বিজ্ঞাপন

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ, সংসদে ক্ষোভ জানালেন বিরোধীরা

June 23, 2024 | 10:58 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, এতে সৎ ট্যাক্স দাতারা মনঃক্ষুণ্ন হবেন এবং ট্যাক্স দিতে চাইবেন না। যা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৩ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ সব কথা বলেন তারা।

প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কোনো আশার বাণী নেই। বরং কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে নিয়মিত ট্যাক্স দাতাদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আর যারা কর দেননি তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বৈধ পথে সবাই ৩০-৩৫ শতাংশ ট্যাক্স দেন। যারা ট্যাক্স দেননি তারা ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে কালো টাকা সাদা করে ফেলবেন। তাহলে কেন সাধারণ মানুষ নিয়মিত ট্যাক্স দেবে? কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া অনৈতিক। এর ফলে বহু মানুষ ট্যাক্স না দিয়ে এই সুযোগ নেবে।’

বিজ্ঞাপন

মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির একটা বড় চালিকা শক্তি। প্রায় ১ কোটি মানুষ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠায়। তার মধ্যে মালয়েশিয়া নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে, তারা প্রতি মাসে ৪ হাজার কোটি টাকা, বছরে ৫১ হাজার কোটি পাঠান। অনেকে মনে করে এত টাকা কেন আসবে, এটি নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এ নিয়ে সিন্ডিকেট রয়েছে। ফলে রেমিট্যান্স পাঠাতে তাদের সমস্যাও হচ্ছে, সেখানে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।’ তাই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অর্থ পাঠানো সুবিধা দেওয়ার এবং ব্যাংকিংখাতে দেওয়া এবং ব্যাংকিংখাতে দুর্নীতি, অর্থ-পাচার ও ব্যাংক ডাকাতি বন্ধের দাবি জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাজেটে উচ্চবিত্তদের সুবিধা রাখা হয়েছে। আর মধ্যবিত্তরা চাপের মধ্যে পড়বেন। বাজেটের বিভিন্ন নীতি গরিবদের পক্ষে যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘সিগারেটের দাম তেমন না বাড়ানোয় সরকারের আয় কমে যাবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার সরকারের দায়িত্ব, কিন্তু সবখানেই দুর্নীতি, যদিও বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। মেগা প্রকল্প ঋণ নেওয়া হচ্ছে, তার বিশাল অংশ বাইরের ঠিকাদার ইঞ্জিনিয়াররা নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে তরুণ সমাজকে এ বিষয়ে দক্ষ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

কালো টাকা সাদা করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার সমালোচনা করে তিনি বলেন ‘এর ফলে সাধারণ করদাতারা কর দিতে চাইবে না। তাই ওই প্রম্তাব থেকে সরে আসতে হবে।’

দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, তাদের চিহ্নিত করে অর্থ ফেরৎ ও তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। তিনি সার্বভৌম এই পার্লামেন্টে কীভাবে কালো টাকা সাদা করা সুযোগ দেয় তার সমালোচনা করেন। তিনি অর্থ পাচার, দুর্নীতি, ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে না দেওয়াসহ অর্থ আত্মসাৎকারীদের চিহ্নিত ও শাস্তির দাবি করেন।

আরেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘সম্প্রতি সংকটগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে সলভেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বিধায় এই সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রাহকরা তাদের সব টাকা তুলে নিয়ে গেছে।’

এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী যে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সাদা করার কথা বলেছেন। তাতে উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে কেউ এ অপ্রদর্শিত টাকা প্রদর্শন করবে না, অতীতে ১০ শতাংশ ছিল তাতেও কিন্তু তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘যদি এটি ৫ শতাংশ ট্যাক্স করা যায় তাহলে দেশে যে বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত অর্থ আছে তা প্রদর্শন করবে, অর্থমন্ত্রীর যে উদ্দেশ্য তা সাধিত হবে। তাই বিপুল পরিমাণ টাকা সাদা করতে আমি ৫ শতাংশ ট্যাক্স ধার্য করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করব।’

তিনি বলেন, ‘দেশে উন্নয়ন দ্রুত গতিতে চলছে, কিন্তু তাতে সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতি বেড়ে গেছে এর লাগাম টানা যদি না যায় তাহলে উন্নয়নের গতি হ্রাস পাবে। আজকে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। ব্যাংকেও প্রচণ্ড অর্থ নয়ছয় হচ্ছে, দুর্নীতি বেড়ে গেছে, ব্যাংকের যে পদস্থ কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান তারাই আজ দুর্নীতে নিমজ্জিত। এদের কোনো বিচার হয়নি।’

আগামী অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিচ্ছে সরকার। কালো টাকা থাকা নাগরিকরা তাদের আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই তাদের অঘোষিত সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, দেশের প্রচলিত আইন যা-ই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা ফ্ল্যাট, জমির পাশাপাশি নগদ অর্থসহ স্থাবর সম্পত্তির জন্য ১৫ শতাংশ কর দিলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

আরও পড়ুন
অর্থনীতির মূলস্রোতে কালো টাকা
১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
অপ্রদর্শিত সম্পদ ও কালো টাকা বৈধ করার প্রসঙ্গ
‘ব্যবসায়ীদের দাবিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ’
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতি সহায়ক: টিআইবি

 

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন