বিজ্ঞাপন

কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে হরিজনদের ওপর হামলার অভিযোগ

July 10, 2024 | 9:41 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পুরান ঢাকার বংশালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনির বাসিন্দাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আউয়াল হোসেনের কর্মীদের বিরুদ্ধে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১০ জুলাই) বেলা দেড়টার দিকে পুরান ঢাকার আগা সাদেক রোডের পাশে মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে হামলার এ ঘটনা ঘটে। এতে হরিজন সম্প্রদায়ের ১০/১২ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। পুলিশ বলছে, মামলা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মিরনজিল্লা সুইপার কলোনির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলোনির ভেতরে নির্মিত নতুন ভবনে হরিজনদের জন্য বরাদ্দকৃত ৬৬টি ফ্ল্যাটে এখনও কেউ ওঠেনি। কেন ওঠেনি সেটি জানতে ও বরাদ্দ পাওয়া বাসিন্দাদের তুলে দিতে সেখানে গিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামান। এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন তার কর্মীদের নিয়ে সেখানে যান। এর পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কাউন্সিলর ও তার কর্মীরা কলোনির ভেতরে প্রবেশ করতে চান। কিন্তু হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন কাউন্সিলরের কর্মীদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেন। ফলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরে তা মারামারিতে রূপ নেয়। এ সময় কাউন্সিলরের লোকজন হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকলে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনও পালটা ইট-পাটকেল ছোড়েন। এ ঘটনায় হরিজন সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই পক্ষের মধ্যে অন্তত আধা ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া। এ সময় কলোনির ভেতরে থাকা মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। এর আগে, হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সেখানে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

 

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মিরনজিল্লা হরিজন সেবক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহেশ লাল বলেন, ‘আজ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আসেন ফাঁকা ফ্ল্যাটগুলোতে কেন লোক উঠছে না সেই খোঁজ নিতে এবং বরাদ্দ পাওয়াদের ফ্ল্যাটে তুলে দিতে। ৬৬টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৯টিতে লোক উঠলেও বাকিগুলোতে ওঠেনি। আমরা তাকে জানাই ফ্ল্যাটের চাবি পেলেও ভবনের চাবি না পাওয়ায় লোক ওঠেনি। তিনি তখন ৩ নম্বর ভবনের চাবি খুলে বরাদ্দপ্রাপ্তদের ভবনে উঠিয়ে দেন। এর পর ২ নম্বর ভবনের দিকে যাওয়ার সময় কাউন্সিলর তার দলবল নিয়ে কলোনিতে ঢোকার চেষ্টা করেন। আমরা নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা বিবেচনায় কাউন্সিলরের লোকজনকে ফটকের বাইরে থাকতে অনুরোধ করি। কিন্তু কাউন্সিলর অন্তত দেড় থেকে দুইশ’ মানুষ নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এ সময় কিশোর গ্যাং, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সদস্যরা জামার ভেতরে লুকিয়ে রাখা রড, স্টিক দিয়ে আমাদের মারতে শুরু করে। আমরা তখন ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিকসহ উপস্থিত মানবাধিকারকর্মীদের একটি কক্ষে নিয়ে নিরাপত্তা দিই। অন্য পাশ থেকে ইট মারা শুরু হলে আমাদের কিছু ছেলে মন্দিরের ভেতরে আশ্রয় নিলে কাউন্সিলরের লোকজন সেখানে ঢুকে চেয়ার ভাংচুর করে ও হামলা চালায়। আমাদের ছেলেরা পরে প্রতিরোধ করে। কাউন্সিলরের লোকজনের হামলায় ৫০ থেকে ৬০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ থেকে ১২ জনকে চিকিৎসা নিয়েছেন।’

হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর আউয়াল হোসেনের দু’টি মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনেরও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাহবুব-উজ-জামান বলেন, ‘মিরনজিল্লা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সম্প্রতি সিটি করপোরেশনে কর্মরত ৬৬ জনের নামের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজ সেটিরই কার্যক্রম চলার সময় হামলা-পালটা হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে যেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখনও কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিরনজিল্লা হরিজন সেবক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহেশ লাল। বিকেলে তারা প্রেস ক্লাবের পূর্ব ঘোষিত সংবাদ সম্মেলন শেষে সন্ধ্যায় একটি মিছিল নিয়ে মিরনজিল্লা যান ও হামলার প্রতিবাদ করেন।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে সিটি করপোরেশনের প্রায় ৩ দশমিক ২৭ একর জমি আছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে আসছেন। কলোনির এক পাশে ২৭ শতাংশ জমিতে আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি। তাই সেখানকার কিছু বাসাবাড়ি ভেঙে দিতে হবে। আগের কাঁচাবাজারটি ১৭ শতাংশ জমিতে ছিল। বাকি জমি থেকে স্থাপনা সরাতে গত ১০ ও ১১ জুন অভিযান চালাতে যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি। কিন্তু হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে সেদিন অভিযান চালানো যায়নি।

উচ্ছেদ ঠেকাতে পরে আদালতে গেছেন হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। ১৩ জুন আদালত মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে থাকা হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন