বিজ্ঞাপন

শামছুর রহমান হত্যার ২ ‍যুগ, আপিল-রিটের মারপ্যাঁচে পার ১৯ বছর

July 15, 2024 | 11:33 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

যশোর: বহুল আলোচিত ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের দুই যুগ পার হলেও চিহ্নিত হয়নি যশোরের শহিদ সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল’র হত্যাকারীরা। হত্যার পর প্রথম পাঁচ বছর মামলার কার্যক্রম চললেও গত ১৯ বছর ধরে তা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আইনের মারপ্যাঁচে মামলাটি উচ্চ আদালতে আটকে গেছে। উচ্চ আদালতের এই জট ছাড়াতে বারবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ধর্ণা দিয়েও কোনো ফল মেলেনি।

বিজ্ঞাপন

প্রথিতযশা এই সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডের বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যে দিয়ে আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ২৪তম বার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছেন সাংবাদিক ও স্বজনরা। প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’র যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।

আদালত সূত্র জানায়, যশোরের প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে খুন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় বিগত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েকজন আসামি প্রভাব বিস্তার করায় মামলার বর্ধিত তদন্ত করে সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়। সেইসঙ্গে সাথে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বাদ দিয়ে সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্টজনদের। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়; অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট।

বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুনে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শহিদ শামছুর রহমানের সহধর্মিনী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।

বিজ্ঞাপন

আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে তার (বাদী’র) পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষী দেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এই আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ‘মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না’ তার জন্য সরকারের ওপর রুল জারি করেন। এর পর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সরকার উদ্যোগ নিয়ে উচ্চ আদালতে বাদীর আপিল এবং ফারাজী আজমল হোসেনের রিট নিস্পত্তি করলে নিম্ন আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা না এলে নিম্ন আদালতে এই মামলার কোনো কার্যক্রমই পরিচালনা করা যাবে না।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর এম ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে জানান, আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তি হলে মামলার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো বহুবছর ধরেই হাইকোর্টের নির্দেশনায় এই মামলার কার্যক্রম বন্ধ আছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পেলে খুলনার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল মামলার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

নিহতের সহোদর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন-জেইউজে’র সাবেক সভাপতি সাজেদ রহমান সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে সাংবাদিক নেতাদের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিটি গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়। এ ছাড়া তারা একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

প্রসঙ্গত, এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হৃদরোগে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকী আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

এদিকে, দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয় পুরনো বিতর্কিত তদন্ত বাতিল করে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করা হোক।

এদিকে, শামছুর রহমানের হত্যার ২৪তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে এদিন যশোরে বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। প্রেসক্লাব যশোর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতারা এদিন সকালে প্রেসক্লাবে জমায়েত হয়ে কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এর পর শোকর‌্যালি করে শহিদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। পরে প্রেসক্লাবের আয়োজনে ও দোয়া মাহফিল এবং যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন