বিজ্ঞাপন

কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বললেন ‘মায়ের কোল খালি হোক চাই না’

July 27, 2024 | 1:35 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটর) চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে গিয়ে আবেগ-আক্রান্ত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি হাসপাতালটিতে রোগী ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

কোটা আন্দোলন ঘিরে সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের পাশে থাকতে যা যা প্রয়োজন সবকিছু ব্যবস্থা করতে আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিক্রিয়া জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে সময় বাঁচিয়ে মেট্রোরেলে যেতে পারত। ছাত্র, চাকরিজীবী, সাধারণ মানুষ সবাই তো যেতে পারত। সেই স্টেশন পুড়িয়ে এখন মানুষের কষ্ট, ট্রাফিক জ্যাম। আমি তো মানুষের কষ্ট লাঘব করেছছি। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে আবার মানুষের কষ্টে ফেলে দিলো। তাদের বিচার এদেশের মানুষকে করতে হবে। আমি শুধু মানুষের সহযোগিতা চাই।’

এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো মায়ের কোল খালি হোক আমি তো চাই না। কারণ আমি বাবা-মা সব হারিয়েছি, আমি তো জানি হারাবার কত ব্যথা-কষ্ট। সেই কষ্ট তো বুকে নিয়েই দেশের মানুষের জন্য ফিরে এসেছি। আমার তো কোনো চাওয়া পাওয়া নেই।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো ছেলে-মেয়ের জন্য কিছু করিনি। শুধু তাদের লেখাপড়া ছাড়া। নিজে চাকরি করেছি। যা কিছু করার আমি দেশের মানুষের জন্য করেছি। আজকে মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। যে প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা দেয় সেই প্রতিষ্ঠানে আঘাত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আঘাত, হল ভেঙে দেওয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘সব থেকে দুর্ভাগ্য হলো ভিসির বাড়িতে আগুন দেওয়া। এর আগেও আগুন দিয়েছে। রংপুরে আগুন, রাজশাহীতে আগুন।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ছিল। আমি আসার পর সেশনজট নেই। লেখাপড়ার মান উন্নত করেছি। যেন লেখাপড়া শিখে আমাদের ছেলেরা বিদেশেও যেতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এতগুলো মানুষের ক্ষতি, এত পরিবার ধ্বংস হলো। এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে? এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ যেন দেশে না হয়। সবার সহযোগিতা চাই। আমি চাই না মায়ের কোল খালি হোক। এভাবে অসহায় হয়ে পড়ুক।’

জাতীয় অর্থোপেডিক ও ‍পুনর্বাসন হাসপাতালের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই হাসপাতালের কথা… কত সুন্দরভাবে সব করে দিয়েছি। একটা লিফটও ছিল না, আমি যখন সরকারে আসি। এই হাসপাতাল আমার বাবা করে দিয়েছিলেন। আমি এসে উন্নত করেছি। হাসপাতাল উন্নত করেছি বলেই তো এতগুলো মানুষের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে এ সময় বলেন, ‘আমার অপরাধ কী? মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। করোনার সময়ে যে কোভিড হাসপাতাল সেবা দিয়েছে, সেই হাসপাতালেও আগুন দিয়েছি। এটা কী ধরনের খেলা। যাক আমি আর কিছু বলতে পারি না। এগুলো একেকদিন দেখি, আর…।’ এই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্য শেষ করেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসিএইচ) হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন আহতদের খোঁজখবর নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহতদের যথাযথ চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে সেখানে বলেন, ‘দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে যেন কেউ আর দেশবাসীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতাকারী অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত যাতে দেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত সপ্তাহে সারা দেশে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিটিভিসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি-সেনাবাহিনী নামানো হয়।

গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) দিবাগত রাত ১২টা থেকে রোববার (২১ জুলাই) সকাল ১০টা পর্যন্ত সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। যদিও প্রতিদিন এর মাঝে কয়েক ঘণ্টা করে শিথিল করা হয়। পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাওয়ায় ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হচ্ছে।

সারাবাংলা/একে

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন