বিজ্ঞাপন

কোটা পুনর্বহাল বাতিলের দাবিতে রাবি শিক্ষার্থীরাও মহাসড়কে

July 4, 2024 | 6:59 pm

রাবি করেসপন্ডেন্ট

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল বাতিল ও সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো তারাও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড থেকে মিছিল নিয়ে মূল ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় কাজলা গেট হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন তারা।

‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, লড়াই করো একসাথে’ ইত্যাদি স্লোগানে আন্দোলন মুখরিত করেন শিক্ষার্থীরা।

প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাবি শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। ছবি: সারাবাংলা

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আন্দোলনকারীরা চারটি দাবি উত্থাপন করেন— ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার ও কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা কোটায় শূন্যপদ পূরণ; একজন কোটা সুবিধা ভোগকারী তার জীবদ্দশায় একবার মাত্র কোটা সুবিধা নিতে পারবেন, এতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে; প্রতি ১০ বছর পর পর জনশুমারিতে অর্থনৈতিক সমীক্ষা করতে হবে এবং এই সমীক্ষার মাধ্যমে কোটার যৌক্তিকতা মূল্যায়ন করতে হবে; এবং নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আজিজুর রহমান বলেন, দেশের কোটা প্রথায় উপযোগী জনসংখ্যার সংখ্যা ১ শতাংশের কম। কিন্তু তাদের জন্য কোটা ৫৬ শতাংশ। এমনিতেই দেশের চাকরির বাজার প্রতিযোগিতাপূর্ণ। সেখানে কোটায় অধিকাংশ সিট চলে গেলে আমাদের প্রতিযোগিতা আরও বেড়ে যায়। আমাদের দাবি ২০১৮ সালে কোটা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত এসেছিল, তা পুনর্বহাল থাকুক।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ খান বলেন, আমরা হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের মতো জ্ঞান রাখি না। কিন্তু ১ শতাংশেরও কম জনসংখ্যার জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখা যে অন্যায্য, সেটা বোঝার জন্য পৃথিবীর কোনো ন্যায় শাস্ত্র পড়ার দরকার হয় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সাম্য, সামাজিক মর্যাদা। আমাদের দেশের বেকাররা মরে যাচ্ছে, আর আপনারা গুটি কয়েক মানুষকে চাকরিতে নিয়োগ দিচ্ছেন। এটা আমরা মেনে নিতে পারব না। ছাত্রসমাজ দাবি করছে এবং সেই দাবি কীভাবে আদায় করতে হয়, তা আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে শিখেছি। আমরা তার উত্তরসূরী হিসেবে আমাদের দাবি আদায় করে ছাড়ব।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমি মনে করি, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। আমরা একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের এই দেশকে স্বাধীন করেছি। আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা সম্মান করি, তাদের পরিবারের সদস্যদেরও আমরা সম্মান করি। কিন্তু আমাদের এই রাষ্ট্রটি গঠিত হয়েছে সমতাভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গঠন করার জন্য। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।’

এই অধ্যাপক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে দুটি কারণে কোটা দিয়েছিলেন— প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা পড়ালেখা করতে পারেননি; দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাজে লাগাবেন। এটা শুধু যারা মুক্তিযুদ্ধের পর বেঁচে ছিলেন তাদের জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধে যেসব নারী আহত হয়েছিলেন তাদের জন্য। ১০ শতাংশ কোটা রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-সন্ততি বা নাতি-নাতনির জন্য কোনো কোটা রাখেননি। কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-সন্ততি, নাতি-নাতনি সবাই কোটা সুবিধা লুফে নিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ করা এবং না করার নিয়ে নাগরিকত্বের মধ্যে কোনো বিভেদ— এটি আমাদের সংবিধান পরিপন্থি বলে আমি মনে করি।’

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। গত ৩০ জুন তারা এই আন্দোলন শুরু করেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন