বিজ্ঞাপন

হাইকোর্টের রায় বাতিল আপিল বিভাগে, ৭% কোটা রাখতে নির্দেশ

July 23, 2024 | 11:20 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: হাইকোর্টের যে রায়ের পর নতুন করে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার জের ধরে দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানি ঘটেছে, হাইকোর্টের সেই রায় বাতিল ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থাকে ‘রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়’ অভিহিত করে সর্বোচ্চ এই আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় সার্বিক ন্যায় বিচারের স্বার্থে সরকারি চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আপিল বিভাগ আরও বলেছেন, কোটা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তারা চাইলে এখন বা পরেও কোটা বাতিল বা সংস্কারের অধিকার রাখবে। পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করতে হবে।

রোববার (২১ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা দুটি লিভ টু আপিলের শুনানি নিষ্পত্তি করে দেওয়া এ রায়ে আপিল বিভাগ সর্বসম্মত ছিলেন।

আপিল বিভাগ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, বাস্তবতা বিবেচনায় সার্বিক ন্যায় বিচারের স্বার্থে সরকারি চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা সরকার সংরক্ষণ করতে পারে। এর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে ৫ শতাংশ কোটা। ১ শতাংশ কোটা থাকবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে আরও ১ শতাংশ কোটা। তবে কোটা পদ্ধতি চূড়ান্ত করার এখতিয়ার থাকবে সরকারের হাতে।

বিজ্ঞাপন

আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে সরকারি চাকরির ৯৩ শতাংশ পদে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগের পথ সুগম হলো। আদালত বিষয়টি চূড়ান্ত করার এখতিয়ার সরকারকে দিলেও রায়ের পর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ীই সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে পরিপত্র জারি করবে। এর ফলে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র ও সেই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়— উভয়ই বাতিল হবে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রায় হয়েছে। উনারা (আপিল বিভাগ) নির্দেশ দিয়েছেন যে এখন কোটা যেটা থাকবে সেটা হচ্ছে— ৯৩ শতাংশ মেধা, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের (সন্তানদের) জন্য, ১ শতাংশ (ক্ষুদ্র) নৃগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য। উনারা যা দিয়েছেন, সেটা আমাদের মানতে হবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, ভবিষ্যতে যদি এটা পরিবর্তন করতে হয়, তখন এই রায় কোনো প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে না। তাই ভবিষ্যতে বাতিল, সংশোধন বা সংস্কারের প্রয়োজন হলে সরকার সেটা করতে পারবে। রায়ে আপিল বিভাগ এ কারণেই বলেছেন, এটি রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের নীতিনির্ধারণী বিষয়।

বিজ্ঞাপন

রায় ঘোষণার আগে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা দায়িত্বশীল ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। আশা করি তারা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবিলম্বে ফিরে গিয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করবে।

আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন— বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচাপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি কাশেফা হোসেন ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন ও সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে শুক্রবার রাতেই সারা দেশে কারফিউ জারি করে বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগী হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছিল সরকার। এর মধ্যেই রোববার সকালে কড়া নিরাপত্তায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানিতে বসেছিলেন।

এ দিন সকাল ১০টা ২৫ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত কোটা নিয়ে আলাদা দুটি লিভ টু আপিল আবেদনের শুনানি নেন আপিল বিভাগ। এরপর দুপুর দেড়টায় প্রধান বিচারপতি রায়ের মূল অংশ (কার্যকর অংশ) পড়ে শোনান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন