বিজ্ঞাপন

মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতির বদলে কি রাজাকারের নাতি-পুতি চাকরি পাবে?

July 14, 2024 | 5:33 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে উল্লেখ করে এর কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে?- এটি দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের চাকরি প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, পরিবার-সংসার সব ফেলে রেখে তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। খেয়ে না খেয়ে তারা যুদ্ধ করেছেন। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে যুদ্ধ করে তারা বিজয় এনে দিয়েছিলেন। আর সে কারণেই তো আজ সবাই উচ্চ পদে আছে, আজ গলা উঁচু করে কথা বলতে পারছে। নইলে তো পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে চলতে হতো।’

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে ২০১৮ সালের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৮ সালে তারা আন্দোলন করল। নানা ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছিল, আক্রমণ করা হচ্ছিল, আঘাত করা হচ্ছিল, ঘরে বসে মিথ্যাচার, অপপ্রচার করা হচ্ছিল। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলেই ফেলি, কোটাই বাদ দিলাম। কিন্তু তারপর কী ঘটল?’

বিজ্ঞাপন

কোটা তুলে দেওয়ার পর নারীদের সরকারি চাকরি পাওয়ার হার কমেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার ৪৬তম বিসিএসেই দেখুন। ফরেন সার্ভিসে (বিবিএস পররাষ্ট্র ক্যাডার) মাত্র দু’জন মেয়ে চান্স পেয়েছে, পুলিশ সার্ভিসে (বিসিএস পুলিশ ক্যাডার) মাত্র চার জন। অথচ নারী অধিকারের জন্য আমরা সবসময় কাজ করে এসেছি। জাতির পিতা নির্যাতিত নারীসহ মেয়েদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রেখেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ। আমি যখন সরকারে আসি, দেখি কোটা থেকে সব পদ পূর্ণ হয় না। আমি বলে দিয়েছিলাম, কোটায় পদ পূরণ না হলে সেখানে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটাই শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপরও তারা আন্দোলন শুরু করল। আমিও কোটা বন্ধ করে দিলাম। তাতে ফলাফল কী?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে কেউ কখনো ভাবেনি যে মেয়ের সেক্রেটারি হবে, ডিসি হবে, এসপি হবে। আমি এসে প্রথম সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান-বাহিনীতে নিয়োগ দিলাম। প্রথম নারী সচিব করলাম। ডিসি, এসপি, ওসি— দায়িত্বশীল সব জায়গায় যেন নারীদের অবস্থান থাকে, সেটা নিশ্চিত করলাম। জাতির পিতা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের পড়ালেখা অবৈতনিক করেছিলেন। আমরা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করে দিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব সুযোগ কেন তৈরি করে দিলাম? কারণ, তারা যেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। সেই সময় আন্দোলনে অনেক মেয়েও ছিল যারা বলেছিল নারী কোটা চায় না। সেই মেয়েরা কি চাকরি পেয়েছে? সে কি বিসিএস দিয়েছে? প্রিলিমিনারিতেই কি জায়গা পেয়েছে? এসব না করলে তো তারা কোটায় হলেও চাকরিটা পেত।’

বিজ্ঞাপন

অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সুবিধার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের সব এলাকা তো সমানভাবে উন্নত না। অনেক অনগ্রসর এলাকা আছে, অনগ্রসর সম্প্রদায় আছে। সেসব এলাকার মানুষের অধিকার থাকবে না? সেই বিবেচনা করেই তো জেলা কোটা রাখা হয়েছিল। আজ বিভিন্ন কোটা বন্ধ করে দেওয়ার পর যদি হিসাব নেন, একটি বিসিএসে ২৩ জেলায় কেউ পুলিশের চাকরি পায়নি, প্রশাসন বা ভালো কোথাও কারও চাকরি হয়নি। তাহলে লাভটা কী হলো?’

কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্তরা আদালত নয়, নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেই সমাধান চান— এ বিষয়টিও জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীকে। জবাবে তিনি বলেন, ‘কোটা নিয়ে মামলা হলো, আদালত থেকে রায় হলো। সেখানে তো নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতে গেলে সমাধান আদালত থেকেই আসতে হবে। যারা আন্দোলন করছে, তারা আইন মানবে না, আদালত মানবে না, সংবিধান কী সেটা চেনে না। তারা কার্যনির্বাহী বিধিমালা মানবে না, সরকার কীভাবে চলে সেই ধারণাই নেই। তাদের সেই জ্ঞানটা নেই। কিন্তু তারাই তো ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। তাই তাদের ধারণাগুলো দরকার। সংবিধান কী বলে, সেটা তাদের জানা দরকার। একটি রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হয়, সেটাও তাদের জানা দরকার।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটার বিষয়টি যখন আদালতে চলে গেল, আদালত থেকেই সমাধান আসবে। সত্যি কথা বলতে বিষয়টি যখন আদালতে চলে গেছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আমার দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান, সংসদ, কার্যপ্রণালীবিধি কোনো কিছু দিয়েই আমার এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। এটা বাস্তবতা, এই বাস্তবতা মানতে হবে। না মানলে কিছু করার নেই। আন্দোলন করছে, করতেই থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবে, কিছু বলার নেই। কিন্তু অন্য কিছু যদি করে, পুলিশের ওপর যদি হামলা করে, যদি গাড়ি ভাঙচুর করে, তাহলে আইন আপন গতিতে চলবে। আমাদের কিছু করার থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন