বিজ্ঞাপন

ছাগলের ভ্যাকসিন কেনায় দুর্নীতি, সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন

July 14, 2024 | 8:33 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ছাগলের জন্য পেস্টেডেস পেটিস রুমিনান্টস (পিপিআর) ভ্যাকসিন কেনায় বড় ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটি মনে করছে, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পিপিআর রোগ নির্মূল ও ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ব্যয় হওয়া প্রায় ৩০ কোটি টাকার বেশিরভাগই লোপাট হয়েছে। যে কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৪ জুলাই) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ওই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সংসদীয় কমিটির সভাপতি শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাকালে কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পরে কমিটির সদস্য বি এম কবিরুল হক, নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও মশিউর রহমান মোল্লা সজলকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত সংসদীয় কমিটির সদস্য মো. রশীদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে অনির্ধারিত ওই বিষয়টি উত্থাপনের পর কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা সকলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে একমত হন। পরে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতার জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

কমিটি সূত্র জানায়, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অধীনে দেশের ৬৪ জেলায় ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন কেনার জন্য ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের শর্ত ছিলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন দু’টি চুক্তিতে ৩০ কোটি টাকার কাজ ও ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালকের পছন্দের ঠিকাদারের অভিজ্ঞতা বা শর্ত পূরণের যোগ্যতা না থাকায় চারটি দরপত্র জমা হলেও তাদের নন-রেসপনসিভ করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। যা সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিক।

পুনরায় আহ্বান করা দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) তার নিজস্ব ঠিকাদার মেসার্স টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের ইচ্ছা অনুযায়ী পূর্বের শর্ত বাদ দিয়ে নতুন শর্ত দেন শুধুমাত্র তার পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে। টেকনো ড্রাগসের ভেটিরিনারি পণ্য সরবরাহের অভিজ্ঞতা না থাকায় দরপত্র নীতি ভঙ্গ করে ফার্মাসিটিক্যাল আইটেমের (কনডম ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল) অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। প্রথম দরপত্রে ২ বছর ও ৩০ কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হলেও দ্বিতীয় দরপত্রে তা উল্লেখ করা হয়নি। কারণ টেকনো ড্রাগসের এই দুই অভিজ্ঞতার কোনোটি নেই।

দরপত্রের আরেকটি শর্ত ছিলো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বছরে ন্যূনতম চাহিদাকৃত ভ্যাকসিন উৎপাদনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু যোগানদাতা নেপালের হোস্টার কোম্পানির সেই সক্ষমতা ছিলো না। বিষয়টি জানার পরে পিডি কার্যাদেশ পত্রে দুই ধাপে ২ কোটি ৫০ লাখ করে মোট ৫ কোটি ভ্যাকসিন সরবরাহের কথা উল্লেখ করেন।

বিজ্ঞাপন

দরপত্রে উল্লেখিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ভ্যাকসিনের গুণগত মান ও সক্ষমতা হোস্টার কোম্পানির ভ্যাকসিনে ছিলো না। তবুও তাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন কেনা হয়। আর সরবরাহ করা ভ্যাকসিনের মান ও সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য পাবলিক হেলথ ও সিডিআইএল এ পাঠানোর বিষয়টি দরপত্রে উল্লেখ থাকলেও শুধুমাত্র বিভাগীয় ল্যাবে নমুনা পাঠিয়ে নমুনা অনুমোদন করা হয়। ল্যাব টেস্ট করানোর আগেই টেকনো ড্রাগসের সরবরাহ করা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেই দ্রুত প্রথম ধাপের বিল পরিশোধ করেন।

বৈঠকে উপস্থিত একজন সদস্য জানায়, গ্রহণ করা ভ্যাকসিন যথাযথ মানসম্মত কিনা তা ছাগলের গায়ে পুশ করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিডির অনুরোধে ডিজি এই বছরের ১৩ আগস্ট সাভার ছাগলের খামারের কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠান। পরবর্তীতে খামার কর্মকর্তা ২০ আগস্ট একটি প্রতিবেদন পাঠান। নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক টেস্টের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের নিয়ম থাকলেও প্রতিবেদন দেওয়ার এক মাস আগে ১২ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়। আবার দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ভ্যাকসিনসমূহ যথাস্থানে পৌঁছানোর পর বিল পরিশোধের কথা থাকলেও তা অমান্য করা হয়।

উল্লেখ্য, ছাগলের ‘পিপিআর’ একটি ভাইরাসজনিত রোগ। রিন্ডারপেস্ট নামক এক ধরনের ভাইরাস ছাগল, ভেড়া, দুম্বাজাতীয় গৃহপালিত পশুকে আক্রমণ করে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৭৫ শতাংশ ছাগলের মৃত্যু হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ‘পিপিআর রোগ নির্মূল ও খুরা রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প’র মাধ্যমে গৃহপালিত পশুর মৃত্যু প্রতিরোধে প্রতিবছর ভ্যাকসিন কিনে থাকে।

এদিকে বৈঠকে কোটা পদ্ধতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি আদালতের বিবেচনাধীন থাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন