বিজ্ঞাপন

তীব্র তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গায় ১৪৪০ কোটি টাকা ক্ষতির ধাক্কা

July 3, 2024 | 10:08 am

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

চুয়াডাঙ্গা: এ বছর এপ্রিল মাসজুড়েই বয়ে গেছে তাপপ্রবাহ। বিশেষ করে এই তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছিল দক্ষিণপশ্চিমে। এর মধ্যেও যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও খুলনায় তাপপ্রবাহের প্রভাব ছিল বেশি, যা অব্যাহত ছিল মে মাসেও। তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়েছে এসব এলাকার জনজীবন। তীব্র তাপপ্রবাহের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব এলাকার কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত থেকে শুরু করে পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা। এক সমীক্ষার প্রতিবেদন বলছে, শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই এসব খাতে তাপপ্রবাহের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৪৪০ কোটি ৫০ লাখ ৪৮৪ টাকা।

বিজ্ঞাপন

বেসরকারি সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন এই সমীক্ষা চালিয়েছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার ১০ উপজেলায়। চুয়াডাঙ্গার সদর, দামুড়হুদা, জীবননগর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা; মেহেরপুরের সদর ও গাংনী উপজেলা; ঝিনাইদহের সদর ও মহেশপুর উপজেলা; এবং কুষ্টিয়া সদর ও কুমারখালী উপজেলায় চালানো এ সমীক্ষায় উঠে এসেছে, চার জেলায় তাপপ্রবাহের প্রভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

‘ওয়েভ ফাউন্ডেশনে’র প্রধান গবেষক ড. মোহা. হাসান আলী বলেন, চুয়াডাঙ্গায় চলতি বছর যে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, তা বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলেছে। এসব প্রভাব মোকাবিলার কৌশল কী হতে পারে, সে উদ্দেশেই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়।

সমীক্ষায় বলা হয়, এ অঞ্চলে বিস্তৃত সমভূমি। এসব জেলাগুলোর পাশেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং পৃথিবীর উষ্ণতম মুর্শিদাবাদ জেলা। জেলায় জলাশয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তাপমাত্রা শোষণ হচ্ছে না। ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প এ অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে বলে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অন্য এলাকার তুলনায় এ এলাকায় বেশি থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এপ্রিল মাসে বৃষ্টি না হওয়ায় এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ছে। পুকুর-খাল-বিল ও জলাশয় অপরিকল্পিতভাবে ভরাট ও দখলও তাপমাত্রাকে অসহনীয় করে তুলেছে।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া কর্কটক্রান্তি রেখার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এ অঞ্চলে তীব্র সূর্যকিরণ পড়ে উল্লেখ করে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ব্যাপক হারে বৃক্ষনিধন ও কাঠপোড়ানো তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় রয়েছে ৮৬টি ইটভাটা। এ ইটভাটাগুলোতে এক লাখ তিন হাজার ২০০ মেট্রিক টন কাঠ পোড়ানো হয়। শহরায়নের কারণেও সবুজায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে।

কৃষি খাতে ক্ষতি

জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি খাত। নষ্ট হয়ে গেছে কলা, পান, পটল, লাউ, বেগুন, ঢেঁড়স, ঝিঙা, করলা চিচিংগা, কচু, চালকুমড়াসহ অন্যান্য সবজি। শাক ও বাদামজাতীয় ফসলও রোদে পুড়ে নষ্ট হয়েছে। পেঁপে, মাল্টা, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের চারা মরে গেছে। আম, কমলা ও মাল্টার গুটি ঝরে গেছে, পচে গেছে ড্রাগন ফলের ফুল। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ধান-ভুট্টার ফলনও কম হয়েছে। বিভিন্ন গাছের ফুল নষ্ট হওয়ায় ফল ধরলেও আম, কাঁঠাল ও লিচুর আকার তুলনামূলকভাবে ছোট হয়েছে। ফল পরিপক্ক হওয়ার আগেই তা পেকে গেছে।

সমীক্ষায় উঠে এসেছে তাপপ্রবাহে বৃষ্টি না হওয়ায় বোরো ধানে বাড়তি সেচ দিতে হয়েছে। এতে জেলায় বিঘা প্রতি গড়ে আড়াই হাজার টাকা বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। বোরো ধান বিঘা প্রতি দুই মন ফলন কমও হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ মৌসুমে দুই লাখ ১৯ হাজার ৭৯৬ মেট্রিক টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৯৮ হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন। উৎপাদনের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

জেলায় ধান থেকে শুরু করে ফল-সবজি সবকিছুর আবাদেই পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। ছবি: সারাবাংলা

এদিকে এ মৌসুমে জেলায় ভুট্টার ফলন প্রতি বিঘায় ছয় মণ কম হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৪৯ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় লাখ ৮২ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৯ হাজার ৩৯ মেট্রিক টন তথা ১৩ শতাংশ কম। ড্রাগন ফলও প্রতি বিঘায় ৫০০ কেজি উৎপাদন কম হয়েছে।

সমীক্ষার তথ্য বলছে, চুয়াডাঙ্গা কেবল এ মৌসুমে ৩৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৬৬ কোটি ৭০ লাখ ৭১ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে ধানের দানা পুষ্ট না হওয়ায় এবং সময়ের আগেই পেকে যাওয়ার ফলে বিঘা প্রতি দুই মন ফলন কম হওয়ায় গড়ে দুই হাজার টাকা আয় কমেছে। এর ফলে উৎপাদন কম হওয়ায় আয় কম হবে ৫৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা। এ কারণে বোরো মৌসুমে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১২০ কোটি সাত লাখ ২৭ হাজার ৮০০ টাকা।

জেলায় মোট ৮৯ হাজার ৩৯ মেট্রিক টন ফসল-সবজি উৎপাদন কম হওয়ায় কৃষকদের ২২২ কোটি ৫৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয় কম হয়েছে। পাশাপাশি জেলা এক হাজার ৯৯৫ বিঘা জমিতে আট হাজার ১০ মেট্রিক টন ড্রাগন ফল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ থাকলেও উৎপাদন কমে হয়েছে ৯৯৮ মেট্রিক টন। ফলে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

তবে তীব্র তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গার কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির এই পরিমাণ মানতে নারাজ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ তেমন নয়। যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। বোরো ধানের ফলন বিপর্যয় হয়নি, বরং এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া শাক-সবজি ফলমূল ফলনে তেমন প্রভাব পড়েনি।’

বিজ্ঞাপন

তাপপ্রবাহের কারণে ফলন হয়েছে কম। উলটো সেচ দিতে গিয়ে খরচ হয়েছে বাড়তি। ছবি: সারাবাংলা

মৎস্য খাতে তাপপ্রবাহের প্রভাব

তাপপ্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চুয়াডাঙ্গার মৎস্য খাতও। জেলায় বার্ষিক মাছ উৎপাদন হয় ২৩ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন। তবে মাছের চাহিদা রয়েছে ২৫ হাজার ২৪৫ মেট্রিক টন। সে হিসাবে জেলায় বছরে মাছের ঘাটতি এক হাজার ৫১৫ মেট্রিক টন। এবার তীব্র তাপপ্রবাহে অধিকাংশ খাল-বিল ও পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায়মাছের গড়ন পর্যাপ্ত হওয়ার আগেই মাছ তুলে ফেলা হয়েছে। এতে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

অন্যদিকে তাপপ্রবাহের কারণে পানি অতিরিক্ত গরম হওয়ায় রেণু পোনার মৃত্যুহার বেড়েছে। রেণু পোনা উৎপাদন ৫০ শতাংশ নেমে এসেছে এবং জলাশয় পানির অভাবে ৫০ শতাংশ শুকিয়ে গেছে। এতে চাষিরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সব মিলিয়ে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন কম মাছ উৎপাদন হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৯৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

মৎস্য খাতে ক্ষতি প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল বলেন, ‘তাপপ্রবাহে মৎস্য উৎপাদনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা ব্যাহত হবে। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ও মাছ চাষিদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের মাধ্যমে মাছ চাষ কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বৃষ্টিপাত এ বছর দেরিতে আসছে। বৃষ্টি বাড়লেই মাছ চাষিদের পোনা ও মাছ উৎপাদনের জন্য কারিগরি সহায়তা দেবো। আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে মাছ উৎপাদনে সহায়তা করব।’

ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণিসম্পদ খাতও

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রাণিসম্পদ খাতও। গবাদি পশুর অন্যতম খাদ্য ঘাস মরে গেছে, ঘাসের বৃদ্ধিও হয়েছে কম। এতে পশু খাদ্যের সংকট দেখা দেয় জেলায়। তাপপ্রবাহের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে ঘাস তাজা রাখতে জমিতে বেশি সময় সেচ দিতে হয়েছে। ফলে ঘাস উৎপাদনের খরচও বেড়ে গেছে।

তীব্র তাপপ্রবাহের মাস এপ্রিলে চুয়াডাঙ্গা জেলায় কেবল দুধ উৎপাদন এক হাজার ৮৩৮ মেট্রিক টন কম হয়েছে। এ কারণে খামারিদের ১১ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আর কেবল এপ্রিলে মাংস উৎপাদন কমে গেছে এক হাজার ২২৫ মেট্রিক টন বা ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

তাপপ্রবাহের প্রভাবে জেলায় প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে মাছের উৎপাদন। ছবি: সারাবাংলা

এপ্রিল মাসেই ডিম উৎপাদন কমেছে প্রায় ৪৫ লাখ বা ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে খামারিদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। মোট মুনাফাও কম হয়েছে। মাংস উৎপাদন কম হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা জেলার খামারিদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮১ কোটি ৭০ লাখ ৭৫ হাজার টাকার। ডিম উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকায়। সর্বোপরি চুয়াডাঙ্গা জেলায় তীব্র তাপপ্রদাহের কারণে প্রাণিসম্পদ খাতে খামারিদের ৯৬ কোটি ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ক্ষতি প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপপরিচালক আ হা ম শামিমুজ্জামান বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এ খাতে যেন ক্ষতি না হয় সে কারণে জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা ক্ষতিরোধ করার ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ কাজে লগিয়েছেন। পোলট্রি খাতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি ছিল। সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালচ্ছি আমরা।’

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশ, উজাড় হয়েছে বন

তীব্র তাপপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে অনাবৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গায় খরা দেখা দেয়। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে ফসল উৎপাদনে। একদিকে দেখা দিয়েছে ফলন বিপর্যয়, অন্যদিকে সেচ, শ্রমিক ও কীটনাশকের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ফসলের উৎপাদন খরচ। বোরো ধান থেকে শুরু করে ফল, সবজিতেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। অতি খরা, অতি উচ্চ তাপমাত্রার কারণে জেলায় সব মিলিয়ে ফসলের উৎপাদন কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।

তীব্র তাপমাত্রায় পানিরও তীব্র সংকট দেখা দেয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের অধিকাংশ গ্রামে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না, অর্ধেকের বেশি নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে।

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও কেটে ফেলা হয়েছে গাছ, উজাড় করা হয়েছে বনভূমি। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ ছিল না প্রশাসনের। ছবি: সারাবাংলা

এদিকে গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১২৫ হেক্টর জমিতে বনভুমি ছিল। এর মধ্যে ১ হেক্টরের বেশি বনভূমি ২০২৩ সালের মধ্যে গাছহারা হয়ে যায়। গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের ডিজিটাল অ্যালার্ট সিস্টেম বলছে, তাপপ্রবাহ চলাকালীন ২৮ এপ্রিল থেকে ৫ মের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৭৬টি বন উজাড় হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জীবন-জীবিকায় টান

টানা তীব্র তাপপ্রবাহের ব্যাপক প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনযাপনে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বের হয়নি ঘর থেকে। দোকানপাট বন্ধ থেকেছে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সময়। রাস্তার পিচ গলে যানবাহন চলাচল পর্যন্ত ব্যাহত হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদনশীলতায় ধস নামে।

তীব্র তাপমাত্রায় শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে না পেরে দৈনিন্দন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেয়েছেন। কর্মঘণ্টার পাশাপাশি তাদের আয়ও কমে যায় অর্ধেকে নেমে আসে। যাত্রী না পাওয়ায় ভ্যান ও ইজিবাইকের আয় কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়ায় নিত্যপণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। এতে বেচাকেনা কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

সামাজিক জীবনযাপনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তাপপ্রবাহ। বিয়ে-খতনাসহ অনেক অনুষ্ঠানই নির্ধারিত দিন-তারিখে হতে পারেনি। তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় বিয়ে ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষাতেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

সমীক্ষায় ক্রমবর্ধমান তাপপ্রবাহ পরিস্থিতিতে পাঁচটি খাতে অংশ নেওয়া মানুষের মূল্যায়নের নিরিখে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি নিরূপণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন।

সারাবাংলা/এমও/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন