বিজ্ঞাপন

যুক্তরাজ্যে আগাম ভোটের বাকি ৫ দিন, প্রচার জমজমাট

June 28, 2024 | 9:58 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল আগামী বছরের জানুয়ারিতে। তবে প্রায় সাত মাস বাকি থাকতেই আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। আগামী ৪ জুলাই হবে সেই ভোট, যার বাকি রয়েছে আর মাত্র পাঁচ দিন। সাধারণ এই নির্বাচন সামনে রেখে এখন যুক্তরাজ্যের রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রার্থীরা সবাই ব্যস্ত নির্বাচনি প্রচারে।

বিজ্ঞাপন

আগামী জানুয়ারিতে পরবর্তী সাধারণ হওয়ার কথা থাকলেও অনেকে ধারণা করেছিলেন, অক্টোবরেও আগাম নির্বাচন হতে পারে যুক্তরাজ্যে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্র ঋষি সুনাক আরও তিন মাস এগিয়ে নিয়ে এসেছেন নির্বাচন, যার ডামাডোল এখন গোটা যুক্তরাজ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির এই নির্বাচন সামনে রেখে এক নিবন্ধে খুঁটিনাটি নানা বিষয় তুলে ধরেছে বিবিসি।

যুক্তরাজ্যের ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল কনজারভেটিভ পার্টি। দেশটি ৬৫০টি নির্বাচনি এলাকায় বিভক্ত। প্রতিটি নির্বাচনি এলাকার ভোটাররা একজন সংসদ সদস্য নির্বাচন করেন। তারা নিজ নিজ এলাকার হয়ে ‘হাউজ অব কমন্সে’ প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা রাজনৈতিক দলের প্রার্থী যেমন হতে পারেন, তেমনি স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেন।

কেন আগাম নির্বাচন

জনমত জরিপ অনুযায়ী, ২০২১ সালের তুলনায় ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা কমছে। সামনের দিনগুলোতে এই জনপ্রিয়তা আরও কমে যেতে পারে। সে কারণেই ক্ষমতাসীন দলটি নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন আয়োজন করছে।

বিজ্ঞাপন

বিবিসির পলিটিক্যাল এডিটর ক্রিস ম্যাসন বলছেন, দলের কিছু রাজনীতিবিদ মনে করেন যে চলমান পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে না। পাশাপাশি ভোটারদের মতপ্রকাশের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে নির্বাচন পিছিয়ে দিলে অবস্থানের আরও অবনতি হয়ে কনজারভেটিভ পার্টির পরাজয় আরও খারাপভাবে হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ পরিস্থিতি এমন যে এখনই নির্বাচন না করলে তা আরও খারাপ ফল নিয়ে আসতে পারে।

ক্রিস ম্যাসন আরও বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রী (ঋষি সুনাক) দেখাতে পারবেন যে তার কোনো একটি উদ্দেশ্য অন্তত পূরণ হয়েছে বা আপাতদৃষ্টিতে সেটা হওয়ার পথে। এর একটি হলো মুদ্রাস্ফীতি। সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপরই যে এটি নির্ভর করে, তা না। তারপরও মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকলে তার জন্য সরকারকেই দোষ দিয়ে থাকে সবাই। ফলে এখন যখন মুদ্রাস্ফীতি একটু কমতির দিকে, তখন ঋষি সুনাক সেটিকে নিজের সাফল্য হিসেবে প্রচার করতে পারবেন। এখন বৃহত্তর অর্থনৈতিক চিত্রও কিছুটা উজ্জ্বল বলে মনে হচ্ছে। একেও কনজারভেটিভ পার্টি কৃতিত্ব হিসেবে দেখাতে পারবে।

কোন দল কোথায় দাঁড়িয়ে?

সাম্প্রতিক জনমত জরিপ বলছে, নির্বাচনি প্রচারের শুরু থেকেই সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে। গত প্রায় এক বছর ধরেই চিত্রটি এমনই। জরিপ অনুযায়ী, লেবার পার্টি ধারাবাহিকভাবে ৪০ শতাংশের বেশি জনসমর্থন পেয়ে আসছে। তবে জরিপ যে সবসময় ধ্রুব সত্য, এমন নয়। ঋষি সুনাকেরও তাই ক্ষমতায় থাকাকালীন সাম্প্রতিক সাফল্য প্রচারের মাধ্যমে জনমত নিজের পক্ষে টানার সুযোগ থাকছে। ঋষি আশাবাদ জানিয়েছে, মুদ্রাস্ফীতির হারে কম রাখার মতো বিষয়গুলো ভোটের মাঠে তার ও দলের পক্ষে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিজ্ঞাপন

তা সত্ত্বেও লেবার পার্টি সম্ভবত এগিয়ে থেকেই ভোটের প্রচার শুরু করেছে। জরিপ অনুযায়ী, এখনো অভিবাসনবিরোধী ডানপন্থি দল রিফর্ম ইউকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। কিন্তু তাদের সমর্থন সারা দেশে সমানভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। ফলে সেই সমর্থনকে সংসদের আসনে পরিণত করা কঠিন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, একসময়কার তৃতীয় বৃহত্তম দল লিবারল ডেমোক্র্যাটস জরিপ অনুযায়ী প্রায় ১০ শতাংশ ভোট ধরে রেখেছে। নিজেদের টার্গেট করা আসনে মনোনিবেশ করে আসন্ন নির্বাচনে ভালো ফলের বিষয়ে আশাবাদী দলটি।

ঋষি সুনাকের ‘রুয়ান্ডা নীতি’র কী হবে?

যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনের আগেই কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঋষি সুনাক। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এই নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন তিনি। তার যুক্তি ছিল, এই নীতি বাস্তবায়ন করা গেলে তা ছোট ছোট নৌকায় চেপে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে ঢুকে পড়ার ঘটনাকে ঠেকাবে।

প্রত্যাশিত সময়ের আগেই সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করার পর সুনাক জানিয়েছেন, ৪ জুলাই ভোটে পুনর্নির্বাচিত হলে শুরু হবে এই প্রকল্প। অন্যদিকে লেবার পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে এই পরিকল্পনা বাতিল করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কাউকে রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে কি না, যদিও এরই মধ্যে ‘রুয়ান্ডা নীতি’র পেছনে ২৪ কোটি পাউন্ড (৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার) ব্যয় করা হয়েছে। ছয় সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচারে এই নীতিকে ঘিরে যুক্তরাজ্যের দুটি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে বিভাজন রেখা বেশ স্পষ্ট।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?

বর্তমানে যে দুই দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে তারা হলো ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও বিরোধী দল লেবার পার্টি। ৪৪ বছরের ঋষি সুনাক কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২২ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হন তখন তার বয়স ছিল ৪২ বছর। আধুনিক সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে কম বয়সের প্রধানমন্ত্রী তিনি। তার হাত ধরেই এই প্রথম কোনো ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

অন্যদিকে লেবার পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন স্যার কিয়ের স্টারমার। তার বয়স ৬১ বছর। ২০২০ সালে জেরেমি করবিনের পর দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে ‘ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস’-এর প্রধান ছিলেন স্টারমার। পাবলিক প্রসিকিউশনের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

নির্বাচনের আগে সংসদের চিত্র

নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য রাজাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি। আগামী বৃহস্পতিবার সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। এর ফলে পদমর্যাদা হারাবেন সংসদ সদস্যরা। ভোটের আগের এই সময়ে একটি প্রাক-নির্বাচনি সরকার ক্ষমতায় থাকে যুক্তরাজ্যের, যা ভোটের প্রচার চলাকালে মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম সীমিত করে দেয়।

এখন সংসদ সদস্য হিসেবে পদে থাকতে চাইলে আবার নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থী হিসাবে তাদের ভোটের প্রচার চালাতে হবে। শতাধিক সংসদ সদস্য অবশ্য এরই মধ্যে আগামী নির্বাচনে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন।

ভোটের ফল ঘোষণার পর কী হবে

ভোট গণনার পর যে দলের কাছে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সংসদ সদস্য থাকবে, সেই দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এবং সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানান রাজা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংসদ সদস্য থাকা দলের নেতাই হন সংসদে বিরোধী দলের নেতা।

যদি কোনো দলই সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে সেই দল নিজেদের সংসদ সদস্যদের ওপর নির্ভর করে আইন পাস করতে পারে না। এর ফলে ‘হ্যাং পার্লামেন্ট’ দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে বৃহত্তম দল অন্য দলের সঙ্গে মিলে জোট সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অথবা সংখ্যালঘু সরকার হিসেবেও কাজ করতে পারে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে কোনো আইন পাস করার সময় তাদের অন্য দলের ভোটের ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন