বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে ৪ মামলায় আসামি ৭ হাজার, গ্রেফতার ৮৮

July 17, 2024 | 4:30 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় এ পর্যন্ত চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় অন্তঃত সাত হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের সবাইকে অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সংঘর্ষের পর নগরজুড়ে রাতভর ‘গণগ্রেফতার’ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অভিযানে ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাসহ ৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে এবং খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, হত্যা, দাঙ্গা ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে এবং বিস্ফোরক আইনে পুলিশ বাদী হয়ে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া হামলায় আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা ইমন ধরের মা বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বিস্ফোরক ও হামলার অভিযোগে দায়ের হওয়া দুই মামলার প্রতিটিতে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনটি মামলায় অন্তঃত ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, হামলায় আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাহেদ আলী নামে এক ব্যক্তি একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নগর পুলিশের চার জোনের চার উপ-কমিশনারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নগরীর ১৬ থানায় রাতভর অভিযানে মোট ৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর মধ্যে দক্ষিণ জোনের অধীন কোতোয়ালী, চকবাজার, বাকলিয়া ও সদরঘাট থানায় তিনজন করে মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

উত্তর জোনের অধীন পাঁচলাইশ থানায় ১ জন, খুলশী থানায় ২ জন ও বায়েজিদ বোস্তামি থানায় ৩ জনসহ মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পশ্চিম জোনের অধীন ডবলমুরিং থানায় ১৬ জন, পাহাড়তলী থানায় ১০ জন, আকবর শাহ থানায় ৫ জন এবং হালিশহর থানায় ২৩ জনসহ মোট ৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বন্দর জোনের অধীন কর্ণফুলী থানায় ৩ জন, বন্দর থানায় ৫ জন, ইপিজেড ও পতেঙ্গা থানায় চারজন করে মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে নগরীর পাহাড়তলী থানায় গ্রেফতার হওয়া দশজনের মধ্যে দুজন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা। এরা হলেন- জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবনাথ ও সাবেক সহসভাপতি ড্যানি বিশ্বাস।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাওয়ার অপরাধ দেখিয়ে অযৌক্তিকভাবে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ,চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবনাথ,ড্যানি বিশ্বাস এবং পাহাড়তলী থানার সহ সভাপতি নিশান রায়কে।

দুই নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি টিকলু কুমার দে ও সহকারি সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান আরিফ। এতে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এতে দুজন ছাত্র ও একজন পথচারী প্রাণ হারিয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়নের যে দুজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা কোনো ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন না। শুধুমাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বিবৃতিতে দুই নেতা আরও বলেন, ‘ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে, হত্যা করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। ছাত্রসমাজের দুর্বার আন্দোলনের কাছে তাদের নতি স্বীকার করতে হয়েছে। বর্তমান সরকারও টিকতে পারবে না। আমরা ছাত্রসমাজের যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর, দুই নম্বর গেট ও ‍মুরাদপুর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে তিনজন নিহত ও প্রায় শ’খানেক আহত হন। আহতদের মধ্যে ৭১ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

নিহত তিনজন হলেন- মো. ফারুক (৩২), মো. ওয়াসিম আকরাম (২২) ও ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২১)।

নিহত ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা গ্রামে। তিনি পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটিরও সদস্য।

নিহত ফয়সাল আহমেদ শান্ত নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি বরিশাল জেলায়। নিহত ফারুক নগরীর একটি ফার্নিচার দোকানের কর্মচারি ছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায়। বাসা চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার এলাকায়।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন