তু সময়ের কাছে এখন অসহায় রেখা রাণী। ক্যানসার তাকে কাবু করে ফেলেছে। এমন কোনো অর্থবিত্ত, সঞ্চয় নেই যা দিয়ে নিজের চিকিৎসার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের কাজ স্বাভাবিক রাখতে পারবেন। শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছেন না। শিক্ষকরা একে একে বিদ্যালয় ছেড়ে যাচ্ছেন, যদি এমপিওভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা।

এ অবস্থায় পাঁচ লাখ টাকার অনুদান পেয়ে রেখা রাণী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে দুচোখ। পুনাক ও সিএমপিকে ধন্যবাদ জানান।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে কান্নাজড়িত কন্ঠে রেখা রাণী ওঝা বলেন, ‘আমার স্কুলে পড়ালেখা করে অনেকেই আজ উচ্চশিক্ষিত, বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত। আমি কারও কাছে হাত পাততে যাইনি। স্কুলটিকে এমপিওভুক্ত করার জন্য অনেক লড়াই করেছি। আর পারছি না। স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাবে কি না, এটাই এখন আমার একমাত্র দুশ্চিন্তা।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘আমরা একজন মহান নারীকে পেয়েছি, যিনি জীবনটা মানুষ গড়ার কাজে ব্যয় করছেন। আমরা চেষ্টা করছি এমন একটি সমাজ গড়ে তোলার যেখানে নারী ও পুরুষ সমাজে যার যার অবদান রাখার সুযোগ পায় এবং শৈশব থেকেই সমান সুযোগ পায়। রেখা রাণী এ মহৎ কাজটাই নিজের উদ্যোগে করে যাচ্ছেন। পুনাক অনেক ভালো কাজ করে। কিন্তু আজকের কাজটা অন্য কাজগুলোর চেয়ে ব্যতিক্রম। আমরা একজন মহান নারীর পাশে দাঁড়াতে পেরে গর্বিত। আশা করব, সরকারি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো স্কুলটিকে এমপিওভুক্ত করার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবে।’

পুনাক, সিএমপির সভানেত্রী রীতা দাসের সভাপতিত্বে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আ স ম মাহাতাব উদ্দিন ও মাসুদ আহাম্মদ, উপপুলিশ কমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারীশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন