বিজ্ঞাপন

বাবুল হত্যায় উত্তপ্ত রাজশাহীর রাজনীতি, নেপথ্যে দলিল লেখক সমিতি

June 27, 2024 | 10:58 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাজশাহী: রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল। স্থানীয় নেকতাকর্মীদের সঙ্গে জানা যাচ্ছে, এই সংঘর্ষের সূত্রপাত দলিল লেখক সমিতি নিয়ে। একটি পক্ষ দলিল লেখকদের পক্ষ থাকলেও আরেকটি পক্ষ চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করে আসছিল। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভক্ত হয়ে যান। এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর রাজনীতি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকাল ১১টায় বাঘা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাবুলের জানাজা হয়। জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে। আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তার জানাজায় মানুষের ঢল নামে।

এর আগে বুধবার বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আশরাফুল ইসলাম বাবুলের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান। আঘাতের জায়গায় ইনফেকশনও হয়ে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন- হামলায় আহত বাঘা উপজেলা আ.লীগের সম্পাদক মারা গেছেন

বিজ্ঞাপন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, দলিল লেখক সমিতির কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। এর মধ্যে গত দুমাসে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। দলিল লেখকদের আগে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে কমিটি হতো। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে গঠিত হচ্ছে ‘পকেট কমিটি’। দলিল লেখকদের আরেকটি অংশ এই ‘পকেট কমিটি’ ও কমিটির নেতাদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল। সবশেষ গত শনিবার (২২ জুন) উপজেলা আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হন।

ওই দিন (২২ জুন) সকাল ১১টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা উপজেলা সদরে এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় একাধিক হাত বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। দলিল লেখকদের নতুন কমিটির পক্ষে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল।

নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০১৯ সাল থেকে নিজের অনুসারীদের দিয়ে দলিল লেখকদের কমিটি চালাচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত চারটি কমিটি তার অনুমোদন নিয়ে গঠিত হয়েছে। তার ঘনিষ্ঠ দলীয় পদধারী নেতারা এসব কমিটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সমিতির সাবেক সভাপতি জহুরুল হকসহ ৬৯ জন দলিল লেখক গত ১২ মে বর্তমান কমিটি বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, দলিল লেখকদের বাধ্য করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এতে জমি রেজিস্ট্রি কমে যাচ্ছে। সরকারও বিপুল পরিমাণের রাজস্ব হারাচ্ছে।

দলিল লেখকরা বলেন, গত ৭ জুন গঠন করে দেওয়া নতুন কমিটিতে সভাপতি হন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক পদ পান পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সামিউল আলম ওরফে নয়ন সরকার। এই কমিটি হওয়ার পর থেকেই দলিল লেখকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে ২০ জুন দলিল লেখক সমিতির কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন ও পৌর মেয়র আক্কাস আলীর অনুসারীরা। এরপর ২২ জুন আবারও পালটাপালটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

সমিতির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, অনির্বাচিত কমিটি অনেক দিন ধরেই জুলুম করে আসছে। তাদের কারণে কোণঠাসা সাধারণ মানুষ। এদের প্রতিহত করতে মাঠে নামেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও বাঘা পৌর মেয়র। বাঘার অনেকেই এই অতিরিক্ত টাকা দাবির কারণে জমি কেনাবেচা করেও দলিল করতে পারছেন না। একটি দলিল করতে বৈধ যে খরচ হওয়ার কথা, দলিল লেখক সমিতি তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ আদায় করছে।

বিজ্ঞাপন

তবে আগের কমিটিগুলোর ওপর এসব অভিযোগ চাপিয়ে দিয়েছেন দলিল লেখক সমিতির নতুন সভাপতি শাহিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আগের কমিটিগুলো দুর্নীতি করেছে। এ কারণেই নতুন কমিটি করে দিয়েছেন সংসদ সদস্য।’

শাহিনুরের দাবি, নিবন্ধন বাবদ জমির মূল্যের প্রতি এক লাখ টাকার বিপরীতে সমিতি পাঁচ হাজার টাকা নেয়। এর মধ্যে দলিল লেখক খরচও থাকে। অনেক সময় তদবিরে পাঁচ হাজার টাকার কমও নেওয়া হয়।

এদিকে বাবুল হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় নেতারা প্রকাশ্যেই একে-অন্যকে দায়ী করে চলেছেন। বাবুলের জানাজার সময় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাবুল হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত রাসিক (রাজশাহী সিটি করপোরেশন) মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন। তার সঙ্গে আছেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ ও লায়েব উদ্দিন লাবলু। খুনি আক্কাস ও মেরাজ। তাদের পেছনের মদতদাতা হিসেবে তারা আছে। মদতদাতা হিসেবে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আমার খুব স্নেহভাজন ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমি শোকাহত। আমিও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার হত্যার বিচার চাই।

তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে লিটন বলেন, ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাবুল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। শুধু তাই না, জানাজার নামাজে আমার নাম ও পদবী উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, যা খুব কষ্টকর। আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। কিন্তু কেউ কেউ আমাদের ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি করতে দিতে চায় না।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন