বিজ্ঞাপন

ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু, দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা

June 1, 2018 | 11:06 am

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঢাকা থেকে ঘরমুখো মানুষের জন্য ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে আজ শুক্রবার (১ জুন) সকাল ৮টায়। আজকের মতো টিকিট বিক্রি করা হবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। আগামীকাল শনিবার সকাল ৮টায় শুরু হবে দ্বিতীয় দিনের মতো টিকিট বিক্রি। এদিকে, শুরুতে সার্ভারের জটিলতার কারণে টিকিট বিক্রিতে ধীরগতি দেখা দিলেও পরে তা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে বিভাগ।

এদিকে, কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেতে বৃহস্পতিবার (৩১ মে) রাত থেকেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় করতে শুরু করেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। কাউন্টার খোলার আগে তা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হলেও টিকিট নিতে উপস্থিত ব্যক্তিরা বলছেন, বাড়ি যাওয়ার আনন্দের সঙ্গে তুলনা করলে এই কষ্ট ম্লান হয়ে যাবে। যারা টিকিট হাতে পাচ্ছেন, তাদের চোখেমুখে খুশির যে ছটা, সেটা তারই প্রমাণ।

টঙ্গীতে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এস এম শাহাদত। বাড়ী রাজশাহী। ১০ জুনের অগ্রিম টিকিট নিতে ভোর ৬টায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন কাউন্টারে। চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর সকাল ১০টায় টিকিট হাতে পান তিনি। তবে তার অভিযোগ, টিকিট বিক্রিতে একদিকে যেমন শৃঙ্খলার অভাব আছে, অন্যদিকে সঠিক দিকনির্দেশনাও নেই।

বিজ্ঞাপন

শাহাদত বলেন, ‘এখানে টিকিট বিক্রিতে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা নেই। আমি রাজশাহী যাব। আমাকে টিকিটের জন্য কোন কাউন্টারে যেতে হবে, কোন লাইনে দাঁড়াতে হবে, সে বিষয়ে কোনো ধরনের নির্দেশনার ব্যবস্থা নেই। এ কারণে আমার কাউন্টার খুঁজে পেতেই অনেক সময় লেগেছে। এসব বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে।’

সকাল ৯টার দিকে টিকিট হাতে পেয়েই সেই খবর মোবাইল ফোনে অন্যদের জানাতে ব্যস্ত এক তরুণকে। কথা বলে জানা গেল, নাম মিজানুর রহমান। বাড়ি সিরাগঞ্জের উল্লাপাড়া, ঢাকায় পড়ালেখা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষে। তিনি বলেন, ‘ঈদে তো বাড়ি যেতেই হবে। আর আমাদের জন্য ট্রেনই ভরসা। আজ প্রথম দিনে এসেই টিকিট পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। এ কয়েকদিন মনে হয়নি, কিন্তু টিকিট পাওয়ার পর থেকেই কেমন ঈদ ঈদ অনুভব হচ্ছে।’

অভিযোগ রয়েছে মিজানুর রহমানেরও। যাত্রীদের একেকজনকে ৪/৫ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট নিতে হলেও কালোবাজারে কিছু কিছু টিকিট ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানালেন তিনি। শুধু তাই নয় কমলাপুর রেল স্টেশনে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানো টোকাই শিশুদের হাতেও টিকিট দেখেছেন বলে জানান। এগুলো বন্ধ হলে সাধারণ মানুষের জন্য টিকিট পাওয়া সহজ হতো বলে মনে করেন মিজানুর।

বিজ্ঞাপন

টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আমরা এখনও এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে প্রতিটি লাইনে একজন করে পুলিশ দেবো।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা আছে বলে জানান তিনি।

প্রতিবছরের মতো এ বছরও টিকিটের চাহিদা বেশি দেখা গেছে উত্তরবঙ্গের রুটগুলোতে। বিশেষ করে রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর এলাকার টিকিটের জন্য অপেক্ষমান মানুষের সংখ্যা বেশি বলে দেখা গেল। রাজশাহী ও দিনাজপুর রুটের টিকিটের জন্য অপেক্ষাও করতে হচ্ছে বেশি সময়।

যাত্রীদের অভিযোগ, টিকিট দিতে দেরি করছেন কর্মকর্তারা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) টিকিট কম দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। টিকিট হাতে পাওয়া যাত্রীরাও বলছেন, কাউন্টারে প্রয়োজনের তুলনায় সময় নেওয়া হচ্ছে বেশি। কাউন্টারে আরো দক্ষ জনবল থাকলে আরো দ্রুত টিকিট বিক্রি সম্ভব। সে ক্ষেত্রে টিকিটপ্রত্যাশীদের অপেক্ষার সময়ও কমবে।

বিজ্ঞাপন

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুরুতে কিছুটা কারিগরি জটিলতা ছিল। সে কারণে সার্ভারে ধীরগতি ছিল। তাই টিকিট দিতে দেরি হচ্ছিল। তবে এখন আর এই সমস্যা নেই।’ তারা টিকিটপ্রত্যাশীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, আজ শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ১০ জুনের অগ্রিম টিকিট। আগামীকাল শনিবার (২ জুন) বিক্রি হবে ১১ জুনের টিকিট এবং পর্যায়ক্রমে ১২ জুনের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে রোববার (৩ জুন), ১৩ জুনের টিকিট দেওয়া হবে সোমবার (৪ জুন), ১৪ জুনের টিকিট দেওয়া হবে মঙ্গলবার (৫ জুন) এবং ১৫ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে বুধবার (৬ জুন)।

এ বছর ট্রেনের ঈদযাত্রার ২৩ হাজার ৫১৪টি টিকিটের মধ্যে কাউন্টারে বিক্রি হবে প্রায় ৬৫ ভাগ। বাকিগুলো কোটার মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া, যাত্রী পরিবহনের জন্য সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন দেওয়া হচ্ছে এই ঈদে।

সারাবাংলা/এমআইএস

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন