বিজ্ঞাপন

রাঙ্গামাটি ছাত্রলীগ: ৬২ জনের কমিটিতে ৪০ সহসভাপতি, বিবাহিতরাও পদে

June 30, 2024 | 11:49 pm

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: ২০১৫ সালে এক বছরের জন্য গঠিত হলেও রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সেই কমিটি ভেঙেছে ৯ বছরে এসে। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার দুমাস পর আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নতুন কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন মো. রনি হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সোহাগ চাকমা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৯ জুন) রাতে ঘোষণা করা ৬২ জনের আংশিক কমিটিতে সহসভাপতিই রয়েছেন ৪০ জন! এর সঙ্গে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে ১০ জন করে ২০ জনকে। আংশিক এই কমিটিতে একদিকে যেমন ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে, তেমনি অভিযোগ উঠেছে কমিটিতে বিবাহিতদের রাখারও।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক বছর মেয়াদি জেলা সংসদের পূর্ণ কমিটি হবে ১৫১ সদস্যের। সেই কমিটিতে সহসভাপতি পদে ২১ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৯ জন করে রাখার সুযোগ রয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটিতে সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের তিন পদের কোনোটিতেই মানা হয়নি গঠনতন্ত্র।

আরও পড়ুন- রাঙ্গামাটি ছাত্রলীগ: ৯ বছর পর সম্মেলন, শুরু করতেই ৩ ঘণ্টা দেরি

বিজ্ঞাপন

একই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে, নতুন কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবী ও নানা প্রসঙ্গে বিতর্কিতরাও। মানা হয়নি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সসীমা। পদ বণ্টনেও ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ দেখা হয়নি।

সদ্যবিগত কমিটির সহসম্পাদক ফাতেমা তুজ জোহরা রেশমী নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন। গঠনতন্ত্রের নানা ব্যত্যয়ের অভিযোগ তুলে রেশমী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ছাত্রলীগের এই কমিটি জেলা আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধানে করা হয়নি। দীর্ঘ ৯ বছর পর সম্মেলন হলো, সেই সম্মেলনের দুই মাস পর কমিটি এলো। আবার সেই কমিটিতে ছাত্রদল থেকে আসা নেতা প্রথম সহসভাপতি হয়েছেন!’

কমিটির সভাপতিকে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রেশমী। বলেন, ‘চাকরিজীবী সভাপতি হয়েছেন। সভাপতির নিজের ছাত্রত্ব নেই। অছাত্র-বিবাহিতরাও পদ পেয়েছেন। বাদ পড়েনি বয়সসীমা পেরুনো নেতারাও। আবার কম বয়সী নেতাকর্মীকে আংশিক কমিটির নামে ৬২ জনের কমিটিতে রাখা হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে এটি একটি হাস্যকর ও অগঠনতান্ত্রিক কমিটি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি ভাঙছে ৯ বছর পর!

জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সহসম্পাদক আনোয়ার হোসেন কায়সার ছিলেন নতুন কমিটির সভাপতি পদপ্রত্যাশী। কায়সারের অভিযোগ, ‘৯ বছর পর রাঙ্গামাটি ছাত্রলীগের কমিটি হলো, কিন্তু সেখানে আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি হলো না। একজন চাকরিজীবী হয়েছেন সভাপতি। অনেক জুনিয়র ও অছাত্ররা পদে এসেছে।’

তবে নতুন কমিটির সভাপতি মো. রনি হোসেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ও সাধারণ সম্পাদক সোহাগ চাকমা চট্টগ্রাম সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী বলে দাবি করেছেন। কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে সদুত্তর পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে।

রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক সোহাগ চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীর যে সম্প্রীতি, সেটা সমুন্নত রেখে সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করে যাব। জেলা ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের যে ভিশন, সেটি বাস্তবায়নে স্মার্ট ছাত্র সংগঠন হিসেবে আমরা কাজ করে যাব।’

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে নতুন সভাপতি মো. রনি হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সাবেক যারা ছিলেন, তাদের অভিনন্দন ও দোয়া প্রত্যাশা করি। তাদের রেখে যাওয়া ছাত্রলীগের ধারাবাহিকতা যেন আমরা রক্ষা করতে পারি। কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদকের নির্দেশে ঢালাওভাবে বা গতানুগতিক রাজনীতি না করে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রগতিশীল রাজনীতির বার্তা রাঙ্গামাটির প্রত্যন্ত জায়গায় পৌঁছে দেবো। জননেতা দীপংকর তালুকদার ও হাজী মুছা মাতব্বরের হাতকে শক্তিশালী করতে সর্বাত্মক প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক চর্চা পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় আমরা পৌঁছে দেবো।’

নতুন কমিটিতে ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ পদবণ্টনের আপত্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রনি বলেন, ‘নতুন কমিটি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এমন বিষয়গুলো দেখব।’

এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলার প্রায় সব ইউনিটের নেতাকর্মীরা যথাসময়ে উপস্থিত হলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দেরিতে উপস্থিত হওয়ায় সম্মেলন উদ্বোধন হয় তিন ঘণ্টা দেরিতে। তবে দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার কমতি ছিল না। নতুন কমিটিতে আসন পেতে নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন ৭২ জন।

এর আগে ২০১৫ সালের ২ জুন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন হয়। পরদিন ৩ জুন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর আব্দুল জব্বার সুজনকে সভাপতি ও প্রকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের ছয় সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এক বছরের জন্য। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও কমিটির ঘোষণার আড়াই বছর ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি ১৫১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। অর্থাৎ মেয়াদ শেষের দেড় বছর পর করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন