বিজ্ঞাপন

ওয়ানডের পর টি-২০ বিশ্বকাপেও আফগান রূপকথা

June 25, 2024 | 12:40 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

নাভিন উল হকের বল মোস্তাফিজের ডিফেন্স ভেঙে লাগল প্যাডে। খালি চোখেই সেটা আউট, আম্পায়ারও তাই এক মুহূর্ত দেরি না করে তুললেন আঙ্গুল। নাভিন বনে গেলেন উসাইন বোল্ট, দিলেন ভৌ দৌড়। তার পেছনে দৌড়ালেন রশিদ খান, একটা সময় নাভিনকে ধরেও ফেলেন সবাই। ড্রেসিংরুমে আঙ্গুলের নখ কাটতে থাকা গুরবাজ তো কেঁদেই ফেললেন এই দৃশ্যে, আবেগ সামলে তিনিও যোগ দিলেন এই উল্লাসে। সুপার এইটের অবিশ্বাস্য এক ম্যাচে বাংলাদেশকে বৃষ্টি আইনে ৮ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল আফগানরা। অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠে গেলেন রশিদরা। বিশ্বকাপ সাক্ষী হলও আরেকটি আফগান রূপকথার।

বিজ্ঞাপন

টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরে বাছাইপর্বই পেরোতে পারেনি আফগানিস্তান। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপে খেলতে আসে আফগানরা। এই দুই আসরে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি তারা। টি-২০ বিশ্বকাপে আফগানদের প্রথম জয় আসে ২০১৪ সালে। হংকংকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় পায় তারা। ২০১৬ বিশ্বকাপে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে বাড়ে ম্যাচের সংখ্যা, বাড়ে আফগানদের জয়ও। সেবারও গ্রুপ পর্ব পেরোতে না পারলেও আফগানরা পায় ৪টি জয়। ২০২১ বিশ্বকাপে আসে ২ জয়। তবে সবশেষ ২০২২ বিশ্বকাপে কোন জয় না পেয়েই বাড়ি ফেরেন রশিদ খানরা।

টি-২০ বিশ্বকাপের হতাশা ভুলে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করে আফগানরা জানান দিয়েছিলেন, ভালো কিছু অপেক্ষা করছে এবারের আসরে। ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স করে আফগানিস্তান।

কিন্তু কে জানত মাত্র ৮ মাস পরেই নিজেদের ছাড়িয়ে যাবেন রশিদ-নবিরা? টি-২০ বিশ্বকাপের এবারের আসরের আগে সেমির প্রেডিকশনে এক ব্রায়ান লারা ছাড়া কোন রথি মহারথীরা আফগানকে সেরা চারে জায়গা দেননি। দেওয়ার সুযোগই বা ছিল কোথায়? ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ডের মাঝেই সেরা চার বেছে নেওয়াকেই বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন বাকিরা।

বিজ্ঞাপন

তবে সবাইকে ভুল প্রমাণ করে সেই আফগানিস্তানই দেখিয়েছে চমক। প্রথম ম্যাচে উগান্ডাকে উড়িয়ে দিয়ে যাত্রা শুরু। পরের ম্যাচে অন্যতম ফেভারিট নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে উড়তে থাকে আফগানরা। পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সুপার এইট নিশ্চিত করে তারা।

সুপার এইটে আফগানদের গ্রুপে ছিল ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ। শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি রশিদ খানদের। ভারতের কাছে হেরে খাদের কিনারায় চলে যায় তারা। এর পরেই আসে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচ। এই অস্ট্রেলিয়ার কাছে অবিশ্বাস্যভাবে হেরেই ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিতে খেলা হয়নি আফগানদের। অন্যতম ফেভারিট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই হারের প্রতিশোধ দারুণভাবেই নিয়েছেন নাভিন-রশিদরা। রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ে অজিদের হারিয়ে ইতিহাস গড়েন রশিদ খানরা। আফগানদের চোখে তখন প্রথমবারের মতো সেমিতে খেলার স্বপ্ন।

নিজেদের শেষ ম্যাচের আগে আফগানদের সামনে ছিল সহজ সমীকরণ। আগের রাতের ম্যাচে ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়া হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশকে যেকোনো ব্যবধানে হারালেই চলতো আফগানিস্তানের। তবে বাংলাদেশের সামনেও ছিল সেমিতে খেলার সম্ভাবনা। ছিল অস্ট্রেলিয়ার উতরে যাওয়ার সুযোগও। চরম নাটকীয় ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ১১৫ রানের পুঁজি নিয়েও জয় পায় আফগানিস্তান। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন বিশ্বকাপের আসরের সেমিতে পৌঁছে গেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

আফগানদের সামনে এখন নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। রশিদ খানরা কি পারবেন সেই ম্যাচেও অবিশ্বাস্য কিছু করে রূপকথার গল্পকে আরেকধাপ এগিয়ে নিতে?

সারাবাংলা/এফএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন