বিজ্ঞাপন

‘সরদার ফজলুল করিম মানুষের মাঝে বোধ সৃষ্টি করেছেন’

June 29, 2024 | 9:56 pm

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরদার ফজলুল করিম মানুষের মাঝে বোধের সৃষ্টি করেছেন। তিনি মনে করতেন, জীবনই মানুষের বড় শিক্ষাক্ষেত্র। আজকের তরুণদের অনেকেই সরদার ফজলুল করিমকে চেনেন না—এই দায় বুড়োদের।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে বাংলামোটরে অবস্থিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেনদিয়ার জাহিদ হাসান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মনীষী সরদার ফজলুল করিমের স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

মনীষী সরদার ফজলুল করিম পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সভায় তার জীবন, কর্ম ও চিন্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।

স্মরণসভার শুরুতে পাঁচজন তরুণ বক্তা সরদার ফজলুল করিমের বিভিন্ন সাহিত্যকর্মের উপর বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া, কবিতা আবৃত্তি করেন শাহাদাত হোসেন নিপু।

বিজ্ঞাপন

মূল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘তরুণরা যে সরদার ভাইয়ের বই পড়ে মতামত দিয়েছে, তাতে বোঝা যায় যে তারা একটা কিছু খুঁজছে। তবে যা খুঁজছে, তা এখনও পায়নি।’

তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন দেখতে হবে—এটি সরদার ভাইয়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। যদি আমরা স্বপ্ন না দেখি, সন্দেহ করি, কাউকে বিশ্বাস না করি, তবে আমরা নিঃশেষ হয়ে যাব। সরদার ভাইকে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্বপ্নকে আমরা ক্যাটাগরাইজড করে ফেলছি। কিন্তু, সামগ্রিকভাবে স্বপ্ন দেখতে হবে। ৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সরদার ভাইকে আমি বললাম, সমাজতন্ত্রের পতন হল! তিনি বললেন, হয় নাই। মার্ক্স বলেছেন, ক্যাপাসিটি অনুযায়ী কাজ করবে এবং সে অনুযায়ী পাবে। সেটি তো তুমি নিজের পরিবারেই দেখছো। সেটি তো আছেই।’

বিজ্ঞাপন

এম এম আকাশ বলেন, ‘অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন—সরদার ভাই পিএইচডি করতে বিলাতে গেলে ক্ষতি হতো না লাভ হতো? এই প্রশ্ন মূলত অবান্তর। সরদার ভাই পিএইচডি করে সেকেন্ড কার্ল মার্ক্স হয়ে চলমান সংকট সমাধানের পথ বাতলে দিতে পারতেন— প্রশ্নকারীরা এই ধরনের উত্তর আশা করছিলেন বোধহয়। তবে কথা হলো, মেহেনতি মানুষের মুক্তি মেহনতি মানুষেরই করতে হবে। মধ্যবিত্ত কেবল জ্ঞান দেবে। সরদার ভাই সেটি করেছিলেন।’

লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, ‘আমরা বেড়ে উঠার সময়ে সরদার স্যারের লেখা পড়েছি। পত্রপত্রিকার কলামে, বইয়ে। তাঁর লেখা পড়ে আমাদের মধ্যে বোধ তৈরি হয়েছে। এখন আমি হতাশ হয়ে তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা নেই দেখে। এখানে এসে যেন অক্সিজেন পেলাম। দেখলাম, তরুণরা সরদার ফজলুল করিমকে পড়ছেন।’

তিনি বলেন, ‘সরদার ফজলুল করিমের তৈরি করা বোধ দিয়ে আমি চলছি।আমি ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক করতে পারি।’

প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী আনিসুর রহমান বলেন, ‘সরদার স্যার মনে করতেন, জীবনই মানুষের বড় শিক্ষাক্ষেত্র। এখান থেকেই মানুষ সব শেখে। তিনি বস্তুবাদী মার্ক্সীয় দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে ভাববাদকেও এড়িয়ে যাননি। তিনি সুদীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন। তিনি বলতেন, সমাজে অসৎ মানুষ বাড়ছে জ্যামিতিক হারে; সৎ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে গাণিতিক হারে। সমাজে অন্যায়-অনাচার বেড়ে চলেছে। সমাজের এই সমস্যায় ঠিক কোথায় কুঠারাঘাত হানা জরুরি, সেটা তিনি তা দেখিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

নায়েমের উপপরিচালক অধ্যাপক স্বপন নাথ বলেন, ‘আমি সরদার ফজলুল করিম স্যারের সরাসরি শিক্ষার্থী না হলেও পরোক্ষ শিক্ষার্থী। সরদার ফজলুল করিম বহু কষ্টের ঘটনার সৃষ্টি হয়েছেন। এখন অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, সরদার ফজলুল করিম কে? এই প্রশ্ন শুনলে আমার গালি দিতে ইচ্ছে হয়। এখনও যদি কেউ যদি প্রশ্ন করে, সরদার কে?— তাহলে সে দোষটা বুড়োদের। তারা তরুণদের নিকট বার্তাটি ঠিকঠাক পৌঁছাতে পারেনি।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফাওজিয়া মুসলিম বলেন, ‘তরুণদের নিয়ে যখন হতাশার কথা বলি, তখনই তরুণরা আশার আলো নিয়ে সামনে আসেন। আজকে এখানেও তেমনটি দেখলাম। আমি দেখলাম, তরুণরা সরদার ফজলুল করিমকে পড়ছে, কথা বলছে।’

তিনি বলেন, এটা বাস্তব যে, সরদার ফজলুল করিম যেসময় জন্মেছিলেন, তখন ‘শান্তি চাই সাম্য চাই, অধিকার চাই’। আমরা এখন ক্ষমতা, অর্থ, প্রভাব চাই। তাই, চিন্তা-ভাবনার দিক থেকে দুটো সময়ের মাঝে পার্থক্য আছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে পাঠাগার আন্দোলন ভ্রূণ থেকে ধীরেধীতে বিকশিত হচ্ছে। আমি অনুরোধ করব, আপনারা তাদের সঙ্গে সংযুক্ত হোন। এখনও অনেকেই লাইব্রেরি যান। পড়েন। সেই জায়গায় আমাদের কাজ করা দরকার। আমার আরও একটি অনুরোধ হলো—সরদার ফজলুল করিমের জীবনী পুস্তিকা আকারে ছাপানো গেলে অনেকেই হয়তো তাকে নিয়ে জানতে পারবেন।’

সারাবাংলা/আরআইআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন