বিজ্ঞাপন

কোটা আন্দোলন: চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩

July 16, 2024 | 7:50 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি দু’জনের একজন কলেজছাত্র, আরেকজন দোকানকর্মী। এছাড়া সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সংঘর্ষে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক পর্যায়ক্রমে তিন জনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত তিনজন হলেন- মো. ফারুক (৩২), মো. ওয়াসিম আকরাম (২২) ও ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২১)। এদের মধ্যে ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা গ্রামে। তিনি পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিরও সদস্য বলে জানা গেছে।

ওয়াসিম আকরামের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হাসপাতালে জড়ো হয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মো. সালাহউদ্দিন শাহেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সেই আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে ওয়াসিম আকরাম আজ (মঙ্গলবার) ষোলশহর রেলস্টেশনে গিয়েছিল। সেখানে বিক্ষোভে অংশ নেয় ওয়াসিম। ষোলশহর থেকে মুরাদপুরে যাবার পথে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে।’

বিজ্ঞাপন

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ সারাবাংলাকে জানান, নিহত ফয়সাল আহমেদ শান্ত নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি বরিশাল জেলায়। নিহত ফারুক নগরীর একটি ফার্নিচার দোকানের কর্মচারি। তার বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায়। বাসা চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার এলাকায়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, নিহত ফারুক পথচারী ছিলেন। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। নিহত ওয়াসিম আকরামের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন তারা পাননি। ফয়সালের শরীরেও আঘাতের চিহ্ন আছে।

বিজ্ঞাপন

সংঘর্ষে উভয়পক্ষের আহত অন্তত ২৫ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের ৮-১০ জন আছেন বলে সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার তসলিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে তিনজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। এদের মধ্যে ফয়সাল ও আকরাম ছাত্র। ফারুক পথচারী ছিলেন। ফারুক ও শান্তের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। ৩০ থেকে ৪০ জন আহত হিয়ে চিকিৎসাধীন আছে। তাদের দুই নম্বর ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। আইসিইউয়ে তিন জন ভর্তি আছেন।’

চমেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নুজহাত ইনু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চমেক হাসপাতালে দু’জনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। এদের মধ্যে ফারুক নামে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। আরেকজনের শরীরে মারধরের আঘাত পাওয়া গেছে। এখন ২৫ জনের মতো শিক্ষার্থী ও পথচারী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।’

নিহত ওয়াসিমের সহপাঠী আহমেদ মিশকাত উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকালও (সোমবার) সে আন্দোলনে এসেছিল। আহতও হয়েছে। তাকে আমি নিষেধ করেছিলাম না আসার জন্য। আমি এখানে কল পেয়ে এসে দেখি সে মৃত। তার বাবা-মাকে আমি কী জবাব দেবো।’

বিজ্ঞাপন

ওয়াসিমকে নিয়ে আসা রাশেদ নামে এক পথচারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি রাস্তায় তাকে পড়ে থাকতে দেখে রিকশা নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসি। আশেপাশে তখন অনেক মারামারি চলছিল।’

এদিকে, সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির ব্যাটালিয়ন-৮ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী।

প্রতিদিন পালন করে আসা কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ষোলশহর রেলস্টেশনে জড়ো হন। তবে এর আগেই ষোলশহর, দুই নম্বর গেইট এবং মুরাদপুর এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ষোলশহর থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। একপর্যায়ে সেটা দুই নম্বর গেইট এবং দক্ষিণে মুরাদপুরেও ছড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপে নগরীর দুই নম্বর গেইট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এক পর্যায়ে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্নভাগে মুরাদপুর, ষোলশহর ও দুই নম্বর গেইট এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে, বহদ্দারহাট এবং উত্তরে ওয়াসার মোড়, জিইসি এলাকায়ও বিভিন্ন অলিগলিতে তাদের অবস্থান ছিল। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান ছিল মূল সড়কে। ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের অলিগলি থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে দেখা গেছে। এ সময় তাদের হাতেও লাঠিসোঠা দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা কর্মসূচি পালনের জন্য ষোলশহর স্টেশনে জড়ো হলে বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা শুরু করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

ঘটনাস্থলে থাকা নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে শিবিরের ছেলেরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগের বিরুদ্ধে। তারা চারদিক থেকে আমাদের ঘিরে ফেলে। আমাদের কর্মীদের ধরে ধরে নির্বিচারে পিটিয়েছে। তাদের হামলার স্টাইল দেখে বোঝা গেছে, এ আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জামায়াত-শিবির ছিনতাই করেছে।’

এদিকে, ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে সংঘাতের মধ্যেও পুলিশকে নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। সংঘর্ষের ফলে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট থেকে টাইগারপাস মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়েছে। এতে নগরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

সারাবাংলা/আইসি/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন