বিজ্ঞাপন

‘তিস্তা প্রকল্প ভারত করলে সব সমস্যারই সমাধান হয়’

June 25, 2024 | 3:45 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের তিস্তার পানির দাবিটা অনেকদিনের। এখন ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয়, তাহলে আমাদের সব সমস্যারই তো সমাধান হয়ে গেল। তো সেটাই আমার জন্য সহজ হয়ে গেল না?

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে গণভবনে সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন প্রথমে ভারত সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

আমাদের ৫৪টা নদীর পানি বণ্টনে ভারতের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ দিনের একটা সমস্যা রয়ে গেছে। এখানে শুধু ভারত না, তার ওপর চীনও কিন্তু পানি তুলে নেওয়ার একটা ঘটনা আছে বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, যেহেতু হিমালয় রেঞ্জের যে নদীগুলো চলে আসে; এই নদীগুলো নিয়েই কিন্তু নানাধরনের দ্বন্দ্ব আছে, সমস্যা আছে আবার সমাধানের পথও আছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা মনে করি যেহেতু তিস্তার পানি নিয়ে আমরা বারবার দাবি করছি। তিস্তা প্রজেক্ট যেটা আমরা নিয়েছি এই প্রজেক্টটা যদি আমরা করি। হ্যাঁ, আমাদেরকে চীন তারাও প্রস্তাব দিয়েছে ভারতও প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্যই আমি এটা বিবেচনা করবো কোন প্রস্তাবটা করলে পরে আমার দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে আমি সেটাই গ্রহণ করবো।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, কোন প্রস্তাবটা নিলে আমার ঋণ কতটুকু নিলাম, কতটুকু শোধ দিতে হবে দিতে কতটুকু পারবো এই সবকিছু বিবেচনা করেই তো আমাদের করতে হবে। এক্ষেত্রে ভারত যখন বলেছে তারা করতে চায় তারা টেকনিক্যাল গ্রুপ পাঠাবে অবশ্যই তারা আসবে। আমরা যৌথভাবে সেটা দেখবো। চীনও একটা ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে, ভারতও একটা করবে। আমরা আমাদের কাছে যেটা সবথেকে বেশি গ্রহণযোগ্য-লাভজনক; আমরা সেটাই করবো।

আর যেহেতু ভারতের সাথে আমাদের তিস্তার পানির দাবিটা অনেকদিনের। তো ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয় তবে আমাদের সব সমস্যাই তো সমাধান হয়ে গেল? সেটাই আমার জন্য বেশি সহজ হয়ে গেল না? আপনারা নিজেই বিবেচনা করে দেখেন? কাজেই ভারত যখন এগিয়ে আসছে আমরা এটাই মনে করি যে ভারতের সঙ্গে আমরা এই তিস্তা প্রজেক্টে করি সেটা আমার দেশের এই পানি নিয়ে আর প্রত্যেকদিন প্যাঁ প্যাঁ করতে হবে না। আমরা সেই সুবিধাটা পাবো। কাজেই এখানে তো কোনো সমস্যা দেখি না।

শেখ হাসিনা বলেন, ভারতে প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন আমাকে দাওয়াত দিলেন তার শপথ অনুষ্ঠানে আমরা গেলাম। তারপর তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে দাওয়াত দিলেন রাষ্ট্রীয় সফরও করে আসলাম। চীন আমাকে দাওয়াত দিয়েছে, আমি চীনে যাব। আমার বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে চলব। কার কী সমস্যা সেটা তাদের সঙ্গে থাক; আমার না। আমার দেশের মানুষের কতটুকু উন্নতি করতে পারি সেটাই আমার কাজ।

বিজ্ঞাপন

চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যে পররাষ্ট্র নীতিমালা দিয়ে গেছেন সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়; এই নীতি মেনেই আজকে আমি একটানা চতুর্থ বার আর আগে পাঁচ বছর; মোট পাঁচবার আমি রাষ্ট্র পরিচালনা করছি আবার একসময় বিরোধী দলে থেকে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে পার্লামেন্টে ছিলাম। আমি এই নীতিটা মেনেই কিন্তু চলে যাচ্ছি, এগিয়ে যাচ্ছি।

সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় বাংলাদেশ লাভবান হচ্ছে এবং দেশের উন্নয়ন হচ্ছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার কাছে এটাই সবথেকে বেশি গুরুত্ব আমার দেশের মানুষের কল্যাণে মানুষের উন্নয়নে এবং বিশেষ করে দেশটার উন্নয়ন করার জন্য যার সঙ্গে যতটুকু বন্ধুত্ব দরকার আমি সেটা করে যাচ্ছি।

ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের চরম দুঃসময়ের বন্ধু। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা কিন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রক্ত দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। কাজেই তাদের স্থানটা সবসময় আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আবার চীনের উন্নয়নটা; চীন যেভাবে নিজেদেরকে উন্নত করেছে সেখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। কাজেই সেইগুলি চিন্তায় রেখেই কিন্তু আমরা সেই সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি।

এখানে কেউ মনে করল যে এই দিকে ঝুঁকলাম; না ওইদিকে ঝুঁকলাম, ঝোঁকাঝুকির ব্যাপার কিন্তু আমার নেই। আমি কিন্তু সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এই নীতিতেই চলি। আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন, এমনকি বিদেশেও অনেকে বলেন; আপনি কিভাবে ব্যালেন্স করেন?

বিজ্ঞাপন

আমি বলি ব্যালেন্স করার কথা না। তাদের দুই দেশের মধ্যে কি সম্পর্ক সেটা তাদের ব্যাপার। আমি সেখানে নাক গলাই না। আমি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে আমার দেশের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে আমি কাজ করি এবং সেটা আমরা করে যাচ্ছি। কাজেই সেটা নিয়ে দুঃচিন্তার কিছু নেই।

তিনি বলেন, ভারতে আমি গিয়েছি। সেখানে আমাদের এতোগুলি প্রায় দশটার মতো সমঝোতা স্মারকএবং রিনিউ আমরা করলাম তারপর তিস্তা নিয়ে প্রস্তাব তো অনেক আসে। আমি এখানে একটা কথা আপনাদের ভালভাবে বলতে চাই,আপনারা নিশ্চয়ই এটা লক্ষ্য করেছেন যেখান থেকে যে প্রস্তাবই আসুক না কেন? সেই প্রস্তাবটা কতটুকু আমার দেশের জন্য প্রযোজ্য যে টাকাটা আমি ঋণ করবো, সেটা শোধ দেওয়ার মতো আমার সক্ষমতা আছে কি না? আর যে প্রজেক্ট আমি নিব সেই প্রজেক্ট সসম্পূর্ণ হবার পর তার রিটার্ন কি আসবে? সেখান থেকে আমার দেশের মানুষের কল্যাণে কতটুকু কাজে লাগবে? সেটা বিবেচনা করেই আমরা প্রত্যেকটা কাজ করে থাকি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সরকারের মন্ত্রীপরিষদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শুক্রবার (২১ জুন) বিকেলে দিল্লি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই দিনের সফর শেষে গত শনিবার (২২ জুন) রাতে দেশে ফেরেন তিনি।

লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর ভারতে কোনো সরকার প্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। এছাড়াও এই সফরটি ছিল ১৫ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের রাজধানীতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর, তিনি ৯ জুন মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট জনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০টি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে সাতটি নতুন এবং তিনটি নবায়ন করা হয়েছে।

সারাবাংলা/এনআর/এনইউ

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন