বিজ্ঞাপন

‘মাসের মাঝামাঝিতে গ্যাস, ৩-৪ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান’

July 4, 2024 | 5:47 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন এবং আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সচিবালয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।

নসরুল হামিদ বলেন, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আগামী ১৫-১৬ তারিখের (জুলাই) দিকে আমরা আশাবাদী গ্যাস নিরবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ আগের থেকে ভালো হবে।

তিনি বলেন, এবার আমাদের জ্বালানি খাতে বরাদ্দ এক হাজার ৮৬ কোটি টাকা। জ্বালানি বিভাগ সাধারণত তাদের নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে। গ্যাস কেনার ব্যাপারে তেল কেনার ব্যাপারে আমরা আমাদের নিজেদের অর্থ ব্যবহার করি। উন্নয়ন কাজে আমাদের কিছু সহযোগিতা লাগে, যেটা আমরা সরকারের কাছ থেকে নিয়ে থাকি। আবার সময় মতো ফেরত দেওয়া হয়। সেটার পরিমাণ এ বছর এক হাজার ৮৬ কোটি টাকা, খুব বেশি নয়।

বিজ্ঞাপন

এবার বিদ্যুৎ জ্বালানি মিলে মোট বাজেট ৩৮ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, এবারের বাজেটে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান ফোকাস হলো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা আগেও বলেছি আমাদের পারপাস হল জ্বালানি সাশ্রয় এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কিভাবে দিতে পারি।

ঘূর্ণিঝড়ে ৩০ হাজার বিদ্যুতের পোল নষ্ট। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ঝড়ের কারণে আমাদের একটি এফএসআরইউ (ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক মাস ধরে এটার কাজ চলতেছে। আগামী ১৪-১৫ তারিখের দিকে এটি আসবে। ঝড়ের (ঘূর্ণিঝড় রিমাল) কারণে বিদ্যুতের ৩০ হাজার পোল নষ্ট হয়েছে। অনেক টাকা সরকার থেকে খরচ যায়।

বন্যার কারণে সিলেট অঞ্চলে অনেক বিদ্যুতের সাব স্টেশন পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে যদি বড় বন্যা হয়, তাহলে আমাদের কী প্রস্তুতি থাকা দরকার।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎতের দাম বাড়ানো নিয়েও। সরকার আইএমএফ-কে বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলেছে। বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি আমরা চলমান রেখেছি। ‌ সময় অনুযায়ী আমরা মূল্য সমন্বয় করেছি। ‌ এপর্যন্ত দু’বার করেছি। বাকি সমন্বয় যেটা হবে সেটা সময় মত হবে যখন সরকার আমাদেরকে বলবে সেই অনুপাতে হবে।

তিনি বলেন, তেলের ক্ষেত্রে আমরা প্রতি মাসেই চেষ্টা করছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমরা চাই যত কমে এডজাস্টমেন্ট করা যায়। এটা সরাসরি সবকিছুর সঙ্গে জড়িত। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তাই। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে গ্যাসটা নেয়। সেখানে একটা আলোচনা চলছে, আমরা দাম বাড়াব। সেটা খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়বে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আরও দুটি এফএসআরইউ করব। আমরা একটি প্রকল্প নিয়েছি, আগামী ২০২৭ সাল থেকে যাতে আর কোনো রকমের গ্যাসের সমস্যা না হয়। আমাদের ৪৬টি গ্যাস ফিল্ড আরও ১০০টি কূপ খনন করা হবে। ১৪৬টি কূপ খননের কাজ চলমান রয়েছে।

নসরুল হামিদ বলেন, একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট করার জন্য জ্বালানি বিভাগ থেকে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ‌ বিদ্যুতের ক্ষেত্রে প্রায় ছয়টি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। ‌সবগুলোই ট্রান্সমিশন সম্পর্কিত। প্রকল্পগুলো এখনো কনফার্ম হয়নি। এগুলোর প্রাথমিক খরচ এক বিলিয়ন ডলারের বেশি।

গ্যাস অনুসন্ধানে খননে যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তাতে আড়াই থেকে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস পেলে দেখা যাবে ২০ গুণ টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। আমরা এখানে সরকারের কাছে কিছু টাকা বিনিয়োগ করার জন্য আবেদন করেছি। সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। আমরা এখন গভীরে খনন করছি। চার হাজার মিটার নিচে চলে যাচ্ছি। মাটির চার-পাঁচ কিলোমিটার নিচে চলে যাব। সেখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিমন্ত্রী কথা বলেন বিদ্যুৎ সংকট নিয়েও। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে পায়রা চালু হয়ে গেছে। আবার বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু হয়েছে। আদানি বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু করেছে। ডলারের দামের তারতম্যের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে বড় একটা ফারাক রয়ে গেছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসানে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন নসরুল হামিদ।

উল্লেখ্য, রাজধানী ঢাকায় গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আবাসিকে দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা মিলছে পাইপলাইনের গ্যাস। কোনো কোনো এলাকায় মাঝ রাতে গ্যাস এসে আবার ভোর না হতেই চলে যায়। আবার কোনো কোনো এলাকায় দিনে গ্যাস থাকলেও তার চাপ একেবারেই কম থাকে। যে কারনে প্রতিদিনের রান্না নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।

গ্যাস সংকটের তথ্য পাওয়া গেছে রাজধানীর মানিকনগর, গোপীবাগ, টিকাটুলি, গোলাপবাগ, মান্ডা, মুগধা, বাসাবো, রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, পুরানঢাকার লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজার, বকশীবাজার, জনসনরোড, কদমতলী, কামরাঙ্গীরচর, কুড়িল বিশ্বরোড, নদ্দা, বেইলি রোড, মগবাজার ওয়‍্যারলেস গেট, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায়। গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে শিল্প কারখানায়ও। গ্যাসের অভাবে শিল্প কারখানায় কমেছে উৎপাদন। একই সঙ্গে দেশজুড়ে বিশেষ করে গ্রামে হচ্ছে লোডশেডিং।

সারাবাংলা/জেআর/এনইউ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন