বিজ্ঞাপন

মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যে বাংলাদেশ মর্মাহত

June 27, 2024 | 9:01 pm

ড. অরুণ কুমার গোস্বামী

একটা চিঠি, অনেক প্রশ্ন। এই চিঠিতে যে বক্তব্য উঠে এসেছে তাতে বাংলাদেশ মর্মাহত! ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিখানা লিখেছেন মমতা ব্যানার্জি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। চিঠি লেখাতে কোনও দোষ নেই, যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানের নিকট একটি প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যে কোনও বিষয়ে চিঠি লিখতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের সাথে ভারতের অভিন্ন নদী গঙ্গা চুক্তি এবং তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে। গত ২২ জুন ২০২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই দিনের ভারত সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই গত সোমবার ২৪ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি চিঠি দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা এবং ফারাক্কার জলবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও রকম চুক্তিতে আমার তীব্র আপত্তি রয়েছে।’’

বিজ্ঞাপন

তবে বার্তা সংস্থা এএনআই কর্তৃক পরিবেশিত তথ্য অনুযায়ী মমতার এই অভিযোগ সত্য নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা দাবি করেছেন যে, গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি। বিভিন্ন সূত্রের দ্বারা পরিবেশিত তথ্য অনুযায়ী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাথে এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। দিল্লী সফর শেষে গণভবনে ২৫ জুন ২০২৪ তারিখ সকালে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি চিঠি লিখেছেন ওনার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমার তো কিছু বলার নেই। এ ব্যাপারে আমার কোনও নাক গলানোর দরকারও নেই। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো। একটা কথা বলতে পারি, ভারতের দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির ক্ষোভ, ওনার সঙ্গে আলোচনা করে এটা করা হয়নি। উনি তো ছিলেন না দিল্লিতে। আমি নিজেই ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু উনি ছিলেন না। উনি থাকলে নিশ্চয়ই ওনাকে নিয়েই আলোচনা করতাম। অন্তত আমি করতাম। আগে যে ফোন নম্বর ছিল (মমতার)…ওনার একটা মোবাইল নম্বর ছিল। নির্বাচনে যখন বিজয়ী হয়েছিলেন তখনও চেষ্টা করেছিলাম। তখন শুনেছিলাম এখন আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না (মমতা ব্যানার্জি)।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কথা হলো কাউকে বাদ দিয়ে হবে না। টেকনিক্যাল গ্রুপ আসবে। আলোচনা করবে। কথা বলবে। তারপর সমঝোতা হবে।’

এই প্রসঙ্গে, ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে একজন প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট মমতা ব্যানার্জির মুখ্যমন্ত্রীত্বাধীনের পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রকে জানায়, সেচ ও জলপথ বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে তারা কমিটিতে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেছেন। ২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ ও জলপথ বিভাগের যুগ্ম সচিব কেন্দ্রকে জানিয়ে দেন যে, আগামী ৩০ বছরে ফারাক্কা বাঁধের ডাউনস্ট্রিমের জন্য তাদের কী পরিমাণ অর্থ লাগবে। অপরদিকে, এই মমতাই আগে বিশেষত ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে পানি সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতার বাণী শুনিয়েছিলেন। মমতা ব্যানার্জির এই দ্বিচারিতা কেন? পানিবণ্টনের আলোচনা এমনিতেই দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া, মমতা ব্যানার্জির দ্বিচারিতা, তার এই চিঠি ও আপত্তি এটিকে আরও দীর্ঘ ও জটিল করে তুলল না কী?

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এই সংবাদ ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সাথে প্রকাশিত হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া সত্ত্বেও মমতা কেন এইরূপ মিথ্যাচার করছেন? ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে একজন প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছিল। যাতে রাজ্য সরকারের ওই প্রতিনিধিকে কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত পানি বিষয়ক একটি প্যানেলে রাখা যায়। এর উদ্দেশ্য ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ফারাক্কা চুক্তির ‘অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা’ করা। ‘অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা’ প্যানেলে প্রতিনিধি দেওয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেচ ও জলপথ দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে মনোনীত করার বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মমতার কথা, ‘তাদের না জানিয়ে ফারাক্কার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন হচ্ছে,’ ঠিক নয়।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও, শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে হয়নি। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না, যার বিরূপ প্রভাব পড়ে। অথচ ২০১১ সালের পর থেকে তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এমনকি নিয়ম না মেনে পানি সরাতে গত বছর উজানে আরও দুটি খাল খননের উদ্যোগ নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এবার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিরোধ এবং পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় রাজনীতির নানা বিষয় সামনে রেখে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রেও মমতা ঝামেলা বাধাতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সই হয়। এর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে। এ অবস্থায় ২০২৪ সালের জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ভারত সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে আলোচনা হয় তার। এরপরই মমতা বাংলাদেশের পক্ষে যায় এমন যেকোন ধরনের সমঝোতা করা হলে তার ঘোর আপত্তি থাকার কথা বলায় বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত মর্মাহত। বাংলাদেশের সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশবান্ধব একজন মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসা ছাড়া কী গঙ্গা চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তা পানি বন্টনের সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়? জ্যোতি বসু বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ববঙ্গে) জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলেই কি ১৯৯৬ সালে গঙ্গা পানি চুক্তি সম্ভব হয়েছিল? ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা-ফারাক্কা পানি চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব করে তোলার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বন্ধুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং এই চুক্তি নবায়ন ও তিস্তার পানিবন্টন সংক্রান্ত প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর “হুমকি”র পরিপ্রেক্ষিতে এইসব প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে!

১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বহু বছরের এই অমীমাংসিত বিষয়টি অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি হয়েছিল তাদের আমলেই। তবে অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ছিলেন বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল। সেইসময়, দীর্ঘ মেয়াদে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উভয় দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজনে এবং দুদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অন্যান্য নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যাপারে একমত হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার মধ্যে গঙ্গার পানি নিয়ে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে জন্মগ্রহণকারী পশ্চিবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তিনি এখন পরলোকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়াও এখন অশীতিপর। রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। তবে বাংলাদেশের নেতৃত্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাতে আছে। বর্তমান সময়ে দুই দেশের সরকারেরই দাবি, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের স্বর্ণযুগ চলছে এখন। এমন পরিস্থিতিতে পানি ভাগাভাগিসহ নানা ইস্যুতে মমতা ব্যানার্জির কারণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এর বড় দৃষ্টান্ত হলো, চূড়ান্ত হওয়ার পরও তিস্তার পানি ভাগাভাগির চুক্তি স্বাক্ষরে না হওয়া। আর গঙ্গা চুক্তি নবায়নের অবগত থাকা সত্ত্বেও তা অস্বীকার করা!

অথচ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে অমর একুশে অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে তিন দিনের সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকায় এসেছিলেন। সেবার গণভবনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর হাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একটি নৌকা তুলে দেন। শেখ হাসিনা এ সময় বলেন, ‘নৌকা যেন চলতে পারে, খেয়াল রাখবেন।’ জবাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘আপনি নিশ্চিত থাকুন। পানি যাতে যায়, সে জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখব। চিন্তা করবেন না।’ পানি নিয়ে কথা বলার সময় তখন স্বাভাবিকভাবেই এসে গিয়েছিল ইলিশের প্রসঙ্গ। কথা বলার একপর্যায়ে ইলিশ কম পাওয়ার অনুযোগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন, “পানি এলে ইলিশও যাবে।”

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরে তিস্তা চুক্তি সই হয়নি মমতার আপত্তিতে। পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তিতে সুরক্ষিত হয়নি, এ অভিযোগে শেষ মুহূর্তে মমতা চুক্তিতে সায় দেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়সহ এটি সকলেই জানেন যে ভারত ও বাংলাদেশকে সংযুক্ত করেছে ৫৪টি নদ-নদী। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট উপমহাদেশের বিভক্তি তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়া, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ প্রভৃতির ফলশ্রুতিতে নদ-নদীসহ অনেক কিছুতেই এখন ভাগাভাগির প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে! স্বাভাবিক নিয়মে বাংলাদেশ যেটুকু পানি পেতে পারে বাংলাদেশ তাই চায়, এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার নিজস্ব রাজনীতির স্বার্থে গঙ্গা পানি চুক্তি এবং তিস্তার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন, আবার কখনও বাংলাদেশ প্রীতির কথা বলছেন।

গঙ্গা পানি চুক্তি হওয়ার সময় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড়ার মনে কিন্তু এ ধরনের ছলচাতুরি ছিল না। এখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের সাথে পানি চুক্তির ও তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের মধ্যে দৃশ্যত পাকিস্তানী কায়দার কিছু চেতনা ক্রিয়াশীল আছে। তাই তিনি পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের দোহাই দিয়ে ভারত বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহের পথে ‘রাজনৈতিক বাঁধা’ সৃষ্টি করছেন।

বিজ্ঞাপন

ভারতের প্রেসক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ী ২০২৪ এর ২৩ মার্চ চ্যানেল ২৪ কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “তিস্তা চুক্তি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে হচ্ছে না। কিন্তু আমি জানি ভারত সরকার চান এই চুক্তি বাস্তবায়ন হোক। নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমাদের সময়ের মধ্যে এই চুক্তি সম্পাদিত হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন ভারতীয় হিসেবে মনে করি তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের নায্য দাবি। এটার সমাধান হওয়া উচিত। ৪০ বছর সময় লেগেছে স্থল সীমান্ত চুক্তি হতে। সে তুলনায় তিস্তা চুক্তির আলোচনা ২০১১ থেকে শুরু হয়েছে। তারপরও কখনও মনে হয় না খুব বেশি দেরি হবে।” গৌতম লাহিড়ী তখন বলেছিলেন, “ভারতের নির্বাচনের পর যদি দেখা যায় যে মমতা ব্যানার্জির পক্ষের কোনো সরকার গঠিত হলো না এবং তিনি যদি রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হলেন সে ক্ষেত্রে ভারত সরকারের পক্ষে এই চুক্তি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সুবিধা হবে।” লোকসভা নির্বাচনের আগে লাহিড়ী এই মন্তব্য করেছিলেন।

সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে পুনরায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করেছে, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের তৃণমূল কংগ্রেস দুর্বল হয়ে যায় নাই। যদিও এটি ছিল লোকসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচন ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের আচরণে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত বাংলাদেশের মানুষের একান্ত চাওয়া পশ্চিমবঙ্গের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ‘বাংলাদেশ বান্ধব’ কোন রাজনৈতিক দল পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় নির্বাচিত হয়ে অধিষ্ঠিত হোক। তবেই কেবল গঙ্গা চুক্তি, তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি সব বিষয়েই যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত সমাধান আসতে পারে।

লেখক: কলামিস্ট এবং পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, ঢাকা

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন