বিজ্ঞাপন

ডলারের দাম বৃদ্ধির খেসারত দিচ্ছে জলযান সংগ্রহ প্রকল্প

July 26, 2024 | 8:19 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ডলারের মূল্য বৃদ্ধির খেসারত দিচ্ছে জলযান সংগ্রহ প্রকল্প। সেই সঙ্গে সময়মতো বাস্তবায়ন কাজ শুরু না হওয়ায় হচ্ছে সরকারি অর্থের অপচয়ও। এ সব কারণে ‘মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের শুরু থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত এটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মোট ৫৮৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি ৭২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তাবটি নিয়ে গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।

এ প্রসঙ্গে ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূল প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে বিলম্ব হওয়ায় এ পর্যায়ে এসে অতিরিক্ত সরকারি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। যদি প্রকল্পটি যথাসময়ে শুরু করা হতো তাহলে সরকারী অর্থের অপচয় কিছুটা হলেও রোধ করা যেত।’

সূত্র জানায়, পিইসি সভায় ভৌত অবকাঠামো বিভাগের রেল পরিবহন উইংয়ের যুগ্ম প্রধান জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নাধীন মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ মূল প্রকল্পটির ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনে বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর এটি একনেকে অনুমোদন পায়।

বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ দুই বছর অর্থাৎ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে কিছু অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে মোট ৯৩৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পের অধীনে একটি পাইলট মাদার ভেসেল সংগ্রহের জন্য ২০২২ সালের ১৫ জুন দুইটি ট্যাগ বোট সংগ্রহের জন্য ২০২২ সালের ৯ মার্চ, একটি সার্ভে অ্যান্ড রেসকিউ ভেসেল সংহের জন্য ২০২২ সালের ১ আগস্ট এবং একটি বয়া লেইং ভেসেল সংগ্রহের জন্য ২০২২ সালের ২৯ মার্চ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তি অনুযায়ী জলযান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ডলারের বিল পরিশোধ করতে হবে। চুক্তিকালীন ডলার প্রতি মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে। বর্তমানে ডলারের সঙ্গে বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিল পরিশোধে অতিরিক্ত সরকারি অর্থেও প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিটি আইটেমের বিপরীতে সিডি-ভ্যাট ও অন্যান্য ট্যাক্স ও চার্জসহ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের শুরু থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি মোট ৫৮৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি ৭২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।’

সভায় বলা হয়, প্রস্তাবিত আরডিপিপিতে এলসি চার্জ বাবদ ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক সভায় বলেন, ‘অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) এলসি চার্জ বাবদ এক কোটি ৫০ টাকার সংস্থান রয়েছে। ডিপিপিতে অন্তভুক্ত জলযান গুলোর আমদানী এলসির জন্য ব্যাংক চার্জ বাবদ ৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে ডিপিপিতে সংস্থান করা অর্থ হতে ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হবেনা তাই এই অঙ্গে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।’

সভায় আরও বলা হয়— প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত মেয়াদ বৃদ্ধির যৌক্তিকতা জানতে চাইলে সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। সহায়ক জলযানের ড্রইং, ডিজাইন এবং দরপত্র দলিল প্রণয়নের জন্য কন্সালটেন্ট নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি ইওআই (এন এক্সপারসন অব ইন্টারেস্ট ) মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়ন শেষে মূল্যায়ন কমিটির কাছে পাওয়া তিনটি প্রস্তাবই নন-রেস্পন্সিভ হিসাবে প্রতীয়মান হওয়ায় মূল্যায়ন কমিটি কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্ত করার পরিবর্তে পরামর্শক নিয়োগের জন্য পুনরায় ইওআই আহ্বানের সুপারিশ করে। ডিপিপিতে টিওআরের জন্য ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা শর্ত থাকায় প্রথম প্রকাশিত ইওআই এ দাখিল করা অনেক প্রতিষ্ঠানই বাদ পড়ে যায়। ফলে টেন্ডার প্রতিদ্বন্দ্বিতা আনার জন্য অধিক সংখ্যাক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করার সুযোগ সৃষ্টির জন্য টিওআর এর শর্তে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন করে শিথিল করে পুনরায় ইওআই আহ্বান করা হয়।’

বিজ্ঞাপন

২০২১ সালের ২৪ মে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এতে প্রায় এক বছর ৬ মাস সময় অতিবাহিত হয়। ফলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দীর্ঘ সময় পার হওয়ার জলযান সংগ্রহওে মূল দরপত্র আহ্বানে বিলম্বিত হয়।

তিনি আরও জানান, এরমধ্যে টাগ বোট সংগ্রহের কাজ ৯৮ শতাংশ, বয়া লেইং ভেসেল সংগ্রহের কাজ ৬৫ শতাংশ, সার্স অ্যান্ড রেসকিউ ভেসেল সংগ্রহের কাজ ৫০ শতাংশ, পাইলট মাদার ভেসেল সংগ্রহের কাজ ৬৩ শতাংশ এবং সার্ভে অ্যান্ড রিসার্স ভেসেল সংগ্রহের কাজ ৬৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ জন্য প্রকল্পের সার্বিক কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে শেষ করার স্বার্থে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ১২ মাস অর্থাৎ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

সারাবাংলা/জেজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন