বিজ্ঞাপন

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা

July 10, 2024 | 12:27 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে (সাবেক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) জারি করে আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ ৪ সপ্তাহের জন্য এই আদেশ দেন।

আজ সকাল ১০টার দিকে আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপিত হয়। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানির জন্য সাড়ে ১১টায় সময় দেওয়া হয়েছে।

দু‘টি আবেদন একসঙ্গে শুনানি হোক। এ সময় জন্য তিনি সময় চান। তবে আদালত সময় নামঞ্জুর করে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আবেদন শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন।

বিজ্ঞাপন

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, শিক্ষার্থীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক শুনানি করেন। আর রিট আবেদনকারী পক্ষের ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী।

এর আগে, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের এই রায়ের পর থেকেই ফের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় কোটা নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৯ জুন চেম্বার আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আজকের (৪ জুলাই) দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তবে আপিল বিভাগ আজ এ আবেদনের শুনানি নেননি। অর্থাৎ এ আবেদনের শুনানি পরে নেবেন এবং পরে আদেশ দেবেন।

২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছরই আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।

ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৯ম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) ও ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদগুলোতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।

বিজ্ঞাপন

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার, মো. শিবলী ফোরকান, এস এম ফোয়ায়েল আহমেদ, মো. রবিউল ইসলাম, মো. আল ফাহিম, অনুকূল চন্দ্র সরকার ও মো. মাহবুব আলম ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসির) চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিবকে বিবাদী করা হয়।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। ৫ জুন ওই রিটেরই রায়ে পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীরা জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে সড়কে রয়েছেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন