বিজ্ঞাপন

গণপূর্ত ভবনে ঢুকে ‘যুবলীগ কর্মীদের’ তাণ্ডব, আহত ২

June 30, 2024 | 7:29 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ের অভ্যন্তরে ঠিকাদার সমিতির অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় একজন ঠিকাদারসহ দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় এস এম পারভেজ নামে এক ‘যুবলীগ নেতা’র কয়েকজন অনুসারীকে শনাক্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩০ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর আগ্রাবাদে গণপূর্ত ভবনে হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপ কমিশনার (পশ্চিম) নিহাদ আদনান তাইয়ান।

হামলায় আহত ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলম (৩২) এবং সমিতির অফিসের এক কর্মচারিকে নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কথিত যুবলীগ নেতা এস এম পারভেজ (৩৬) নগরীর আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনির আবুল কাশেমের ছেলে। পারভেজ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চুর অনুসারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন।

বিজ্ঞাপন

উপ পুলিশ কমিশনার নিহাদ আদনান তাইয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণপূর্ত অফিসের কম্পাউন্ডের ভেতরে ঠিকাদার সমিতির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। একজন ঠিকাদার আহত হয়েছেন। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেছি। হামলাকারীদের কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এস এম পারভেজ নামে এক ব্যক্তি, সম্ভবত তিনিও একজন সাবেক ঠিকাদার, তার পক্ষের লোকজন হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।’

গণপূর্ত বিভাগ ঠিকাদার সমিতির নেতা হাসান মজুমদার শাকিল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঠিকাদার সমিতির অফিসে জাহাঙ্গীর বসা ছিলেন। একজন কর্মচারীও ছিলেন, আর কেউ ছিলেন না। দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্যে অতর্কিতে পারভেজের লোকজন ঢুকে হামলা শুরু করে। তারা সমিতির অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি জাহাঙ্গীরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। কর্মচারীকেও মারধর করে আহত করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পালিয়ে যায়।’

ঠিকাদার কাজী মাহমুদুল হাসান রনি সারাবাংলাকে জানান, এস এম পারভেজের অনুসারী সুমন ও জালালের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। মাসুম, তমাল, রিয়াজ, সায়েম, জিসানসহ আরও কয়েকজন হামলায় অংশ নেয়।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ হামলার কারণ জানতে চাইলে শাকিল বলেন, ‘২০২১ সালে আরও একবার গণপূর্ত ভবনে ঢুকে পারভেজ হামলা করেছিল। তখন ডবলমুরিং থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। এ ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে পারভেজ ও তার অনুসারীরা আর গণপূর্ত ভবনে আসতে পারেনি। তিন বছর পর আবার হামলা করে ভয়ের পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে পারভেজ ও তার অনুসারীরা গণপূর্ত ভবনে প্রবেশ করে ঠিকাদারি ব্যবসায়ী আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০২১ সালে গণপূর্ত ভবনের ঘটনার পর গত তিন বছর ধরে আমি সেখানে যাই না। আমি ঠিকাদারি ব্যবসাও করি না। কারা সেখানে হামলা করল, আমি কিছুই জানি না। আবার যাদের আমার অনুসারী বলা হচ্ছে, আমি তাদের কাউকে চিনতেও পারছি না। আমি শুনেছি, শাকিল ও রনি কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সাধারণ ঠিকাদারদের কাছ থেকে পাঁচ শতাংশ কমিশন অগ্রিম নিয়েছে। কিন্তু জুন মাস শেষ হয়ে যাবার পরও তাদের কাজ দিতে পারেনি। সাধারণ ঠিকাদাররা এর প্রতিবাদ করলে শাকিল ও রনির অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা করেছে।’

জানতে চাইলে হাসান মজুমদার শাকিল বলেন, ‘পারভেজ একজন টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে সাত-আটটি মামলা আছে, কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি জিডিও নেই। সে নিজেই গণপূর্ত ভবন থেকে বিতাড়িত। ঘটনার সময় আমি কিংবা রনি কেউই আমরা সেখানে ছিলাম না। ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে পারভেজ আবার গণপূর্ত অফিসে প্রবেশের চেষ্টা করছে।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে গণপূর্ত বিভাগ-২ এর তখনকার নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান ইবনে কামালের কক্ষে দলবল নিয়ে প্রবেশ করে এস এম পারভেজ তাণ্ডব চালান। ওই কক্ষে আরও বসা ছিলেন ঠিকাদার ঢাকার মেসার্স আনাস ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের মালিক সৈয়দ খলিলুর রহমান এবং তখনকার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী চৌধুরী রায়হান ইবনে সুলতান।

পারভেজ ও তার অনুসারীরা কক্ষে ঢুকে ঠিকাদার সৈয়দ খলিলুর রহমানকে মারধর শুরু করেন। প্রকৌশলী চৌধুরী রায়হান ইবনে সুলতান তাকে রক্ষার চেষ্টা করলে পারভেজ তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ ঘটনায় নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান ইবনে কামালের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে পারভেজকে গ্রেফতার করেছিল।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন