বিজ্ঞাপন

ফের মহাসড়ক অবরোধ চবি শিক্ষার্থীদের

July 4, 2024 | 6:37 pm

চবি করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে ফের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

এর আগে গতকাল বুধবারও (৩ জুলাই) কোটা বাতিলের দাবিতে আধা ঘণ্টা চট্টগ্রাম-হাটহাজারী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোটার মাধ্যমে চাকরি দিয়ে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। অযোগ্যরা চাকরি নিচ্ছে। এটা আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ জন্য আগামীতে মেধাবী সমাজ গড়তে কোটা প্রথার বিলুপ্ত চাই।’

বিজ্ঞাপন

টানা চতুর্থ দিনের মতো কোটাবিরোধী আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ছবি: সারাবাংলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্য দূর করা। কিন্তু সরকারি চাকরিতে কোটার ফলে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেধা থাকার পরও যোগ্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বিলোপ করার জন্য আমরা এ আন্দোলন করে যাচ্ছি।’

কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ‘সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মেধা না কোটা? মেধা-মেধা’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না, আর না’, ‘কোটার বিরুদ্ধে লড়ায় হবে একসঙ্গে’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটা রাখা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সারাবাংলা/আইসি/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন