বিজ্ঞাপন

চিকিৎসাসেবা দিলেও হামলা হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানে

July 24, 2024 | 12:05 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছে। অথচ তারপরও তাদের ওপর হামলা হয়েছে। পৃথিবীর সব জায়গায় চিকিৎসকরা হামলার আওতামুক্ত থাকে। অথচ যখন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছিল, তখন দুর্বৃত্তরা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা চালিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাশাপাশি দুর্বৃত্তরা কোভিড হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে। এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। এ সব ঘটনায় যারা দোষী তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

এ দিন সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।

তারা এসব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজখবর নেন। এ সময় তারা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পাশাপাশি আন্দোলনের সময় চিকিৎসকরা কীভাবে সেবা দিয়েছেন সেসব কথাও শুনেন।

বিজ্ঞাপন

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আহত হয়ে এক হাজার ৭১ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন। এর মাঝে ২৭৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সর্বমোট ৭৯ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। এর মাঝে ৬০ জন হাসপাতালে আনার পথে মারা যায়। বাকি ১৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহতদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। এর মাঝে ৩ জন আইসিইউতে ভর্তি আছেন যারা মাথায় আঘাত পেয়েছেন তারা এখনো শংকামুক্ত নন। শুধু ঢাকা মেডিকেলে বুলেট ইনজুরিতে রয়েছে ৪০ জন অপারেশন থিয়েটারে দিনরাত কাজ চলছে, এছাড়াও মুগদা মেডিকেলে রয়েছে, সোহরাওয়ারর্দী মেডিকেলে রয়েছে, নিটোরেও বুলেট ইনজুরি রয়েছে।

এছাড়াও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে এখনো ৬১ জন চিকিৎসাধীন আছেন বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমার চিকিৎসক ভাইবোনেরা যারা সবাইকে চিকিৎসা সেবা দিল তারাতো কোনসময় দেখেনি কে আসছে রোগী? কার কি পরিচয়? জাতি-ধর্ম-দল নির্বিশেষে তারা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিয়ে গেছে। তার পরিবর্তে কি হলো? আমাদের গাড়িগুলো ভেঙে দেয়া হলো, আমাদের স্থাপনাগুলো নষ্ট করা হলো।

তিনি বলেন, দুর্বৃত্তদের হামলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দুর্বৃত্তরা অধিদফতরের পুরনো ভবনে হামলা চালায়। সেখানে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয়। হতাহতদের যেসব অ্যাম্বুলেন্সে করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেসব অ্যাম্বুলেন্সও ভাঙচুর করা হয়।

তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরে হামলার ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছে। থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, হাসপাতালে আসা-যাওয়ার পথে চিকিৎসকদের গাড়িও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এমন অবস্থাতেও চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসা আহতদের জরুরি অবস্থায় অস্ত্রোপচার করেছেন। একটানা দীর্ঘ সময় ধরে বিপুল সংখ্যক আহতের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে তাদের।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্টাফরা টানা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেছে। সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। তিনি আহতদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা বলেন, দেশে কত মানুষ মারা গেছে সে পরিসংখ্যান এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার পথে বা এসে ৭৯ জন মারা গেছে। তাদের ৬০ জনকে মৃত অবস্থায়ই আনা হয়েছিল। ১৯ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। গত কয়েক দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষে আহত ১ হাজার ২৭৬ জন আসে। ক্যাজুয়ালটি বিভাগের ১০১ ও ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে শুক্রবার (১৯ জুলাই) মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের পুরাতন ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর পাশাপাশি র কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।

এছাড়াও রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভেঙে ফেলার পাশাপাশি আগুনও দেওয়া হয় অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্সে।

সারাবাংলা/এসবি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন