বিজ্ঞাপন

কমপ্লিট শাটডাউনে দেশব্যাপী সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ১০

July 18, 2024 | 6:32 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট’ শাটডাউনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দিনব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষ-ধাওয়া-পালটা ধাওয়ায় নিহতের এই ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৮ জন ও রাজধানীর বাইরে মাদারীপুরে একজন ও নরসিংদীতে একজন।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর উত্তরায় কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে বেসরকারি ইউনিভার্সিটির ৪ ছাত্রের মৃত্যু হয়। চারজনের মরদেহ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রয়েছে।

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে অনেকে আহত অবস্থান আসেন। সঙ্গে চারজনের মরদেহও আসে। আমরা মরদেহগুলো রেখেছি।’ ওই চারজন বিভিন্ন বেসরকারি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।

ধানমণ্ডির রাপা প্লাজার কাছে আহত হন কিশোর ফারহান ফাইয়াজ। রিকশায় আহত ফারহানকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটে উদ্ধারকারীরা। সাত মসজিদ রোডের সিটি হাসপাতালে মারা যায় তিনি।

বিজ্ঞাপন

ফারহানের মা নাজিয়া খান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ছেলে হারানোর বিচার চেয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘আমার ছেলে ফারহান। সে এখন মৃত। আমি এর বিচার চাই।’

ফারহান ফাইয়াজ ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।

বিজ্ঞাপন

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সাভারে গুলি চলেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নিহত ওই শিক্ষার্থী এমআইএসটিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।

সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসূফ আলী গণমাধ্যমে জানান, নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আহত আরও পাঁচজনকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকা। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন এক অ্যাম্বুলেন্সচালক। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গুরুতর আহত হন আরও অনেকে।

রামপুরার বেসরকারি ফরাজি হাসপাতালের ডিজিএম রুবেল হোসাইন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতের নাম দুলাল মাতবর। তিনি পেশায় গাড়ির চালক। সংঘাতের সময় তিনি একটি মাইক্রোবাস চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় কোটা আন্দোলনে শর্টগানের গুলিতে অজ্ঞাত (৩৫) বছরের এক যুবক নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮জুলাই) বিকেল পৌনে ৬টার দিকে পথচারীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসা রেজাউল করিম অনিক জানান, বিকেলে যাত্রাবাড়ী শনিরআখড়া রোডের ফল-পট্টির সামনে সংঘর্ষ চলছিল। এসময় পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি করে। তখন ওই যুবক গুলিতে আহত হয়ে সড়কে পড়ে যায়। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে মরা যান।

নিহত ওই যুবক রিকশাচালক ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পথচারীরা ওই যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মুখমণ্ডলে ও হাতে গুলির চিহ্ন আছে।

মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। তার পরনে ছিল কালো গোল গলা গেঞ্জি ও চেক লুঙ্গি।

মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের ধাওয়ায় শকুনি লেকে পড়ে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মরদেহ মিলেছে। উদ্ধার শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মনিরুজ্জামান ফকির মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে নরসিংদীতে পুলিশের সংঘর্ষে কোটা আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিতে আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী। এদিন বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তাহমিদ নরসিংদীর এনকেএম হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। সে চিনিশপুরের পল্লি চিকিৎসক রফিকুল ইসলামের ছেলে। আহতদের ২৫ জন জেলা হাসপাতাল এবং বাকিরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।

চলমান কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আজকে সকাল থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তারা সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলে।

এর আগে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় দুইজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজনের মৃত্যু হয়।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন