বিজ্ঞাপন

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েই সংসদে পাস হলো বাজেট

June 30, 2024 | 2:52 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ স্লোগান নিয়ে এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। দেশের ৫৩তম এই বাজেটের আকার বাড়ছে ৪.৬ শতাংশ। এই বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৈশ্বিক মন্দা সফলভাবে মোকাবিলা করে চলমান উন্নয়ন বজায় রাখা ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টাকার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিতে তা পাস হয়। আগামীকাল সোমবার নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে এই বাজেট কার্যকর হবে।

নতুন অর্থবছরে কালো টাকার মালিকরা আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়েই তাদের অঘোষিত সম্পদকে বৈধ করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী দেশের প্রচলিত আইন যাই থাকুক, কোন করদাতা ফ্ল্যাট, জমির পাশাপাশি নগদ অর্থসহ স্থাবর সম্পত্তির জন্য ১৫ শতাংশ কর দিলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোন প্রশ্ন তুলতে পারবে না। সংসদের ভেতরে বাইরে কঠোর সমালোচনা সত্ত্বেও প্রস্তাবটি বহাল রাখা হয়েছে।

এর আগে, গত ৬ জুন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সরকার ও বিরোধী দলের ২৩৪ জন সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা শেষে গত শনিবার অর্থবিল পাস হয়। রোববার সকালে বাজেট পাসের কার্যক্রম শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সরকার ও বিরোধী দলের অধিকাংশ সদস্যের উপস্থিতিতে বাজেটের ওপর ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়।

সরকার ও বিরোধী দলের হুইপের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী, তিনটি মঞ্জুরি দাবি (আইন, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়) আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। আলোচনা শেষে মঞ্জুরি দাবিগুলো কণ্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী সর্বোচ্চ ১২ লাখ ৪১ হাজার ৭৫২ কোটি ৩২ লাখ ০৯ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমোদন নিতে ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪’ পাশের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

এসময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদেরসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যরা টেবিল চাপড়ে বাজেট বাস্তবায়নের যাত্রাকে স্বাগত জানান।

বিজ্ঞাপন

এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও হামিদুল হক খন্দকার এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, মো. আবুল কালাম ও মো. নাসের শাহরিয়ায় জাহেদী। তবে ওই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

পাস হওয়া বাজেটটি দেশের ৫৩তম বাজেট ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৫তম ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেটের আকার বাড়ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

নতুন অর্থবছরে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বহাল থাকছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা কাটছাঁট করে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি বাতিল করতে হলে ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার সংশোধন করতে হবে। এরপরই এ ধরনের গাড়ি আমদানিতে কর আরোপ করা যাবে। কিন্তু এখনো সংসদে এ ধরনের কোনো বিল উত্থাপন হয়নি। ফলে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বহালই থাকছে। তবে আগামীতে এ সংক্রান্ত বিল পাসের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। ব্যাংকিং খাত ছাড়াও নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

এবারের বাজেটে পহেলা জুলাই থেকে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর-পরবর্তী পেনশন-সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকছে। স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের এই স্কিমের আওতায় আনা হয়েছে। অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য ২০২৫ সালের পহেলা জুলাই থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।

এই অর্থবছর থেকেই নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসর-পরবর্তী পেনশন সুবিধার পরিবর্তে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর করমুক্ত আয়কর সীমা বিদ্যমান সাড়ে তিন লাখ টাকাই বহাল থাকবে।

বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপণ্যের ওপর উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ভোজ্যতেল, লবণ ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সরবরাহকারীরা ঋণপত্রের ওপর কর হার এক শতাংশ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নির্দিষ্টকরণ বিলটি মূলত গ্রস বাজেট। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও অন্যান্য খাতে বাজেটে সরকারের অর্থ বরাদ্দের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই অর্থ কখনো ব্যয় হয় না, যা বাজেটের আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে হিসাব মেলানো হয়। এ বাধ্যবাধকতার কারণে এবারের বাজেটেও ৫ লাখ ৩২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা ব্যয় হবে না।

অর্থমন্ত্রী পহেলা জুন ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট উত্থাপন করেছেন, সেটাই ব্যয় হবে। সেটাই নতুন অর্থবছরের নিট বাজেট।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন