বিজ্ঞাপন

ইবির ছাত্রী হলে বারবার আগুন, ‘জোড়াতালি’ সংস্কারের অভিযোগ

July 11, 2024 | 7:56 am

আজাহারুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট

ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) খালেদা জিয়া হলে বৈদ্যুতিক লাইনে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে একাধিকবার। প্রতিবারই আগুন লাগার পর সংস্কার করা হয়। তবে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেই সংস্কার হয় একেবারেই নামমাত্র। হলের ঘটনা বাইরে জানাজানি হলে সিট বাতিলের হুমকির মুখে তারা কিছু বলতে পারেন না বলেও অভিযোগ মিলেছে।

বিজ্ঞাপন

হলের প্রাধ্যক্ষ ও প্রধান প্রকৌশলী বলছেন, পুরোনো ভবন ও লাইনগুলো পুরোনো হওয়ার শর্ট সার্কিটের কারণে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। তবে ঘটনা যাই ঘটুক, বারবার অগ্নিকাণ্ড নিয়ে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন হলের শিক্ষার্থীরা।

হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার রাত সাড়ে ১০টায় ইবি খালেদা জিয়া হলের পুরাতন ব্লকের নিচতলায় গণরুমের পাশে বৈদ্যুতিক বোর্ডে আগুন লাগে। এ সময় কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। পরে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা লাইন মেরামত করে দেন। তবে পরদিন সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় ফের বিস্ফোরণ হয়। এ সময় বিকট শব্দ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সোমবারের বিস্ফোরণে নিচতলার ছাদের অংশ কালো হয়ে যায় এবং ধোঁয়ায় ভরে ওঠে গোটা এলাকা। হলের আরেক পাশে থাকা নতুন ব্লক থেকেও বেশ ধোঁয়া দেখা যায়। এদিকে ওই বোর্ডের নিচে থাকা কয়েকটি প্লাস্টিকের বালতি গলে যায়। এরপর থেকেই হলটির পুরাতন ব্লকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সংযোগ ঠিক করতে তিন-চার দিন সময় লাগবে বলে তাদের জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাতে আগুন লাগার পর আমরা যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম, ধোঁয়ার কারণে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। নাক-মুখ-চোখ জ্বলছিল। পরে ইলেকট্রিশিয়ান এসে লাইন ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু লাইন ঠিক হলেও কিছুক্ষণ পরপরই স্পার্কিং হচ্ছিল আর সংযোগ চলে যাচ্ছিল। বারবারই এমন হচ্ছিল।’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘ইলেকট্রিশিয়ানরা আমাদের বলে যান, রাতে যেন শুধু লাইট-ফ্যান চালাই। অন্য কিছু যেন না করি। সকালে বাকি কাজ করা যাবে। কিন্তু পরে সকালেই আবার আগুন লাগে। তার পোড়া পটপট শব্দ অনেক দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল। পুরো জায়গা আবার ধোঁয়ার ভরে যায়।’

রোববার আগুনের পর লাইন মেরামত করা হলেও সোমবার সকালে ফের বৈদ্যুতিক লাইনেই আগুন লাগে। ছবি: সারাবাংলা

শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলের পুরোনো ব্লকের এই বৈদ্যুতিক লাইনে প্রায়ই ছোট-বড় আগুন লাগে। রোববারের আগুন নিয়ে গত দেড় বছরে বড় ধরনের আগুন লাগল তিন বার। প্রাধ্যক্ষকে আগুন লাগার ঘটনা জানালে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে লাইন মেরামত করা হয়। কিছুদিন পর আবার আগুন লাগে। বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষ জানলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয় না। বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে হলে থাকতে হয় তাদের। তারা এর স্থায়ী সমাধান চান।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে ইবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকের ভবন। লাইনগুলো তেমন শক্তিশালী (হেভি) না। ওখানে যে লোড পড়ে, সে তুলতায় লাইনগুলো দুর্বল (লাইট)। তাছাড়া লাইনগুলো অনেক পুরোনো হওয়ার কারণে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে।’

এদিকে বৈদ্যুতিক লাইনে বারবার আগুন লাগার ঘটনায় আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে হলজুড়ে। বিষয়টি বাইরে যেন জানাজানি না হয় এ জন্য হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে কয়েকজন শিক্ষার্থী কমেন্ট করলে হল প্রতিনিধির দ্বারা তাদের শাসানোর অভিযোগও মিলেছে।

হলে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক প্রতিনিধি নেই বলে জানিয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষ। তবে বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খাদিজাতুল কোবরা হলের প্রতিনিধি বলে নিজেই স্বীকার করেছেন।

গণরুমে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। কয়েকদিন আগে হলের একটি বাথরুমের ছাদের পলেস্তারাও খসে পড়েছে। আমাদের বলা হয়েছে, এসব বিষয় যেন আমরা বাইরে না জানাই। এ ছাড়াও হলের বিভিন্ন ঘটনা বাইরে কেউ জানালে আপুরা সিট কেটে দেওয়ার হুমকি দেন।

বিজ্ঞাপন

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন হলের নেতা খাদিজাতুল কোবরা। তিনি বলেন, ‘আমি বর্তমানে হল প্রতিনিধির দায়িত্বে আছি। ছয় বছর ধরে এই হলে আছি। হুমকি-ধমকি বা শাসানোর মতো কিছু করিনি।’

জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই হলের বয়স প্রায় ৩০ বছর। ইলেকট্রিক সমস্যা হতেই পারে। তেমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এবার তার-ব্রেকারগুলো পালটানোর ব্যবস্থা করেছি। পুরো বিল্ডিং তো সম্ভব না, যতদূর সম্ভব চেষ্টা করছি। তিন তলা পর্যন্ত পুরনো সেটআপ ফেলে দিয়ে নতুন সেটআপ দেওয়া হবে। এ ছাড়া হলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

প্রাধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর সকালেই আমি হলে গিয়েছি। ভিসি স্যারকে জানানোর পর তিনি, প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, হাউজ টিউটর, প্রকৌশলী সবাই ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। সেখানে প্রধান প্রকৌশলীকে তাৎক্ষণিক কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।’

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন