বিজ্ঞাপন

বিমানবন্দরের যাত্রীদের ভোগান্তি, কারফিউ শিথিলে স্বস্তি

July 24, 2024 | 10:40 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা যেন অপেক্ষা করার একটি নিরাপদ স্থান। একদিকে দেশের বাইরে যাওয়ার ফ্লাইট মিস হওয়ার ভয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিমানবন্দরে চলে আসা যাত্রীদের অপেক্ষা আর অন্যদিকে বিভিন্ন ফ্লাইটে দেশের বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীদের ঘরে ফেরার অপেক্ষা। কেউ কেউ স্বজনকে বিদায় জানাতে এসে আটকা পড়ে অপেক্ষা করছেন বিমানবন্দর এলাকাতেই। এর মাঝে অনেকেই বিদেশগামী যাত্রীদের নামিয়ে দিতে আসা বিভিন্ন প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসে করে বাড়ি ফিরতে চাইলেও গুণতে হচ্ছে প্রায় পাঁচগুণ বেশি ভাড়া।

বিজ্ঞাপন

এমন অবস্থায় যেন সবাই অপেক্ষা করছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য। আর তাই কারফিউ শিথিল কখন হচ্ছে, মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু হয়েছে কী— এমন প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করছেন বিভিন্ন মাধ্যমে।

শনিবার (২০ জুলাই) থেকে সোমবার (২২ জুলাই) পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল করা হলেও মহাসড়কে তেমন বাস চলাচল করেনি। আর তাই দীর্ঘ হচ্ছিল অপেক্ষার প্রহর।

তবে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) থেকে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে বাস চলাচলের খবরে অনেকের মাঝেই দেখা গেছে স্বস্তি। একইসঙ্গে বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে সারাদেশে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়িয়ে বাস চলাচলের ঘোষণা স্বস্তির মাত্রা বাড়ায় বিমানবন্দরে আটকে পড়া যাত্রীদের।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে বুধবার (২৪ জুলাই) বিমানবন্দর এলাকায় আগের দিনগুলোর তুলনায় অনেক কম যাত্রী দেখা গেছে। তবে বিমানবন্দর রেলওয়ে সংলগ্ন বিভিন্ন বাস কাউন্টার এলাকায় যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়।

কথা হয় আবদুস সালাম নামে এক প্রবাসীর সঙ্গে। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, সোমবার (২৩ জুলাই) রাতে আসার দেশে আসার পরে ফেনী যাওয়ার উপায় পাচ্ছিলাম না। বিমানবন্দর এলাকায় কিছু রেন্ট-এ কারের গাড়ির সঙ্গে দরদাম করা হলেও তাদের চাওয়া ভাড়াটা আসলে অনেক বেশি ছিল। সাধারণত চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় ফেনী গেলেও তারা ভাড়া চাইছিল ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। আর তাই অপেক্ষা করছিলাম বাস চালু হওয়ার জন্য। আজকে সেটা হয়ে যাওয়ার কারণে এখন বাড়ি যাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আন্দোলনকারীদের ডাকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলার সময় গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ও শুক্রবার (১৯ জুলাই) ঢাকার বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কার্যত দেশের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন থেকেই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা ও মানুষের  জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়। এসময় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।

২০ জুলাই সকাল থেকেই বিমানবন্দরে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল সীমাহীন। কারফিউ থাকার কারণে রাস্তায় দুর্ভোগ হওয়ার কথা ভেবে অনেকেই অপেক্ষা করেন বিমানবন্দরে। তবে সবচাইতে বেশি দুর্ভোগে পোহাতে হয় দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আসা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের যাত্রীদের। ১৯ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত তিনটি এয়ারলাইনসের আন্তর্জাতিক রুটে ১৭টি ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েন তারা। বিশেষ করে ১৯ ও ২০ জুলাই সৌদিয়া এয়ার লাইনসের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। এতে চারটি ফ্লাইটে যাত্রী ছিলেন এক হাজার ২০০। এ সময় তাদের অনেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করেন। ফ্লাইট শিডিউলের বিষয়ে কোনো এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য না পাওয়ার কারণে সংশয়ের মাঝেই দিন কাটাতে হয় তাদের। ফলে বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করতে থাকেন তারা।

এ দিন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মালয়েশিয়া গামী একটা ফ্লাইটও বাতিল করা হয়। আর তাই অপেক্ষমাণ যাত্রী সংখ্যা বাড়তেই থাকে।

বিজ্ঞাপন

আশকোনা হজ্ব ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন হোটেলে যাত্রীরা থাকার চেষ্টা করলে সেখানেও গুণতে হয় অতিরিক্ত তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া।

মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যুক্ত হয় ইন্টারনেট সংযোগ না থাকা। এর ফলে অনেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানোর পরে যোগ দিতে যাওয়া কর্মস্থলের সহকর্মীদের সঙ্গেও।

২২ ও ২৩ জুলাইও বিমানবন্দরে দেখা যায় যাত্রীদের অপেক্ষার প্রহর গুণতে। তবে এ দুই দিন কোন ফ্লাইট বাতিলের অভিযোগ পাওয়া না গেলেও বিলম্বের অভিযোগ জানা গেছে একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে।

বিমানবন্দরের দুই নং টার্মিনালে ওমান থেকে দেশে আসা শাহজাদ ইসলাম নামে একজন তরুণের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, কুমিল্লার হোমনায় যাব আমি। কিন্তু বাইরের পরিস্থিতি কি সেটা তো আসলে জানতে পারছি না। আর তাই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিমানবন্দরে থাকাটাই নিরাপদ মনে হওয়ায় এখানে বসে আছি। আগামীকাল বুধবার (২৪ জুলাই) শুনেছি গাড়ি চলাচল করবে। তখন বাড়ি যাব।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ বলেন, কিছু সমস্যা ছিল তবে সেগুলো কমে আসছে। এখন অনেকেই নির্ধারিত ফ্লাইট সময়সূচীর আগেই বিমানবন্দরে পৌঁছাচ্ছেন। হয়তোবা অনেকে ভাবছেন রাস্তায় অসুবিধা হতে পারে আর তাই চলে আসছেন। কিন্তু যেহেতু এখন তেমন ফ্লাইট শিডিউলে বিলম্ব হচ্ছে না তাই আশা করছি সবাই নির্ধারিত সময়েই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/এসবি/এনইউ

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন