বিজ্ঞাপন

সরকারি চাকরিতে ৭% কোটা রেখে প্রজ্ঞাপন জারি

July 23, 2024 | 9:04 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় ও পর্যবেক্ষণে উঠে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের ৯৩ শতাংশ মেধাতালিকা থেকে ও ৭ শতাংশ কোটা থেকে নিয়োগ দিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এর আগে গতকাল সোমবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রজ্ঞাপন অনুমোদন করেছিলেন। রোববার (২১ জুলাই) সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ এক রায়ে একই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নবম থেকে ২০তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ বা মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ পদে নিয়োগ দিতে হবে। এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে।

‘সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন’ শিরোনামে জারি করা হয় প্রজ্ঞাপনটি।

বিজ্ঞাপন

এতে বলা হয়েছে, সরকার এই মর্মে আদেশ জারি করছে যে সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সব গ্রেডে যে কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে— মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনার সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ; এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদগুলো সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখার ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবরের পরিপত্রসহ (নম্বর ০৫.০০.০০০০.১৭০.১১.১৮-২৭৬) এর আগে জারি করা সব পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, আদেশ, নির্দেশ, অনুশাসন রদ করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রতিপালন করেছে। রায়ের কিছুই পরিবর্তনের ক্ষমতা আমাদের নেই। তারা যেভাবে দিয়েছেন, আমরা সেভাবেই প্রতিপালন করেছি। এর বাইরে যাওয়ার কোনো অভিপ্রায়ও আমাদের নেই।

বিজ্ঞাপন

এ সময় জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত আইনমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকার পরিপত্র জারি করে এসব চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে তুলে দেয়। পরে ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন।

গত ৫ জুন হাইকোর্ট এই রিটের শুনানি নিয়ে সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন। এতে ফের সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ৯ জুন আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৪ জুলাই কার্যতালিকায় থাকলেও আপিল বিভাগ ওই আবেদনের শুনানি নেননি। পরে ৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীও লিভ টু আপিল করেন।

১০ জুলাই আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দেন। নতুন শুনানির জন্য ৭ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেন। তবে হাইকোর্টের রায়ের পরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা প্রতিবাদ জানান। ১ জুলাই থেকে তারা রাজপথে আন্দোলন শুরু করেন। ক্রমেই সে আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সেই আন্দোলন ঘিরে এরই মধ্যে সহিংসতায় শতাধিক প্রাণহানি ঘটেছে সারা দেশে।

বিজ্ঞাপন

এ রকম সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে গত বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ঘোষণা দেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। অ্যাটর্নি জেনারেলকেও তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন, আপিল বিভাগ যেন রোববার (২১ জুলাই) এ বিষয়ে শুনানি নেন।

শেষ পর্যন্ত রোববার আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের ৫ জুন দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিকে ‘রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়’ বলে অভিহিত করেন আপিল বিভাগ। তবে বাস্তবতা বিবেচনায় সার্বিক ন্যায় বিচারের স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য ৭ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রেখে বাকি ৯৩ শতাংশ নিয়োগ মেধাতালিকা থেকে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন আদালত।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন