বিজ্ঞাপন

কে এই স্টারমার, কী তার রাজনৈতিক নীতি

July 5, 2024 | 7:48 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ২০২০ সালে লেবার পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। এমন এক সময় তিনি দলটির নেতৃত্ব নিয়েছিলেন যখন ৮৫ বছরের ইতিহাসে সাধারণ নির্বাচনে সবচেয়ে বাজেভাবে পরাজিত হয়েছিল লেবার পার্টি। দায়িত্ব নিয়ে দলটিকে নির্বাচনে জয়ের উপযোগী করতে ব্যাপক পদক্ষেপ নেন কিয়ের স্টারমার। এ জন্য তাকে নিজ দলের মধ্যেই সমালোচিত হতে হয়েছে। তাকে তার প্রথম রাজনৈতিক বিশ্বাস থেকেও সরতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কিয়ের স্টারমার একসময় নিজে ছিলেন কট্টর বামপন্থি। কিন্তু লেবার পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে তিনি মূলত দলটির বামধারাকে দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় করে দেন। তিনি দলের বামধারার বহু নেতাকে সরিয়ে দেন। এর মাধ্যমে কিয়ের স্টারমার লেবার পার্টিকে নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রস্তুত করেন।

চার বছর পর ফলও বর্তমানে মধ্যপন্থি রাজনীতিবিদ কিয়ের স্টারমার। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ৪১২টি আসন পেয়ে সরকার গড়েছে তার দল। আর তিনি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার একজন সাবেক আইনজীবী। সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে ফৌজদারি বিচার পরিষেবায় অবদানের জন্য ২০১৪ সালে তাকে নাইট উপাধি দেওয়া হয়ে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

লন্ডনের পূবে সারের একটি ছোট শহরে স্টারমারের ছেলেবেলা কেটেছে। তার পরিবার ছিল শ্রমজীবী শ্রেনির। মা ছিলেন ব্রিটেনের বিনামূল্যের জনস্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থা এনএইএস-এর একজন নার্স। বাবা ছিলেন কারখানার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী।

বিজ্ঞাপন

স্টারমারের মা সারাজীবন এক ধরনের প্রদাহজনক আর্থ্রাইটিস রোগে ভুগেছেন। ২০১৫ সালে কিয়ের স্টারমার প্রথমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেই মা মারা যান। তিন বছর পর তার বাবাও মারা যান। তার বাবার সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন ছিল স্টারমারের, ফলে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। ছোটবেলায় তাদের জীবন সুখের ছিল না বলে স্টারমার একাধিকবার বলেছেন। তাদের পরিবারে সংকট লেগেই থাকত।

পরিবারের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয় তার। সেখানে তিনি সোশ্যালিস্ট অল্টারনেটিভ নামক একটি বামপন্থি ম্যাগাজিন চালানোর সঙ্গে জড়িত হন। এর মাধ্যমে কট্টর বামধারায় তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। পড়ালেখা শেষে অবশ্য তিনি আইনজীবী পেশা বেছে নেন। ২০০৮ সালে পাবলিক প্রসিকিউশনের প্রধান হয়ে ব্রিটিশ সরকারের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস পরিচালনা করেন তিনি। রাজনীতিতে ফিরে আসার এক বছর আগে ২০১৪ সালে তিনি নাইট উপাধি পান। ২০১৬ সালে তিনি প্রথমবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন কিয়ের স্টারমার।

স্টারমারের রাজনৈতিক নীতি

লেবার নেতা হিসেবে তার পুরো মেয়াদ জুড়ে দলটিকে নির্বাচন জয়ে সক্ষম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছেন। এ জন্য তিনি লেবার পার্টির শক্তিশালী বাম ধারাকে দুর্বল করেন। স্টারমার সমাজতান্ত্রিক বামপন্থি উইংয়ের অনেক নেতাকে জোরপূর্বকভাবে দল থেকে বিতাড়িত করেন। লেবার পার্টির এই বামধারা শক্তিশালী হয়েছিল দলটির প্রাক্তন নেতা জেরেমি করবিনের সময়।

মূলত ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাজেভাবে হারার পর লেবার পার্টির নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন জেরেমি করবিন। কিন্তু স্টারমার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে দল ছাড়তে হয়। করবিনের সময় লেবার পার্টি থেকে ইহুদি বিদ্বেষী বক্তব্য বেশি বেশি আসত বলে অভিযোগ ওঠে। এর জেরে একটি তদন্তের পর জেরেমি করবিনকে দল থেকে সরিয়ে দেন স্টারমার। এবারের নির্বাচনে অবশ্য জেরেমি করবিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বড় জয় পেয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সাবেক নেতাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে স্টারমার বলেন, ‘আপনাকে একজন ভালো নেতা হতে হলে কখনও কখনও নির্মম হতে হবে।’ স্টারমারের রাজনৈতিক স্লোগান ছিল, ‘দলের আগে দেশ।’

বামপন্থা থেকে মধ্যপন্থার দিকে স্টারমারের ঝুঁকে যাওয়ার কারণে লেবার পার্টির বামঘেঁষা নেতারা স্টারমারের সমালোচক হয়ে ওঠেন। শ্রম আয়কর বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি কমানো, ব্রিটেনের বেশিরভাগ পাবলিক সার্ভিসকে জাতীয়করণ এমন বহু উদার প্রতিশ্রুতি ছিল লেবার পার্টির। নির্বাচন সামনে রেখে এসব প্রতিশ্রুতি থেকে অনেকটাই সরে যান স্টারমার। তার এমন সিদ্ধান্ত অনেককেই বিরক্ত করে।

শুধু তাই নয়, সরকার গড়লে সবুজ বিনিয়োগের জন্য বছরে ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের একটি প্রতিশ্রুতি ছিল লেবার পার্টির। সেখান থেকেও পিছু হটেন স্টারমার। ফলে তিনি আরও সমালোচিত হন। গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার জন্যও তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। নির্বাচনের আগে ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের নিয়ে কটাক্ষ করেও তিনি সমালোচিত হন।

এসব ব্যাপারে স্টারমার বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমি এমন প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছি না যা আমি আসলে করতে পারব না।’

স্টারমারের রাজনৈতিক ধারা বদল এবং নির্বাচনমুখি রাজনীতির বিষয়ে লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী টিম বেল বলেন, ‘বামপন্থি অনেকে লোক তাকে সমাজতান্ত্রিক নীতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য অভিযুক্ত করে। আবার অনেক ডানপন্থি তাকে ভোল পালটানোর জন্য কটাক্ষ করে। আসলে কিয়ের স্টারমার সেই ব্যক্তি, যিনি নির্বাচনে জিততে যা দরকার তাই করেন।

সারাবাংলা/আইই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন