বিজ্ঞাপন

চাকরি দেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি

July 3, 2024 | 9:00 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বগুড়া: লিবিয়ার হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পৌর এলাকার দুই ভাইকে দেশটিতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন ও জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের স্বজনদের মামলার সূত্র ধরে মুক্তিপণ আদায় চক্রের দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে দুই ভাইকেও লিবিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) স্নিগ্ধ আক্তার প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। উদ্ধার হওয়া দুই ভাই মো. পাপ্পু খন্দকার (২৭) ও সাঈদ খন্দকার (২৪) দুপচাঁচিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা। আর গ্রেফতার দুজন হলেন— উজ্জল হোসেন (৩৫) ও মো. সফাত মন্ডল (৩২)।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া পৌর এলাকার মো. রাব্বি খন্দকার থানায় মামলা করেছিলেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, রাব্বির দুই ছোট ভাই পাপ্পু খন্দকার ও সাঈদ খন্দকার। তাদের বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা চলছিল। এর মধ্যে দুঃসম্পর্কের আত্মীয় উজ্জল হোসেন জানান, তার ভাই সাব্বির হোসেন লিবিয়া থাকেন। ১১ লাখ টাকা দিলে দুই ভাইকে সেখানে নিয়ে হাসপাতালে চাকরি দেওয়া হবে। পরে গত বছরের ২৫ নভেম্বর ও ৬ ডিসেম্বর দুই ধাপে দুপচাঁচিয়া থানা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় উজ্জলের অফিসে ১১ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, পরে ১২ ডিসেম্বর পাপ্পু খন্দাকার ও ও ১৭ জানুয়ারি সাঈদ খন্দকারকে লিবিয়া পাঠানো হয়। তবে সেখানে চাকরি না দিয়ে তাদের বসিয়ে রাখা হয়। একপর্যায়ে প্রধান আসামি উজ্জলের প্ররোচনায় আরেক আসামি মো. সাব্বির হোসেনসহ অজ্ঞাত আট-দশজন মিলে পাপ্পু খন্দকারকে ২৫ মার্চ লিবিয়ার ত্রিপোলি মদিনা শহরে ও সাঈদ খন্দকারকে লিবিয়ার আজদাবিয়া জামা সোনা কিয়া শহরে নিয়ে আটক রাখেন। দুই ভাইয়ের মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন সাব্বির। মুক্তিপণের টাকা না দিলে দুই ভাইকে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রতারক চক্রকে গ্রেফতারের বিষয়ে মঙ্গলবার ব্রিফ করে পুলিশ। ছবি: সারাবাংলা

এ ঘটনায় দুপচাঁচিয়া থানায় মামলা হলে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি উজ্জল হোসেন ও সফাত মন্ডলকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লিবিয়া থেকে কৌশলে অপহৃত সাঈদকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। ওই সময় পাপ্পুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পাপ্পু খন্দকারের মুক্তিপণ হিসেবেও চার লাখ টাকা দাবি করা হয়। ভয় পেয়ে পাপ্পুর পরিবার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক লাখ টাকা পাঠায়। বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশে ফাঁদ পাতা হয় প্রতারক চক্রের জন্য। টাকা নেওয়ার জন্য চেলোপাড়া সিএনজি স্ট্যান্ডে যেতে বলা হয়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

এ সময় টাকা নিতে হাজির হলে চক্রের সদস্য মো. পান্নু ও মো. শিপলুকে আটক করা হয়। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, পান্নু লিবিয়ায় অপহরণকারী চক্রের সদস্য পায়েলের আপন ভাই। এই পরিচয় ধরে পুলিশ লিবিয়ায় সাব্বির-পায়েল চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, পাপ্পু খন্দকারকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে না দিলে তাদের ভাইদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একপর্যায়ে তারা পান্নুকে নিরাপদ স্থানে ফেরত দেন। মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া এক লাখ টাকাও গোয়েন্দা পুলিশ পান্নুর হেফাজত থেকে উদ্ধার করে।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার পান্নু মিয়া (৩৫) বগুড়া সোনাতলা উপজেলার শিহিরপুর গ্রামের আয়েন উদ্দিনের ছেলে এবং শিপলু সরকার একই উপজেলার নওদাবগা গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন