বিজ্ঞাপন

‘ছাত্রলীগের ফাঁদে পড়া’ ১৪৮ জনকে পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ

June 27, 2024 | 8:35 pm

কামরুল ফকির ও ইমরান চৌধুরী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চট্টগ্রাম ইসলামিয়া কলেজের ১৪৮ শিক্ষার্থীকে আগামী ৩০ জুন অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই ১৪৮ জনকে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষার প্রবেশপত্র সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিশেষ বার্তার (স্পেশাল মেসেঞ্জার) মাধ্যমে এই নির্দেশনা পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

১৪৮ শিক্ষার্থীর করা এক রিটের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিখিল কুমার বিশ্বাস ও কামরুল বিন আজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।

বিজ্ঞাপন

পরে আইনজীবী কামরুল বিন আজাদ জানান, চট্রগ্রামের ইসলামিয়া কলেজের এই ১৪৮ জন শিক্ষার্থী প্রত্যেকেই ফরম ফিলাপের টাকা জমা দিয়েছিলেন। তবে তাদের কিছু টাকা দেওয়া বাকি ছিল। পরে এই টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ বোর্ডের সঙ্গে যথাযথভাবে যোগাযোগ রক্ষা করেনি। পরে গত ১২ জুন কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৪৮ শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে বোর্ডকে একটি লিখিত আবেদন করে। এ ছাড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থী পৃথকভাবে আবেদন করেন যেন তাদেরকে ফরম ফিলাপের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু গত ২৩ জুন বোর্ড থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের ফরম ফিলাপের আর সুযোগ নেই। উপায় না পেয়ে গতকাল মিফতাহুল জান্নাত, হাবিব রাহাদ, সানজিদা আক্তার, ফাহিমাতুল কুবরাসহ ১৪৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন।

ছাত্রলীগের বাণিজ্যের ফাঁদে ১৪৮ এইচএসসি পরীক্ষার্থী

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এ পরিস্থিতির জন্য ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা কলেজ ছাত্র সংসদের নেতাদের দুষছেন। টাকা কমানোর সুযোগ নিতে ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে পরীক্ষার ফি জমা দিতে গিয়ে তারা পড়েছেন বিপাকে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ছাত্রলীগ নেতারা ফি বাবদ টাকা নিলেও সেটি কলেজে জমা দেননি।

বিজ্ঞাপন

গতকাল (বুধবার) সকাল থেকে নগরীর সদরঘাটে অবস্থিত ইসলামিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়া শুরু হয়। এ কলেজ থেকে এবছর এইচএসসি পরীক্ষার দেওয়ার কথা ২ হাজার ২৭১ জনের। বাকি সবাই প্রবেশপত্র পেলেও আসেনি ১৪৮ জনের।

জানা গেছে, বুধবার দুপুরে প্রবেশপত্র না পেয়ে পরীক্ষার্থীরা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে যান। তখন তারা জানতে পারেন, তাদের পরীক্ষার ফরম পূরণ হয়নি। এ সময় তাদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা অধ্যক্ষকে বারবার প্রবেশপত্র দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। অধ্যক্ষ তাদের শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।

ইসলামিয়া কলেজে ছাত্রলীগ নেতাদের ‘ফাঁদে’ পড়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরির অভিযোগ আগেও মিলেছে। জানা গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভর্তি, ক্লাশ ও পরীক্ষার ফি বাবদ টাকা কমানোর জন্য ছাত্র সংসদের দ্বারস্থ হন। ছাত্র সংসদের নেতারা এক থেকে দুই হাজার কিংবা তারও বেশি কমানোর আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাকি টাকা আদায় করেন। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আপসের মাধ্যমে তার চেয়েও কম টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করান কিংবা ক্লাশ ও পরীক্ষার ফি জমা দেন। আপসে যে টাকা কমাতে ছাত্রলীগ নেতারা সক্ষম হন, সেটাই তাদের পকেটে যায়।

প্রবেশপত্র না পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বেতনসহ পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য কলেজ থেকে তাদের প্রত্যেককে সাত হাজার টাকা করে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতারা সেটা কমিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা তাদের হাতে টাকা তুলে দেন।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এক বন্ধুর মাধ্যমে আরাফ নামে কলেজের এক বড় ভাইকে পাঁচ হাজার আটশ টাকা দিয়েছিলাম। সব মিলিয়ে আমার ফি এসেছিল সাত হাজার টাকার মতো। আমার বন্ধু আমাকে বলেছিল কলেজের সবাই এভাবে বড় ভাইদের দিয়ে ফি কমায়। আমিও সেজন্য দিয়েছিলাম। এখন কলেজে গিয়ে জানতে পারি আমাদের ফরম ফিলআপের কোনো টাকা জমা হয়নি। তাই আমাদের প্রবেশপত্র আসেনি।’

জানতে চাইলে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক আরাফ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে কেউ টাকা দেয়নি। যাদের প্রবেশপত্র আসেনি, তারা শনিবারের মধ্যে পেয়ে যাবে। কলেজের কিছু ঝামেলার কারণে তাদের প্রবেশপত্র আটকে গিয়েছিল। তাদের টাকা পরে জমা হয়েছে।’

ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাফি ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা কি অপরাধ? আমার মাধ্যমে যারা ফরম ফিলআপ করেছে, তাদের সবার প্রবেশপত্র চলে এসেছে। এখানে টাকা মেরে খাওয়ার কোনো প্রশ্ন আসে না। আমি গিয়ে অধ্যক্ষ স্যারকে অনুরোধ করেছি। তিনি ফি কমিয়েছেন। যাদের আসেনি কেন তারা পায়নি সেটার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাল জানবে।’

কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোহাম্মদ ইমতিয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাদের শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়েছে বলছে তারা কি কলেজ কর্তৃপক্ষ ? যদি না হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের টাকা দেবে কেন। আমি প্রতিদিন কলেজে আসি। এ ব্যাপারে কিছু শুনিনি। ছাত্রলীগের নাম সবাই ব্যবহার করে। অপকর্ম করে ছাত্রলীগের পরিচয় দেয়। যারা এগুলো করে তারা ছাত্রলীগের কেউ না। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় আমরা এ ব্যবস্থা নেব।’

জানতে চাইলে ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা মোরশেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারা ঠিক সময়ে এসে ফরম ফিলআপ করেনি, তাই প্রবেশপত্র পায়নি। আমি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে তাদের যাতে পরীক্ষা দিতে দেয়, সেজন্য অনুরোধ করেছিলাম। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’

পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। পরীক্ষার্থীরা টাকা দেবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। ছাত্রলীগের নেতারা টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইসলামিয়া কলেজের কিছু শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র পায়নি বলে আমরা শুনেছি। তারা ঠিকসময়ে ফরম ফিলআপের টাকা জমা দেয়নি, তাই প্রবেশপত্র পায়নি। তাদের কলেজের অধ্যক্ষ আমাদের কাছে এসেছিলেন। আমরা বিষয়টি দেখছি।’

সারাবাংলা/কেআইএফ-আইসি/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন