বিজ্ঞাপন

কারফিউতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলছে বাস

July 24, 2024 | 12:06 am

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীর প্রবেশপথ বলে পরিচিত যাত্রাবাড়ী, হানিফ ফ্লাইওভার টোলপ্লাজা, শনিরআখড়া, রায়েরবাগসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পাশাপাশি দফায় দফায় চালানো হয় নাশকতা। পরবর্তীতে শুক্রবার (১৯ জুলাই) থেকে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটির পাশাপাশি কারফিউ জারি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

আর তাই কবে নাগাদ মহাসড়কে চলাচল শুরু হবে তা নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। মহাসড়কে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করলেও সংখ্যায় ছিল কম।

তবে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রামের মহাসড়কে কারফিউ শিথিলের সময় দেখা গেছে পরিবহন চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক। শুধু তাই না, কারফিউ শিথিল হওয়ার সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও মহাসড়কে দেখা গেছে পরিবহন চলাচল। নানা ধরণের পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপের পাশাপাশি যাত্রীবাহী বাসও চলেছে। একইসঙ্গে মহাসড়কে বিদেশগামী যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যস্থলে উদ্দেশে যাওয়া বিভিন্ন পরিবহণের পাশাপাশি দেখা গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস।

মহাসড়কে চলা বিভিন্ন বাসচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত গত বুধবার (১৮ জুলাই) থেকে মহাসড়কে পরিবহণ নামানো সম্ভব হচ্ছিল না। একদিকে নিরাপত্তাহীনতা আর অন্যদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে যাত্রীর সংখ্যা কম হওয়ার কারণে পরিবহণ মহাসড়কে নামানোর সাহস পাচ্ছিলেন না তারা। তবে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর ভূমিকার ফলে স্বস্তি ফিরে এসেছে সবার মাঝে। এমন অবস্থায় যাত্রীরাও আসছেন বিভিন্ন বাস কাউন্টারে। আর তাই মহাসড়কে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে যাত্রীরা বলছেন, দেশের পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে তারা আসলে কোথাও যেতে পারছিলেন না। আর তাই কারফিউ শিথিল হওয়ার কারণে বিভিন্ন বাসকাউন্টারে এসে গাড়ি চলাচল করায় স্বস্তি ফিরেছে তাদের মাঝে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ভাড়া কিছুটা বেশি গুণতে হলেও গন্তব্যস্থলে যাওয়ার গাড়ি পেয়ে তারা সন্তুষ্ট।

সরেজমিনে সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জায়গার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বাস। এ সময় সিডিএম নামে একটি পরিবহণের চালকের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।

আবদুস সালাম নামের এই পরিবহন চালক সারাবাংলাকে বলেন, গত ছয় দিন গাড়ি রাস্তায় বের করতে না পারার কারণে ঘর চালানো দায় হয়ে যাচ্ছিল। গতকাল (সোমবার, ২২ জুলাই) সায়েদাবাদ এলাকায় কারফিউ শিথিল হওয়ার পরে যাত্রীরা আসতে থাকে। তবে গতকাল গাড়ি নিয়ে বের হয় নাই। তবে আজ পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে হয়তোবা অনেক যাত্রী কারফিউ শিথিল হওয়ার সময় শুরুর আগেই যাত্রাবাড়ীর দিকে আসেন। আর তাদের নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকেও গাড়ি ছেড়েছে। সেখান থেকে যারা আসছে তারা মহাসড়কে কোনো সমস্যা পাননি বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, মহাসড়কে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার কারণে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। এমন অবস্থায় আসলে একদিকে পরিবার চালানোর দায় আর অন্যদিকে যাত্রীদের প্রয়োজনীয়তা দুই কারণেই তারা মহাসড়কে গাড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছি।

রাজধানীর মানিকনগর-টিটি পাড়া এলাকায় দুপুর ৩টায় ফেনী থেকে ছেড়ে ঢাকায় এসে পৌঁছায় স্টার লাইন পরিবহনের একটি বাস।

বাসে ফেনী থেকে ঢাকা এসে পৌঁছা আরশাদ খান নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন, ফেনীতে আমার মা ও বাবা থাকেন। গত বুধবার মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে ফেনী যাই। কিন্তু সেখান থেকে আর ফিরে আসতে পারিনি। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার কারণে অফিস বন্ধ থাকলেও ঢাকায় আমার বৌ-বাচ্চাদের কাছে আসতে পারছিলাম না। ঘরে বাজার করার কেউ ছিল না। আমি ফেনীতে আটকে ছিলাম। এমন পরিস্থিতিতে অপেক্ষা করছিলাম কখন বাস চলাচল শুরু হবে সেটার জন্য। আজকে মহিপাল গিয়ে দেখি স্টার লাইন ছাড়ছে। তখনই চলে আসি বাবা ও মাকে নিয়ে। রাস্তায় কোথাও কোনো সমস্যা দেখিনি।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর টিকাটুলি মোড়ে হানিফ ফ্লাইওভারের একটু সামনেই সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ছিল তিশা এক্সক্লুসিভ পরিবহণের একাধিক গাড়ি। রাজ্জাক মিয়া নামে একজন চালকের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, কুমিল্লা থেকে গাড়ি নিয়ে সকাল ১০টার দিকে রওয়ানা দেই। এখানে ১২টার দিকে আসার পরে এখন একঘণ্টার বিরতির পরে আবার যাচ্ছি। সেনাবাহিনী রাস্তায় নামার কারণে এখন দেশে অনেকটাই স্বস্তি ফিরে এসেছে। আর তাই কারফিউ শিথিল হওয়ার আগেই লোকজন কুমিল্লা বিশ্বরোডসহ মহাসড়কে আসার কারণে আমরাও গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। রাস্তায় কোনো জায়গায় কোনো সমস্যা দেখিনি। কুমিল্লার দিক থেকে যাত্রীসংখ্যা কম হলেও ঢাকা থেকে বের হওয়ার সময় কিন্তু যাত্রীর অভাব হচ্ছে না।

সরেজমিনে রাজধানীর কাজলা, শনির আখড়া, রায়েরবাগ এলাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, কাঁচপুর এলাকায় দেখা যায় প্রচুর যাত্রী অপেক্ষা করলেও তুলনামূলক গাড়ির সংখ্যা কম।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বের হওয়ার সময় প্রায় সব গাড়ি পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে আসছে। আর তাই রাস্তায় তারা তেমন যাত্রী তুলছেন না। লোকাল বাসগুলো যাত্রী ওঠালেও দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু তাও গন্তব্যস্থলের দিকে রওয়ানা দিতে পারাটাই এখন স্বস্তির বিষয় তাদের কাছে।

নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায়, মহাসড়কে শ্যামলী, মারসা স্টার লাইন, ড্রিমলাইন, হিমাচল, একুশে, লাল সবুজনসহ চট্টগ্রাম ফেনী, বসুরহাট, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীগামী বিভিন্ন বাস চলছে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসার সময়েই এই বাসগুলো পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে মহাসড়কে নামে।

তবে ঢাকা-কুমিল্লা রুটের চলা বিভিন্ন এসি বাস ব্যানারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের কোনো গাড়ি কারফিউ শিথিল হলেও সড়কে নামানো হয় নাই। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়ার কারণে তারা গাড়ি নামাচ্ছেন না। তবে দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রত্যাশা তাদের।

এদিন সন্ধ্যা ৬টায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে প্রশাসনের সহযোগীতায় কক্সবাজার-বান্দরবানসহ বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপদে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রওয়ানা দেওয়া বিভিন্ন পরিবহন অতিক্রম করছে ঢাকা-চট্টগ্রামের মহাসড়কের কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা।

একইসঙ্গে কারফিউ শিথিল হওয়ার পরেও অর্থাৎ বিকেল ৫টার পরেও মহাসড়কে বিভিন্ন ব্যানারের পরিবহন ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যে উদ্দেশে চলতে দেখা যায়।

তবে এ সময় পরিবহনচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গায় যখন কারফিউ শিথিল ছিল তখন তারা রওয়ানা দেয়। ফলে যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে নিরাপদে পৌঁছিয়ে দেওয়ার পরে গাড়ি বন্ধ করাটাই আপাতত তাদের লক্ষ্য।

একইসঙ্গে পরিস্থিতি খুব দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেই আশাবাদ তাদের।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আগামীকাল (বুধবার) থেকে সারাদেশে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারফিউয়ের সময় বাদ দিয়ে বাকিসময় বাস চালানোর জন্য যতজন সম্ভব মালিকদের সঙ্গে কথা বলছি।

এ সময় যত দ্রুত সম্ভব সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার আহ্বান জানান তিনি।

সারাবাংলা/এসবি/আইই

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন