বিজ্ঞাপন

শুক্রবার বিকেলে দেশের সব ক্যাম্পাসে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ

July 11, 2024 | 9:27 pm

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে পুলিশের বাধা ও হামলার প্রতিবাদে সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে বলেছেন, রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ তথা সরকার উদ্যোগ নিয়ে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সংসদে আইন পাস করার আগ পর্যন্ত তারা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাত পৌনে ৯টার দিকে শাহবগ চত্বরে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মূল মঞ্চ থেকে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেন। পরে রাত ৯টায় শাহবাগ চত্বরের অবরোধ এ দিনের মতো তুলে নিয়ে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে চলে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবারের (১২ জুলাই) কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ সারা দেশে আমাদের আন্দোলনে হামলা করা হয়েছে, বাধা দেওয়া হয়েছে, দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। আমাদের যে এক দফা দাবি, সেটি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর সারা দেশে যে হামলা হয়েছে তার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের উপযুক্ত বিচারের দাবিতে আগামীকাল (শুক্রবার, ১২ জুলাই) বিকেল ৪টায় সারা দেশের সব (বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হবে।

এক দফা দাবিতে রাজপথে অনড় থাকার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, হাইকোর্টের রায়ের সঙ্গে আমাদের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং সরকারের এখতিয়ারে যে কাজ, সেটি আদালতের ওপর চাপিয়ে সরকারই আদালত অবমাননা করছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সরকার কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করে সংসদে আইন পাস না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন আন্দোলনের সমন্বয়করা। বলেন, আমরা দেখেছি, আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য অছাত্রদের বাসে করে ক্যাম্পাসে আনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও বলতে চাই, আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের সব বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কোথাও বাধা এলে আমরা সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করব। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যদি হামলা করা হয়, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে যাব। যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা হয়, অন্যরা মিছিল নিয়ে আসবেন। সব ক্যাম্পাসে আমরা সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা সম্মিলিত প্রতিরোধের মাধ্যমে নিশ্চিত করব।

আগের কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও বিকেল থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এ দিনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করেন তারা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যান। পুলিশ শাহবাগ থানার সামনে ব্যারিকেড তৈরি করে তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ চত্বর দখলে নিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

 

ঢাকা কলেজের সামনেও আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় পুলিশ। ছবি: সারাবাংলা

কেবল শাহবাগ নয়, রাজধানীর তেজগাঁও, মহাখালী, ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, চানখাঁরপুল, আগারগাঁও এলাকাসহ ঢাকার বাইরে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকাতেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। পরে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে শাহবাগে অবস্থান নেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাঁতিবাজার মোড়, গুলিস্তান, মৎস ভবন ও অন্যান্য স্পটে পুলিশি বাধা পেরিয়ে অবস্থান নেন শাহ্বাগে। ঢাকার অন্যান্য এলাকাসহ ঢাকার বাইরের অনেক ক্যাম্পাস এলাকাতেই পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দিয়েছে। কোথাও কোথাও লাঠিচার্জ হয়েছে। কুমিল্লায় পুলিশ রাবার বুলেটও ছুড়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার কোটা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ প্রকাশ করেছেন। রায়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী, জাতিগত সখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও কোটা পদ্ধতি বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বলেছেন, সরকার প্রয়োজনে কোটার অনুপাত বা শতাংশ কমাতে, বাড়াতে বা পরিবর্তন করতে পারবে।

কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: সারাবাংলা

গত ৫ জুন একই আদালত সরকারের ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের (নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত তথা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে) রায় দিলে মূলত নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এরই মধ্যে ওই রায়ের বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল ও শিক্ষার্থীদের পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। আগামী ৭ আগস্ট এ বিষয়ে আবার শুনানি নেবেন আপিল বিভাগ।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের জারি করা স্থিতাবস্থার ফলে হাইকোর্টের ৫ জুনের রায় বা আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত রায়ের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। ফলে আগামী চার সপ্তাহের জন্য কোটা বাতিলে সরকারের ২০১৮ সালের পরিপত্রই বহাল থাকবে।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন