বিজ্ঞাপন

ফের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা, স্বপনের সামনে ২ নেতার পালটাপালটি

July 4, 2024 | 8:23 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চার দফা ঘোষণা দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ফের চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে নগরীর দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন স্বপন। সভায় সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে পালটাপালটিতে জড়িয়ে পড়েন নগর কমিটির দুই নেতা। তাদের থামিয়ে দিয়ে স্বপন বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন, সেটা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে, ব্যর্থ হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভানেত্রীর নির্দেশের কথা উল্লেখ করে সভায় আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে সর্বসম্মতিক্রমে ১৮ সেপ্টেম্বর নগর কমিটির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। যেসব ইউনিট-ওয়ার্ডে এখনও সম্মেলন সম্পন্ন হয়নি, সেগুলো ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। শোকের মাস আগস্টকে বাদ রেখে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল থানা সম্মেলন শেষ করতে হবে।’

সভায় আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘ইউনিট ও ওয়ার্ডের সম্মেলন করার জন্য নগর কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে থানাভিত্তিক ১৫টি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা যদি ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে সম্মেলন করতে অপারগ ও ব্যর্থ হন, তাহলে কমিটিগুলো বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।’

বিজ্ঞাপন

নগর কমিটির নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে তৃণমূল স্তরের নেতৃত্ব ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনেো নেতা যদি ব্যর্থ হন, তার যোগ্যতা ও দক্ষতা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

‘নেতৃত্ব যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যোগ্যতা, দক্ষতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দলীয় আদর্শের প্রতি আনুগত্য এবং এর পাশাপাশি সমাজে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে, নেতৃত্ব ও পদ-পদবিতে অবাঞ্চিত ও জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ কোনো ব্যক্তি যাতে আসীন হতে না পারে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দায় নিতে হবে।’

২০০৫ সালে সর্বশেষ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। এতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কাজী ইনামুল হক দানু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। দানু মারা যাওয়ার পর ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়, যাতে মহিউদ্দিনকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর প্রথম সহসভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর গতবছর তাকে ভারমুক্ত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

২০২১ সালের শেষদিকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হয়। কিন্তু এ সম্মেলন নিয়ে নেতারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। ফলে চট্টগ্রাম নগরীতে আওয়ামী লীগের ১৩২টি ইউনিট, ৪৪ ওয়ার্ড এবং ১৫টি সাংগঠনিক থানার মধ্যে শুধু কিছু ইউনিট এবং ওয়ার্ড ছাড়া আর কোথাও সম্মেলন সম্ভব হয়নি। তবে ওয়ার্ড-ইউনিটের সম্মেলনগুলো নিয়েও বিতর্ক আছে।

এ অবস্থায় দফায় দফায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সেটা হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালে ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর ও পরবর্তীতে ১৮ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ গত বছরের ৩১ জুলাই চার দফায় নগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি।

সভায় নাছির-বাবুল উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়

বিজ্ঞাপন

উপস্থিত নগর কমিটির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন তার বিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতারা। সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল এর প্রতিবাদ করে পালটা বক্তব্য দেন। এতে সভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তবে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বেশি দূর গড়ায়নি।

সভায় আ জ ম নাছির উদ্দীন নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক সভার তথ্য সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়া নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘অনেকের সঙ্গে সাংবাদিকদের যোগাযোগ বেশি। সাংগঠনিক সভায় কোনো কথা হলে সেটা পত্রিকায় চলে যায়। উনারা আবার দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ছোট করে, সম্মানহানি করে পত্রিকায় বক্তব্যও দেন।’

‘সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্ত ছাড়া কারও বিরুদ্ধে গড়পরতা ও ঢালাও অভিযোগ কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। এ ধরনের কল্পিত অভিযোগ দলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর,’– সভায় আ জ ম নাছির এ বক্তব্য দিয়েছেন বলে নগর আওয়ামী লীগের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ আছে।

বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী, তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অবশ্যই নেতৃত্ব ও পদ-পদবির জন্য প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। আওয়ামী লীগের মতো একটি বিশাল সংগঠনে এ প্রতিযোগিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার মতো কোনো ঘটনা বা আচরণ যাতে না হয়, সেদিকেও সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোনোভাবেই যাতে বিভেদ ও অনৈক্যের হানাহানি না ঘটে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।’

জানা গেছে, আ জ ম নাছির উদ্দীনের বক্তব্যের জবাবে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘এখানে কেউ ভেসে আসেনি। সবাই চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দা। সাংবাদিকরাও চট্টগ্রাম শহরের। কেউ যদি মনে করেন ভেসে এসেছি, সেটা ন্যায্য হবে না। সংকটে যুদ্ধ করে এ দলকে টিকিয়ে রেখেছি আমরা। ১৯৯৪ সালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্বাচনের সময় রাতজেগে পাহারা দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। সেদিন মহিউদ্দিন ভাই মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বলেই চট্টগ্রাম শহরে আওয়ামী লীগ ফের শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছিল। সেদিন আজকে যারা বড় বড় কথা বলেন, তারা কে, কোথায় ছিলেন একটু জানতে চাই।’

এ পর্যায়ে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে বাবুল তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘লিডার, ল্যাং মারারা অভ্যাস নেই। কাউকে ল্যাং মারতে চাই না। কেউ ল্যাং মেরে ফেলে দিতে চাইলে তাকে থামানোর চেষ্টা করি মাত্র।’

এ সময় আরও কয়েকজন নেতা পালটাপালটি বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করলে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন তাদের থামিয়ে দিয়ে নিজে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন বলে জানা গেছে।

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ সাংসদ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ও শফিক আদনান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ হাসান মাহমুদ সমশের, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, মোহাম্মদ হোসেন, মানস রক্ষিত, জুবাইরা নার্গিস খান, দিদারুল আলম চৌধুরী, মাহাবুবুল হক মিয়া, আবু তাহের।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন