বিজ্ঞাপন

‘ইজ্জতের মূল্য’ সোয়া লাখ থেকে কমে ৩০ হাজার টাকা— তদন্তের নির্দেশ

July 3, 2024 | 11:10 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামে নববধূর ‘ইজ্জতের মূল্য’ সোয়া লাখ থেকে কমে ৩০ হাজার টাকা- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি)।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩ জুলাই) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ (সুয়োমোটো) গ্রহণ করেছে। এবং এ ঘটনা তদন্ত করে আগামী ১৩ আগস্টের মধ্যে কমিশনে নড়াইল পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া কালিয়া উপজেলার ইউনিয়ন সমাজকর্মী হারুন অর রশীদের উপস্থিতিতে সালিশে মীমাংসার চেষ্টা করা সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ১৩ আগস্ট কমিশনকে অবহিত করতে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজার সই করা সুয়োমটো আদেশে বলা হয়, সংবাদ প্রতিবেদনে বর্ণিত শ্লীলতাহানি ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা সংক্রান্ত অভিযোগটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(৪) ধারার অপরাধ এবং ওই অপরাধটি ধারা ১৯ অনুযায়ী আমলযোগ্য, জামিন অযোগ্য ও অ-আপসযোগ্য।

ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী দু’জনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তা ছাড়া অপরাধটি অআপসযোগ্য হওয়ার পরও কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী হারুন অর রশীদসহ স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি কর্তৃক দুই দফা গ্রাম্য সালিশে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের সামিল।

অভিযোগের বিষয়গুলোর নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা বলে মনে করে কমিশন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুয়োমোটোতে বলা হয়, গত ৩০ জুন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত “নববধূর ‘ইজ্জতের মূল্য’ সোয়া লাখ থেকে কমে ৩০ হাজার টাকা” শীর্ষক সংবাদটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, গ্রাম্য সালিশে প্রথমে এক নববধূর (১৯) ইজ্জতের মূল্য ধরা হয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা! এর পর তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩০ হাজার টাকায়। তারপরও অভিযুক্তের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় দুই দফায় গ্রাম্য সালিশ বৈঠক হলেও জরিমানার একটি টাকাও দেওয়া হয়নি নববধূর পরিবারকে।

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত বখাটে আহাদ মোল্যা (৩৫) উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন মোল্যার ও রানা মুসাল্লী ওরফে ফেলা (৩০) একই গ্রামের মহিদুল মুসাল্লীর ছেলে।

লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২২ জুন বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চাঁচুড়ী বিল এলাকায় মৎস্য ঘেরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে বের হন এক নববধূ। এ সময় ওই মৎস্য ঘেরে উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের চিহ্নিত বখাটে ও মাদকাসক্ত আহাদ মোল্যা ও একই গ্রামের রানা মুসাল্লী ওরফে ফেলা ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর ওপর হামলা করে। তাকে ধরে দূরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করে ও হত্যার হুমকি দেয়। পরে আহাদ মোল্যা ওই নারীকেও চড়-থাপ্পড় মেরে শ্লীলতাহানি করে ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, আইফোন ও নগদ কিছু টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আহাদ মোল্যা ও রানা মুসাল্লীকে অভিযুক্ত করে কালিয়া থানায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। তবে রহস্যজনক কারণে ঘটনার প্রায় নয় দিন অতিবাহিত হলেও এখনো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি বলে ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়।

এদিকে ঘটনার দু’দিন পর ২৪ জুন রাতে চাঁচুড়ী গ্রামের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা ফসিয়ার রহমান শেখের বাড়িতে প্রথম দফার গ্রাম্য সালিশে এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই গ্রাম্য সালিশে প্রতিপক্ষের সালিশদার চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত আহাদ মোল্যার বড় ভাই প্রভাবশালী মো. আশরাফুল ইসলাম জরিমানার টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেন।

বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় বিষয়টি মীমাংসা করতে পুনরায় কৃষ্ণপুর-ডহর চাঁচুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ডাকা সালিশে সাবেক চাঁচুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, চাঁচুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজির হোসেন মোল্যা, কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী ও স্থানীয় মাতব্বর হারুন অর রশীদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নববধূর ইজ্জতের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয় ৩০ হাজার টাকা! কিন্তু ভুক্তভোগী নারীর পরিবার সালিশের এ রায় প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে ২য় দফায় সালিশি বৈঠক করেও বিষয়টি মীমাংসায় ব্যর্থ হন স্থানীয়রা।

এ প্রসঙ্গে কালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, ‘চাঁচুড়ী বিল এলাকায় মৎস্য ঘেরে মারধর করে শ্লীলতাহানির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী দু’জনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও তারা আর কোনো যোগাযোগ করেনি।’

এমতাবস্থায় ঘটনা তদন্ত করে আগামী ১৩ আগস্টের মধ্যে কমিশনে নড়াইল পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে অ-আপসযোগ্য অপরাধের বিষয়টি একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও সালিশে মীমাংসার চেষ্টা করায় অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ১৩ আগস্টের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন