বিজ্ঞাপন

কোটা সংস্কার: যা বলা হয়েছে আপিল বিভাগের রায়ে

July 23, 2024 | 9:10 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়া রায়ে সরকারের পরিপত্র বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া ‘তর্কিত’ রায় বাতিল হয়ে গেছে। পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রেখে পরিপত্র জারি করতে সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রোববার (২১ জুলাই) আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখতে বলেছেন সর্বোচ্চ এই আদালত।

আগে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা প্রযোজ্য হলেও সরকার আদালতের এ নির্দেশনা অনুসরণ করলে কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরাই কোটার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।

ছয় বছর আগে চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের (সাবেক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সব চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল সরকার। পরে ২০২১ সালে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে গত ৫ জুন ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞাপন

আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, গত ৫ জুন হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া তর্কিত রায় ও আদেশ সামগ্রিকভাবে রদ ও রহিত করা হলো।

কোটার হার প্রসঙ্গে আপিল বিভাগ বলেন, কোটা নির্ধারণের বিষয়টি রাষ্ট্রের পলিসি ম্যাটার বা নীতিনির্ধারণী বিষয়। তারপরও আদালত বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত এখতিয়ার বলে সার্বিক ও যৌক্তিক বিবেচনায় সম্পূর্ণ ন্যায় বিচারের স্বার্থে (কমপ্লিট জাস্টিস) সংবিধানের ১৯, ২৭, ২৮ (৪), ২৯ (১) ও ২৯ (৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নিয়োগ লাভের জন্য কোটা প্রথা নির্ধারণ করল। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদ সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।

রায়ে আদালত আরও বলেন, এই রায় ও আদেশের মধ্য দিয়ে সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা (কোটা বাতিলসংক্রান্ত) পরিপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর হলো। এই নির্দেশনা ও আদেশ সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় এই আদালতের নির্ধারণ করে দেওয়া কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।

বিজ্ঞাপন

একই সঙ্গে বোটা নিয়ে ২০১৩ সালের ২০৬২ নম্বর লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ ও আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি সরকারের পরিপত্র (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনির জন্য কোটা) অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-নাতনি, জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটাসহ (যদি অন্যান্য থাকে) সব কোটা বজায় রাখার আদেশও স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর হয়েছে বলে চূড়ান্ত রায়ে উল্লেখ করা হয়।

সংক্ষিপ্ত আদেশটিকে মূল রায় হিসেবে গণ্য করা হবে উল্লেখ করে আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণের একটি অংশে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ও মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। তাদের প্রতি কোনো রকম অসম্মান অবশ্যই জাতি ভালোভাবে নেয় না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে যেন আমাদের কখনো কার্পণ্য না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রায় ঘোষণার আগে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা দায়িত্বশীল ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। আশা করি তারা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবিলম্বে ফিরে গিয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করবে।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন— বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচাপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি কাশেফা হোসেন ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন